সড়কপথের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলেও দক্ষিণাঞ্চলে ফেরি পারাপারে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমেনি। সড়ক ও জনপথ বিভাগের ২০টি ফেরির সবগুলোই দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ। মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম নেছারাবাদের(স্বরুপকাঠি) সন্ধ্যা নদীতে নতুন ফেরি দিলেও ১৯টি ফেরির বেহাল অবস্থায়। লক্কর-ঝক্কর এসব ফেরিগুলোতে প্রতিনিয়াত দুর্ঘটনায় কবলিত হচ্ছে যাত্রীরা। ২ যুগেও নতুন ইঞ্জিন না কেনায় বিকল মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জন মেরামত করে সচল রাখা হচ্ছে এসব ফেরি সার্ভিস। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ফেরির ইঞ্জিনের মেয়াদ কোনোটার এক দশক আবার অনেকটার দেড় যুগ পার হলেও নতুন ফেরির সন্ধান মেলেনি ২৪ বছরেও। স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানায়,আগে কাচাঁ রাস্তায় যাতায়ত করতে হত, বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলে হাজার-হাজার কিঃমিঃ রাস্তার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় আরো কয়েকটি ঘাটে ফেরির চাহিদা থাকলেও যোগান দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট দপ্তর। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সঙ্কট নিরসনে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) জমা দেয়া হয়েছে। অচিরেই নতুন ইঞ্জিন পাওয়া যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন সওজ- এর ফেরি রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের বরিশাল সার্কেলের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী। সওজ- এর বরিশাল সার্কেলের তথ্যানুযায়ী, বরিশাল বিভাগে লক্ষ্মীপাশা,গোমা, নেহালগঞ্জ, মীরগঞ্জ, বেলতলা, ও বানারীপাড়া এ ৬টি ফেরি রয়েছে। পিরোজপুর জেলার চরখালী, বেকুটিয়া, টগড়া ফেরি, আমড়াঝুডি ও স্বরুপকাঠিতে ফেরি চলাচল করছে ৪টি ফেরি। পটুয়াখালী জেলার লেবুখালী, বগা, গলাচিপা, পায়রাকুঞ্জ ও নলুয়াবাহেরচরসহ মোট ৫টি ফেরি। বরগুনা জেলার আমতলী ও বড়ইতলীতে ২টি ফেরি চলছে। আর ঝলকাঠি জেলার ষাটপাকিয়া ও আমুয়াতে রয়েছে ২টি ফেরি। এর মধ্যে লেবুখালী, চরখালী, আমতলী ও বেকুটিয়া ব্যস্ততম ফেরিঘাট। এ ঘাটগুলো দিয়ে প্রতিনিয়ত ২৪ ঘন্টাই যানবাহন পারাপার হচ্ছে। তবে এসব ফেরি ষ্টেশনগুলোতে ৩১৫ অশ্বশক্তির ইউটি টাইপ-১টি ফেরি রয়েছে। এ ছাড়াও অন্যগুলোয় ২০০ অশ্বশক্তির ইউটি টাইপ-২টি ফেরি চলাচল করছে। ফেরি রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ইংল্যান্ডে নির্মিত ফেরির ইঞ্জিন বেশির ভাগই ১৯৭৯ থেকে ৮২ সালের মধ্যে আনা হয়েছিল। এ সাড়ে তিন দশক পার হওয়াতে ইঞ্জিনের সিলিন্ডার, পিস্টন, লার্নারে সমস্যা বেশি দেখা দিয়েছে। জানা যায় এসব ইঞ্জনে ২৫ বছর পার হলেই ইঞ্জনের অশ্বশক্তি কমে আসে। এজন্য মাঝে মধ্যে স্রােতের বিপরীতে ফেরিগুলো অশ্বশক্তি দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারে না। যার কারণে অতিরিক্ত ইঞ্জিণে চাপ পড়ায় ইঞ্জিণ সিজ হয়ে বিস্ফারণের ঘটনা ঘটে এবং ফেরি বিকল হয়ে যায়। তবে এসব ফেরিগুলির অধিকাংশ সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, গুরুত্বপর্ণ ঘাটগুলোর জন্য বাড়তি ইঞ্জিণ মেরামত রাখা হয়। নতুন পাওয়া যায় না বলে পুরানো ইঞ্জিন ১১ থেকে ১৩ লাখ টাকা খরচ করে যন্ত্রাংশ লাগিয়ে চলাচলের উপযোগী করা হলেও তা আবার দেড় থেকে ২ মাসের মধ্যেই বিকল হয়ে যায়, এছাড়াও ইজারাদাররা সময়মত ইঞ্জিনের মবিল পরির্বণ না করার কারণেও অনেক সময় ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। সিনিয়র উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শামসুল হক জানান, দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক যুগ ধরে ফেরির অবকাঠামোর জরাজীর্ণতা বর্তমানে অনেকটাই কাটিয়ে উঠছে। ৩১৫ অশ্বশক্তির ইউটি টাইপ-১ ফেরির ধারণ ক্ষমতা ১১০ টন যা মাজারি ধরণের ১২টি গাড়ি বহন করতে পারে। ইউটি টাইপ ফেরি-২ যার ২০০ অশ্বশক্তির ফেরির ধারণ ক্ষমতা ৭০ টন ফেরি ৬ টি গাড়ি বহন করার সম্ভব। বর্তমানে পাথর বা রড়বাহী প্রতিটি ট্রাকে অতিরিক্ত মালবহনে ৩৫ থেকে ৩৮ টন ওজন হওয়ায় দ্রুত ফেরিগুলো কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে।