বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পেতে উঠেপড়ে লেগেছে প্রভাবশালীরা। তাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের নেতা, সাবেক এমপি ও ব্যবসায়ীই বেশি। এমনিতেই অনেক আগেই দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। তার মধ্যে অনুমোদন নিয়েও নানা সঙ্কটে কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয় চালু করতে পারছে না। তাছাড়া নানা অনিয়মে বন্ধের উপক্রমও হয়েছে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। তারপরও নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেতে প্রভাবশালীদের দৌড়ঝাঁপও কমছে না। এখন পর্যন্ত নতুনভাবে অনুমোদনের জন্য ১০৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন পড়েছে। তার মধ্যে অন্তত ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা অনুমোদনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছে। তবে কেউ কেউ দীর্ঘদিন ধরে আবেদন জমা দেয়ার পরও অনুমোদন না পাওয়ায় আশা ছেড়ে দিয়েছে। তারপরও প্রতিদিনই নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রক্রিয়া জানতে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আর আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কম নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে ১০৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে ৯৬টি চালু রয়েছে। আর অনুমোদন নেয়ার পর নানা জটিলতায় ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়নি। তার মধ্যে ঢাকাতেই ৬২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তাছাড়া রাজধানীসহ অন্যান্য মহানগরীর অলিগলিতেও জেলা পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখন এতোগুলো বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় আইন না মানলেও ওসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, দেশের যেসব জায়গায় ইতিমধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে সেসব স্থানেও নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আবেদনপত্র জমা রয়েছে। তার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পেয়েছে এমন উদ্যোক্তারাও নতুন করে ভিন্ন জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে। বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০-এর অধীনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হয়। অনুমোদনের জন্য উদ্যোক্তাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন জমা দিতে হয়। আবেদনের ভিত্তিতে ইউজিসি পরিদর্শন রিপোর্ট জমা দিলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
সূত্র আরো জানায়, ঢাকায় অবস্থিত রয়েল ইউনিভার্সিটির মালিক সাবেক সংসদ সদস্য ডা. এইচ বি এম ইকবাল কিশোরগঞ্জে আরো একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আবেদন করেছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের স্ত্রী ফৌজিয়া আলমও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবেদন করেছেন। তাছাড়া জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ ময়মনসিংহে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে চান। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ পটুয়াখালিতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আবেদন করেছেন। সাবেক এমপি এবং জাতীয় পার্টির নেতা এইচ এম গোলাম রেজা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আবেদন করেছেন এবং আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শামসুল আলম ভুঁইয়া চাঁদপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চেয়ে আবেদন করেছেন। উত্তরা ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াসমিন আরা লেখা বগুড়ায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আবেদন করেছেন। আহমদ আল কাবির নামে একজন উদ্যোক্তাও একই কারণে আবেদন করেছেন। বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি মুন্সীগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে চান। তাছাড়া ব্যবসায়ী মোস্তফা আজাদ চৌধুরী রংপুরে, আবু নোমান হাওলাদার নামে এক ব্যক্তি ঢাকায়, রংপুরের আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল আলম আল আমিন রংপুরে, আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামে, চট্টগ্রাম বৌদ্ধ সংঘ চট্টগ্রামে, অ্যাডভোকেট আরমান আলী রাজশাহীতে এবং চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি চট্টগ্রামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আবেদন করেছেন। ইতিমধ্যে ওসব বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন শেষে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ইউজিসির পরিচালক ফখরুল ইসলাম জানান, উদ্যোক্তাদের আবেদন পাওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরবর্তী প্রক্রিয়া মন্ত্রণালয় সম্পন্ন করে। আবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে আবেদন করা ১৭টি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে সেখান থেকে ইতিমধ্যে ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে। ২০১৬ সালের আবেদন জমা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ২২টি প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সরেজমিন প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা রয়েছে।