কন্যা শিশুটির নাম স্নেহা। বয়ষ মাত্র পাঁচ বছর। মানুষিক বিকার গ্রস্থ বাবার কর্মকাণ্ডে মৃত্যু ঝুকিতে পড়তে হয়েছে শিশুটিকে। মুত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে সৃষ্টিকর্তার অসিম কৃপায়। কন্যার প্রতি ভালবাসার কমতি নেই বাবার। তারপরও বাবার কাছে যেতে চাচ্ছেনা কন্যা। বাবার আচরণে স্নেহা আতংকিত। শেষ পর্যন্ত পুলিশের মানবিক ভূমিকায় আপন ঠিকানায় পৌছেছে স্নেহা। ২৪ ঘন্টার মাথায় সোমবার রাতে তার আত্ত্বীয় স্বজনের কাছে পিতা ও কন্যা কে তুলে দেয় লালপুর থানা পুলিশ।
লালপুর থানা সূত্রে জানাযায়, নওগাঁ জেলার মহদেবপুর উপজেলার সফাপুর গ্রামের মৃত জামিনি মজুমদারের ছেলে সুজিৎ মজুমদার। পেশা কৃষি। এক কন্যাসন্তান রেখে মারা যান প্রথম স্ত্রী। এরপর তিনি বিয়ে করেন নুপুর রানী কে। এর মধ্যে তাদের সংসারে জন্মলাভ করে কন্যা স্নেহা ও একপুত্র সন্তান। এর মাঝে অনেক কষ্ট শয্য করতে হয়েছে স্ত্রী নুপুর রানী কে। নিশাগ্রস্থ স্বামীর শারিরিক আর মানষিক নির্যাতন। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই চলে আসে এমন নির্যাতন। শেষ পর্যন্ত স্বামীর নির্যাতনে বাড়ী ছাড়েন নুপুর।
এরই মধ্যে মানসিক বিকার গ্রস্থ সুজিত মজুমদার জমি বিক্রি করে কিছু টাকা ব্যাংকে রাখেন আগের পক্ষের বড় মেয়ের জন্য। কিছু টাকা দিয়ে মানুষের দেনা শোধ করেন। সুজিতের আচরণের কারণে নিজের ভাইসহ পরিবারের লোকজনের সাথে বনিবনা না হওয়ায় সে পরিবারের ৫/৬ জনের নামে মহদেবপুর থানায় একটি অভিযোগ দিয়ে সকলের অজান্তে গত শুক্রবার সে স্নেহাকে নিয়ে বাড়ী থেকে পালায়। পৌছে ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে। শনিবার সেখানে দেখা হয় এক আত্ত্বীয়ের সাথে। সেখান থেকে সেই আত্তীয় তাকে বুঝিয়ে বাড়ী ফেরার জন্য ট্রেনে তুলে দেন।
ট্রেনে বাড়ী ফেরার পথে তার আচরণের কারণে তাকে সন্দেহ করায় ঈশ্বরদী স্টেশনে ট্রেন পৌছতেই সে তার কন্যা স্নেহাকে নিয়ে ট্রেন থেকে লাফ দেয়। এতে স্নেহা মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়। সেখানে স্থানীয় লোক জন তাকে মারধর করে রাজশাহীর বাঘাগামী একটি সিএনজিতে তুলে দেয়। ঈশ্বরদী থেকে আসার পথে সে তার কন্যাকে নিয়ে সিএনজি লাফ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় স্থানীয়রা উদ্ধার করে সিএনজিতে তুলে দেন। একপর্যায়ে আরামবাড়ীয়া নামক স্থানে পৌছলে সে আবার লাফ দিয়ে পালানো চেষ্ঠা করে। স্থানীর লোকজন তাকে ধরে হাত-পা বেঁধে তাকে আবার সিএনজিতে তুলে দেয়। রোববার রাত ৯ টার দিকে সিএনজি চালক তাদের লালপুর থানায় নিয়ে আসেন। মানসিক বিকারগ্রস্থ বাবার আচরণে স্নেহা আতংকিত। মেয়েকে বাবা কাছে ডাকলেও সে তার বাবার কাছে যেতে চাইনা। সে দৌড় দিয়ে সিএনজি চালকের কোলে উঠে।
লালপুর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মো: সেলিম রেজা ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ফজলুর রহমান সুজিতের সাথে কথা বলে ঘটনা জানার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তার ডাক চিৎকার ও আচরণে কোন কিছু জানার উপায় ছিলোনা। পুলিশের ভালবাসা ও মানবিক ভূমিকায় স্নেহা কথা বলা শুরু করে। এই করোনা কালেও লালপুর থানা পুলিশ তাদের পাশে গিয়ে কথা বলতে পিছপা হয়নি। স্নেহ ভালবাসা দিয়ে স্নেহার কাছ থেকে আসল ঘটনা উদঘাটনের চেষ্টা করেছেন। এ কাজে পুলিশের সাথে একজন ডাক্তার ও দুই সাংবাদিক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। শেষ পর্যন্ত স্নেহার কাছ থেকে জানাযায়, তাদের বাড়ী নওগাঁ জেলার মহদেবপুর উপজেলার সফাপুর গ্রামে। তার বাবার নাম সুজিৎ মজুমদার। পেশা কৃষি। এক কন্যাসন্তান রেখে মারা যান প্রথম স্ত্রী। এরপর তিনি বিয়ে করেন নুপুর রানী কে। এর মধ্যে তাদের সংসারে জন্মলাভ করে কন্যা স্নেহা ও একপুত্র সন্তান। এর মাঝে অনেক কষ্ট শয্য করতে হয়েছে স্ত্রী নুপুর কে। মানসিক বিকার গ্রস্থ স্বামীর শারিরিক আর মানষিক নির্যাতন। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই চলে আসে এমন নির্যাতন। শেষ পর্যন্ত স্বামীর নির্যাতনে বাড়ী ছাড়েন নুপুর।
পুলিশ স্নেহার কাছে থেকে ফোন নম্বর সংগ্রহ করে নওগাঁ জেলার মহদেবপুর উপজেলার সফাপুর গ্রামের আত্ত্বীয়স্বজনদের বিষয়টি জানায়। এবং তাদের রাতেই থানায় এসে স্নেহা ও তার বাবাকে নিয়ে যেতে বলা হয়। এর মধ্যে তাদের খাওয়ানো হয়। কিন্তু সারারাত অপেক্ষা করেও কোন লাভ হয়নি। সুজিতের সাথে পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কের অবনতি থাকায় কেউ তাদের নিতে আসেনি। সারা রাত মানসিক বিকার গ্রস্থ সুজিত আবোল তাবোল বকতে থাকে আর ডাক চিৎকার করতে থাকে। এদিকে একপর্যায়ে ক্লান্ত শিশু স্নেহা ঘুমিয়ে পড়ে। চলতে থাকে রাত ব্যাপী সুজিতের চিৎকার। আবার সকাল থেকে শুরু হয় পুলিশের তৎপরতা। বিভিন্ন ভাবে মোবাইলের মাধ্যমে তাদেও বুঝিয়ে থানায় আসতে বলা হয়। এদিকে ডিউটি কর্মকর্তা এস.আই আমেনা শিশুটির যতেœ বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। অপেক্ষার একপর্যায়ে শেষ পর্যন্ত সোমবার রাতে সুজিতের ভাই সহ ৩জন একটি মাইক্রোবাস যোগে লালপুর থানায় আসেন। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে সুজিত ও তার কন্যা স্নেহাকে তাদের তুলে দেয়া হয়। যাবার সময় সুজিত ও তার কন্যা স্নেহা পরিবারের লোকদের পেয়ে মুসকি হাসি দেয়।
তবে করোনার এই বৈশ্বিক মহাদুর্যোগে দেশের মানুষ ঢাকাসহ দূরদুরান্ত থেকে ফেরা মানুষদের সংস্পর্শে কেউ সহজে যেতে চাই না। কিন্তু লালুপর থানা পুলিশ মানবিক গুণাবলী ও আদর ভালবাসা দিয়ে স্নেহাকে তুলে দিলেন তার আপন মানুষদের হাতে। পুলিশের এমন ভূমিকায় স্নেহার কাকা ফটিক চন্দ্র মজুমদার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
লালপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ফজলুর রহমান জানান, সুজিত ও তার কন্যাকে একা ছেড়ে দেয়া হয়নি। কারণ সুজিত ও তার কন্যার জীবনে কোন দূর্ঘটানা ঘটাতে পারে এই আশংকায়। রোববার রাত থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত লালপুর থানা হেফজতে রেখে মানসিক বিকার গ্রস্থ পিতা সুজিত ও কন্যা স্নেহাকে রাত ৯ টার দিকে তাদের স্বজনদের তুলে দেয়া হয়েছে।
এব্যাপারে লালপুর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মো: সেলিম রেজা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মানবিক কারণে শিশুটিও তার বাবার জন্য আমাদের অনেক কিছুই করতে হয়েছে। তারপরও শিশুটিকে তার পরিবারের লোকদের নিকট হস্তান্তর করতে পারায় অনেক ভাল লাগছে।