করোনা কালীন সময়ে রাজশাহী নগরীর শতকরা ৯০ শতাংশ চা বিক্রেতার আয় কমেছে। আর বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৪০ শতাংশ চা স্টল। আর এভাবে চললে বেকারত্বের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। সম্প্রতি রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় পরিচালিত এক জরিপে এই তথ্য পাওয়া গেছে। তবে চা বিক্রেতারা আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছেন।
বেসরকারী সংস্থা রুরাল এ- আরবান ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (রুডো) ও লেডিস অর্গানাইজেশন ফর সোসাল ওয়েলফেয়ার (লফস) আমরাই পারি প্রকল্পের আওতায় ২৫০টি চা স্টলের উপর এই জরিপ পরিচালনা করে। রুডো ও লফস এর সেচ্ছাসেবী কর্মীরা সরাসরি ২৫০টি চা স্টল জরিপ করেন এবং প্রায় ৫০০ চা স্টলের মালিক-কর্মচারিদের সাথে মৌখিকভাবে আলাপের মাধ্যমে তথ্য গ্রহন করেন। জরিপ পরিচালনা করেন রুরাল এ- আরবান ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (রুডো) এর তামান্না ইসলাম ও লফস এর টুম্পা পাল। জরিপ শেষে তারা বলছেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ২০০০ মতো ছোট-বড় ও ভ্রাম্যমান চা ষ্টল রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে করোনার প্রভাবে মহানগরীর প্রায় ৪০ শতাংশ চা স্টল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে আস্তে আস্তে এগুলো চালু হচ্ছে। বর্তমানে যারা ব্যবসা করছেন তারা প্রত্যেকেই ব্যবসা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। করোনা কালীন সময়ে প্রায় সকলের একমত তাদের ব্যবসা অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে।
মহানগরীর লক্ষীপুর মোড়ের চা বিক্রেতা আমিরুল ইসলাম সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে বলেন, আমি করোনার আগে ভোর ৬টায় দোকান খুলতাম, এখন লোকজন নাই তাই দেরী করে খুলি। করোনার প্রথম কয়দিন একেবারে বন্ধ থাকলেও সংসারের প্রয়োজনে দোকান খুলতে বাধ্য হয়েছি।
নগরীর ডিঙ্গাডেবা এলাকার সুমন বলেন, করোনার কারণে স্কুল কলেজ বন্ধ সন্ধ্যার পর লোকজন একেবারে কম তাই রোজগার খুব খারাপ। খুব কষ্টে আছি ভাই। পারলে আমাদের জন্য কিছু করেন।
রেলগেট বিন্দুর মোড় এলাকার রমজান আলী বলেন, বাজারে লোকসমাগম বাড়লেও মানুষের মনে একটা আতঙ্ক কাজ করছে তাই আগের মতো ব্যবসা নাই। আগে প্রতিদিন ৫০০/৭০০ টাকা আয় হতো যা এখন ২০০/৩০০ টাকা আয় করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সাহেব বাজারের আলোচিত চায়ের দোকান সঞ্জয় কুমার বলেন, আমার প্রত্যেক দিনের আয় প্রায় ১৫০০/২০০০ হাজার টাকা কিন্তু বর্তমান কারণে হিসাব মিলাতে পারছিনা। এমনি পরিস্থিতি আসলে প্রায় সকলের।
ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা করিম বলেন, আমি আগে প্রত্যেক দিন ২০০/২৫০ টাকা আয় করতাম এখন ৫০/১০০ টাকাও কোন কোন দিন হচ্ছে না।
জরিপ পরিচালনা কারী সংস্থা রুডো’র পরিচালক মো. সোহাগ আলী বলেন, এই জপির পরিচালনা করতে গিয়ে আমার অভিজ্ঞতা অর্জন হলো। শিক্ষানগরী হওয়ায় সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বর্তমানে চা বিক্রেতাসহ সকল ব্যবসায় একটা ধস নেমেছে। শতকরা ৪০ শতাংশ চা স্টল বন্ধ হওয়া একটা আশংকার ব্যাপার। এভাবে চললে বেকার সংখ্যা বাড়বে আর এর ফলে অপরাধ বাড়তে থাকবে।
লফস এর নির্বাহী পরিচালক শাহানাজ পারভীন বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী আজ জনজীবনকে আতঙ্কিত ও দূর্বিসহ করে ফেলেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন জীবিকা পরিচালনা করা খুবই কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে। সরকার নানা রকম সুবিধা প্রণয়নের মাধ্যমে এই সংকট থেকে উদ্ধারের প্রচেষ্টা অব্যহত রেখেছে কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় যা অপ্রতুল। রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার চা বিক্রেতারা নিঃসন্দেহে নিম্ন আয়ের মানুষ, যাদের পরিবারের জীবন জীবিকা এই ব্যবসার উপর নির্ভরশীল। তাই সরকারীভাবে তাদের জন্য কোন সুযোগ তৈরী করা যায় কি না তা ভাবা প্রয়োজন।