করোনা ও দামের তফাতের অজুহাতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার দুই খাদ্য গুদামে চলতি বছরের বোরো ধান-চাল সংগ্রহে অভিযান। গত ৩১ আগস্ট নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি উপজেলার খাদ্য বিভাগ। তবে ধান-চাল সংগ্রহে সুবিধার্থে খাদ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সময় চেয়ে আরো ১৫ দিন বাড়িয়ে ছিলেন অর্থ্যাৎ গত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু সময় বাড়িয়েও গাফলাতি ও নানা অভিযোগে কারণে সরকারি দুই খাদ্য গুদামে ধান ও চাল সংগ্রহের অর্ধেকও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি উপজেলার খাদ্য বিভাগ। মিলারদের দাবি, মৌসুমের শুরু থেকেই করোনা, শ্রমিক সংকটসহ বৈরি আবহাওয়া কারণেও চাল তৈরির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের সঙ্গে বাজারের দামের তফাৎ থাকায় ধান ও চাল সংগ্রহ হচ্ছেনা।
উপজেলার খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কালাই উপজেলার দুই খাদ্য গুদামে চলতি বোরো মৌসুমে ৩ হাজার ৮শ ৯৪ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ২ হাজার ৩শ ৮৯ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন। সেই অনুযায়ী কালাই খাদ্য গুদাম ও মোলামগাড়ী খাদ্য গুদামে চলতি বোরো মৌসুমে সরকারের সঙ্গে চুক্তি হওয়া উপজেলার মিল-চাতাল ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে প্রতি কেজি ৩৬ টাকা দরে ৩ হাজার ৮শ ৯৪ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং লটারির মাধ্যমে উপজেলার কৃষকের কাছ থেকে প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে ২ হাজার ৩শ ৮৯ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করবেন। কালাই খাদ্য গুদামে বোরো ধান-চাল সংগ্রহে অভিযান শুরু হয় গত জুন মাসে তিন তারিখে। এর মধ্যে চালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ছিল ৩হাজার ৩শ ৯৩.১৮০মেট্রিক টন। তার মধ্যে অর্জন হয়েছে ২হাজার ১শ ৯৭ মেট্রিক টন.৯৯০ কেজি এবং ৬৪%। সেই সঙ্গে ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ছিল ১হাজার ৯শ ৫৯মেট্রিক টন। তার মধ্যে অর্জন হয়েছে ৫২ মেট্রিক টন.৮৪০ কেজি এবং ২%। মোলামগাড়ী খাদ্য গুদামে বোরো ধান-চাল সংগ্রহে অভিযান শুরু হয় গত মে মাসের ৩১ তারিখে। এর মধ্যে চালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ছিল ৫শ মেট্রিক টন.৮২০ কেজি। তার মধ্যে অর্জন হয়েছে ৩শ ৫৮মেট্রিক টন.০২০ কেজি এবং ৭১.৫%। সেই সঙ্গে ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ছিল ৪শ ৩০মেট্রিক টন। তার মধ্যে অর্জন হয়েছে ২শ মেট্রিক টন.৬কেজি এবং ৪৯%। যা অর্ধেকও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি উপজেলার সরকারি দুই খাদ্য গুদামে ধান ও চাল সংগ্রহের অভিযান। সময় বাড়িয়েও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে চালের দাম বেশি হওয়ায় চাল দিতে পারেনি মিলাররা। আর বাজারে ধানের দাম বেশি পেয়ে সরকার নির্ধারিত দামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহ হারিয়েছে কৃষকরা।
কেন সরকারি খাদ্য গুদামে ধান ও চাল দেওয়া হচ্ছে না এই বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক উপজেলান কয়েক জন সরকারের সঙ্গে চুক্তি হওয়া কৃষক ও মিল-চাতাল মালিক বলেন, সরকার ২৬ টাকা কেজি দরে ধান কিনলেও বর্তমান ধানের বাজারে প্রায় ২৮ টাকা কেজি। সেই অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজি প্রতি ২ টাকা নেই। আর সিদ্ধ চালের দাম সরকার নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ৩৬ টাকা। বর্তমান চালের বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম প্রায় ৩৯ টাকা। দেড় কেজি ধান থেকে সিদ্ধ চাল উৎপাদন হয় এক কেজি। ধানের দামের তুলনায় সে ক্ষেত্রে প্রতি কেজি চালের উৎপাদনের সর্বনিম্ন খরচ হয় ৪০ টাকা। এতে করে সব মিলিয়ে তাদের অনেক লোকসান হচ্ছে বলে তারা জানান।
উপজেলার খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চাল দেওয়ার চুক্তিবদ্ধ হয়েও কেন সময় অনুযায়ী খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করা হলো না এই বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলার চালকল মালিক সমিতির সাধারণ-সম্পাদক মো. হুমায়ন কবির তালুকদার বলেন, আমরা সরকারের কাছে চুক্তিবদ্ধ করেছি সরকারি খাদ্য গুদামে চাল দেওয়ার জন্য। কিন্তু মৌসুমের শুরু থেকেই মহামারী করোনা, শ্রমিক সংকট এবং বৈরি আবহাওয়া কারণেও চাল তৈরির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তাই সময় অনুযায়ী খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করা যায়নি।
সরকার সময় বেঁধে দেওয়ার পরও অতিরিক্ত সময় দিয়েও কেন ধান-চাল লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হলো না এই বিষয়ে জানতে চাইলে কালাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা (অঃদাঃ) মোছাঃ রেবেকা সিদ্দিকা বলেন, সরকার ধান-চাল কেনার যে দাম নির্ধারণ করেছিল, বর্তমান বাজারে তার থেকে বেশি দাম থাকায় অনেক মিল-চাতাল মালিক ও কৃষকেরা সরকারকে চাল ও ধান গুদামে দেয়নি। চুক্তি করেও যারা চাল ও ধান সরবরাহ করেননি তাদের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।