দেশের সরকারি চিনিকলগুলো বছরের পর বছর ধরে বিপুল পরিমাণ লোকসান গুণে যাচ্ছে। ট্যারিফ কমিশনের এক সমীক্ষা অনুযায়ী প্রতি কেজি চিনি উৎপাদনে সরকারি চিনিকলগুলোর খরচ হয় ৮৮ টাকা। আর তা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। ফলে আপাতত
চিনি বিক্রি করে লাভের আশা নেই। বর্তমানে ১৫টি সরকারি চিনিকলে লোকসানের পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে লোকসানের দায় এড়াতে চিনিকলগুলো বন্ধের কথা ভাবা হচ্ছে। বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প করপোরেশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প করপোরেশন ইতিমধ্যে চিঠি পাঠিয়ে দেশের চিনিকলগুলো স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, লাভ-লোকসান ও শ্রমিক-কর্মচারীদের দেনা-পাওনার হিসাব চেয়েছে। ফলে চাকরি হারানোর দুশ্চিন্তায় পড়েছে শ্রমিক ও কর্মচারীরা। খাদ্য ও চিনি শিল্প করপোরেশন ১০ সেপ্টেম্বর এক অফিস আদেশে দেশের সব চিনিকলের ১১টি বিষয়ের হিসাব চেয়েছে এবং ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওসব তথ্য করপোরেশনে পাঠাতে বলা হয়েছে। সেজন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে চিনিকলগুলোতে অন্তত তিন মাস ধরে বেতন নেই। বিগত ২০১৫ সালের মজুরি কাঠামো অনুযায়ী মিল সংশ্লিষ্টদের বিপুল টাকা এরিয়া বিল বকেয়া পড়েছে। আর এখন মিল বন্ধের আশঙ্কা শ্রমিক-কর্মচারীদের ভাবিয়ে তুলেছে।
সূত্র জানায়, চিনিকলগুলো বন্ধের ইঙ্গিত পেয়েই সারা দেশের শ্রমিক-কর্মচারী নেতারা ঢাকায় চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে মিল বন্ধেরই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। ফলে শ্রমিক ও কর্মচারীরা দিশাহারা হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে চিনিকলগুলো চিঠিতে চাওয়া তথ্যগুলো পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে মিল বন্ধের সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি বৈঠকের কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয়, সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চিফ অব পার্সোনেল রফিকুল ইসলাম জানান, চিনিকলগুলো এখনো বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সেদিকে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। বিজেএমসির পাটকলগুলোর মতো গোল্ডেন হ্যান্ডশেকে গেলে কী পরিমাণ বাজেট প্রয়োজন হতে পারে, তা জানতেই চিনিকলগুলোর কাছে তথ্যগুলো চাওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সরকার যে কোনো সময় এসব তথ্য কর্পোরেশনের কাছে চাইতে পারে।