যে দিকে চোখ যায় বিল আর বিল একসময় যেগুলো কচুরিপনা, দুলালী বণ শ্যাওলা ফ্যানা ঘাসসহ অনেক জলজ উদ্ভিদে ঠাসা থাকত। সবজি¦ উৎপাদনে এসব উদ্ভিদকেই কাজে লাগালেন পল্লী চাষীরা রাসনিক সারের পরিবর্তে। পিরোজপুরের স্বরুপকাঠি, নাজিরপুরে বর্ষার পানিতে কচুরিপানায় ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি¦ চাষে বেশ লাভবান হচ্ছেন পল্লী কৃষকরা। বর্ষাকালে এলাকার নিচু জমিসহ ডোবা-নালায় জমে থাকা পানিতে ভাসমান ধাপ পদ্ধতিতে এ চাষাবাদ শুরু হয় প্রায় ৫ যুগ ধরে। বর্ষার ভরা মৌসুমে যখন শাক-সবজি¦ প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রতুল তখন এ ধাপ চাষাবাদে কৃষক পরিবারগুলো নিজেদের চাহিদা পূরণসহ উৎপাদিত সবজি¦ বাজারজাত করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চাষী ও স্থানীয়রা। বঙ্গোপসাগরের শাখা বলেশ্বর, কচা, সন্ধ্যা, কালীগঙ্গা ও বেলুয়া নদীর অববাহিকার ভাটি অঞ্চল খ্যাত পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া,স্বরুপকাঠি ও নাজিরপুরের অধিকাংশ এলাকা বর্ষাকালে পানিতে তলিয়ে থাকায় এসব নিম্ম অঞ্চলগুলোর প্লাবনভ’মিতে মৌসুমী ফলমূল, শাক-সবজি¦ ধাপ পদ্ধতিতে চাষাবাদে ভাল হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ। তবে কৃষি কর্মকর্তা জানান, এ পদ্ধতির চাষাবাদে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করায় বিষমুক্ত উৎপাদিত সবজি¦ ও ফলমুল স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক খাদ্য বলে দাবি তাদের। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে ও সরকারের সহজ স্বর্থে ক্ষুদ্রঋণে সহায়তায় স্বরুপকাঠি ও নাজিরপুর উপজেলায় ৬৮ হেক্টর জমির ভাসমান পানিতে ৮৭টি ছোট-বড় কচুরিপানায় ভাসমান ধাপ পদ্ধতিতে সবজি ও ফলমুল ভাসমান বাগানে প্রায় ১৭ হাজার নারী-পুরুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অর্থ উপর্জণের পথ খুজে পেয়েছেন। ১৯৭৯ সালে পরিমল মন্ডল নামের এক নিম্ম আয়ের কৃষিক প্রথমে অর্ধশতাংশ জমির ভাসমান পানির উপর সৈউলা পাতা স্তুপকে পচনশীল পদ্ধতির ঝাপবেধে এ চাষ শুরু করেন। এরপর থেকে এ চাষে জমি মহিষ-গরু লাঙল ব্যবহার ছাড়াই পানির উপর কচুরিপানায় ধাপ পদ্ধতিতে ভাসমান ক্ষেতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করেই কম খরচে বিষমুক্ত সবজি¦ চাষে জুকছে চাষীরা। সরকারের ক্ষুদ্রঋণের সহযোগীতায় আর সীমিত খরচে অধিক লাভের প্রত্যাশায়ে উৎসাহিত হয়ে বিস্তৃণ এলাকা জুড়ে প্রতিনিয়াত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ পদ্ধতির চাষ। কৃষকরা জানায়, বর্ষার পানিতে জমে থাকা কচুরিপানা বাঁশ ও সুতা বা গুনা দিয়ে বেধে সবজি¦ উৎপাদনের ধাপ তৈরি করা হয়। বন্নার পানির তোড়ে ধাপগুলো যাতে ভেসে যেতে না পারে,সেই জন্য পানির ওপর ভাসমান কচুরিপানার জমির ধাপগুলোর চারপাশে দেওয়া হয় চিকুন জালের বেষ্টনী। তবে ক্ষেত প্রস্তুতিকারী কৃষক পরিমল মন্ডল বলেন, পৌষ-মাঘ এ দুই মাস নদী-নালা, খাল-বিল থেকে স্তুপকরা কচুরিপানার সাথে গরুর গো-সার ও পলি মাটি মিলিয়ে চাষযোগ্য জমি তৈরি করে ফালগুন মাসে সবজি¦ ও ফল-মুলের চারা রোপন করা হয়। এসব জমিতে কিছু-কিছু সবজি¦ বৈশাখ মাসেই বাজারজাত করার উপযোগী হয়ে উঠে। তবে জৈষ্ঠ,আষাড়, শ্রাবন ও ভাদ্র এ ৪ মাস এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফসল বর্ষা মৌসুমে সবজি¦র আকালের সময় চাষীরা নিজেদের ও স্থানীয় চাহিদ পুরণের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও এখানকার এ ধাপ পদ্ধতির সবজি¦ অধিক মূল্যে বাজারজাত করেন। সরকারের ক্ষুদ্রঋণে সহায়তায় ও স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে কম খরচে ভাসমান সবজি¦র ভাল ফলনে বেশ লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। সবজি¦ নতুন মৌসুম না আসা পর্যন্ত পরে ওই ধাপগুলোর ওপর মাটি দিয়ে তৈরি করা হয় সবজি¦ বা ফল-মুল বুনানোর জমি।