গোয়ালন্দে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত স্থানীয় সংসদ সদস্যের পক্ষে স্থাপিত ব্যানার-ফেষ্টুন, ছেঁড়া ও ভাংচুরসহ বিভিন্ন কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি চরম উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পাল্টপাল্টি সাংবাদ সম্মেলন করা ছাড়াও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতেকরে এলাকায় সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজবাড়ী জেলার রাজনীতি কার্যত দু’টি বলয়ে বিভক্ত। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি কাজী কেরামত আলী এবং অপর গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁরই আপন ছোট ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ইরাদত আলী। দীর্ঘদিন রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ছিলেন কাজী কেরামত আলী এমপি। গত সংসদ নির্বাচনে কাজী কেরামত আলী দলীয় ঐক্যের স্বার্থে সাধারন সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করে যুগ্ন সাধারন সম্পাদক কাজী ইরাদত আলীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য থাকলেও দলের সাধারন সম্পাদকের পদ হারিয়ে কাজী কেরামত আলী সাংগঠনিক ভাবে কাজী ইরাদত আলী অনুসারীদের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এ পরিস্থিতিতে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের গুনজন চলছে। এ কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে কাজী কেরামত আলী এমপি সমর্থরা গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কাজী কেরামত আলীকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে দেখতে চাই সম্বলিত শত শত ব্যানার ফেস্টুন লাগায়। কিন্তু ওই সকল ব্যানার ফেস্টুন রাতের আঁধারে অজ্ঞত দূর্বৃত্তরা ভেঙে ফেলে। এ নিয়ে শুরু হয় চরম রাজনৈতিক উত্তেজনা।
গত বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল শেষে বেলা ১১টায় গোয়ালন্দ বাজারস্থ শহীদ মিনার চত্ত্বরে সাংবাদ সম্মেলন করে গোয়ালন্দ উপজেলা যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন। উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. ইউনুছ মোল্লার সভাপতিত্বে সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান চৌধূরী। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলীর পক্ষে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সহ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকাণ্ডখুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ এলাকায় অন্তত ৩শতাধিক ব্যানার ও ফেষ্টুন টাঙ্গায়। এতে কাজী কেরামত আলীর ছবি ছাড়াও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংযুক্ত ছিল। রাতে অজ্ঞাত দুষ্কৃতিকারীরা ওই ব্যানার ও ফেষ্টুনগুলো ভাংচুর ও কেটে ছিড়ে ফেলে। এ ঘটনায় বুধবার গোয়ালন্দ ঘাট থানায় অজ্ঞাত ১৫/২০জনকে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা ন্যাক্কার জনক এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানান।
অপর দিকে বেলা ১২টায় গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের ব্যানারে এ ঘটনায় অপপ্রচারের প্রতিবাদে পৃথক সাংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান মিয়ার সভাপতিত্বে সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) বিপ্লব কুমার ঘোষ। এ সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে নুরুজ্জামান মিয়া জানান, এ ঘটনায় আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সকল সহযোগি সংগঠন যৌথ ভাবে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করি। কিন্তু যুবলীগ- স্বেচ্ছাসেবক লীগের একাংশ পৃথক ভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে। তিনি আরো জানান, ব্যানার-ফেষ্টুন ভাঙ্গার ঘটনায় রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী ও গোয়ালন্দ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মো. নজরুল ইসলামকে দায়ী করে একটি মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা এ অপপ্রচারের নিন্দা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, ফেস্টুন ভাংচুরের ঘটনায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়েছে। অপরাধীদের চিিহ্নত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ছাড়া এলাকায় যেকোন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সতর্ক আছে।