প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষন কর্মসূচির আওতায় অসহায় গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্পের ঘর তৈরীতে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার কয়েকজন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসির) সভাপতির অভিযোগ,ঘর নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করার পর বিল নিতে গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে বলে অতিরিক্ত টাকা দাবি করে বিল আটকে দেন পিআইও। পরে তাদের কাছ থেকে ১৭ থেকে ১৮ হাজার নিয়ে তিনি চেক প্রদান করেন।
জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষন কর্মসূচির আওতায় গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ক্ষেতলাল উপজেলায় ৩২টি ঘরের জন্য ৯৫ লাখ ৯৫ হাজার ৫২০ টাকা বরাদ্দ আসে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে। এর মধ্যে প্রায় ৩ লাখ টাকা করে ইউপি চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ডের সদস্যদের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসির) সভাপতি করে নির্মাধীন ঘরের কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পের শতভাগ কাজ সম্পূর্ন হওয়ার পর ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ,এফ,এম, আবু সুফিয়ান ও পিআইও মোহাম্মদ রুহুল আমীন পাপন বাড়ীগুলো পরিদর্শন করে সন্তোষও প্রকাশ করেন। তবে অভিযোগ উঠেছে, শতভাগ কাজ বুঝে নেওয়ার পর কাজের ফাইনাল বিল নিতে পিআইও’র কাছে গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে বলে তিনি ওই প্রকল্পের পিআইসিদের নিকট থেকে ২৭ থেকে ২৮ হাজার টাকা দাবি করে বিল আটকে দেন। পরে সকল পিআইসির নিকট থেকে ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা নিয়ে তিনি ফাইনাল বিলের চেক প্রদান করেন। আরও অভিযোগ রয়েছে, অফিসের ফাইল খরচ বাবদ অতিরিক্ত আরও ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে পিআইওকে।
উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্রকল্পের ওয়ার্ড পিআইসি আবদুল মতিন মন্ডল যুগান্তরকে বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে গৃহহীনদের একটি ঘর নির্মানের পিআইসির দায়িত্ব পাই। সেই ঘরটি শতভাগ সম্পূর্ণ করার পর ইওএনও স্যার ও পিআইও পরিদর্শন করেন। পরে কাজের শেষ বিল নেওয়ার সময় পিআইও নিজে বলে যে ১৮ হাজার টাকা আপনাকে খরচা বাবদ দিতে হবে। না দিলে বিলের চেক প্রদান করবো না। তিনি আরও বলেন, এরকম করে কয়েকদিন ঘুরানোর পর তার চাহিদা মতো টাকা দিলে তিনি আমাকে চেক প্রদান করেন। আমরা শুনেছি আরও ইউনিয়নেও পিআইও এমন ঘুষ নিয়েছেন। এ ছাড়া সে আমার কাছ থেকে ফাইল খরচ বাবদ অতিরিক্ত ৪ হাজার টাকা নিয়েছেন।
ওই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের পিআইসি সভাপতি আওলাদুল ইসলাম বলেন, আমরা শতভাগ কাজ করেছি, কাজের কোন কমতি আমাদের নেই। কাজ শেষ হওয়ার পরে আমরা চেয়ারম্যানসহ যখন ফাইনাল বিল নিতে পিআইও’র কাছে গেলাম। তখন পিআইও বলল অফিস খরচ ২০ হাজার করে টাকা দিতে হবে। কিসের জন্য টাকা নিবেন এমনটা জানতে চাইলে পিআইও বলেন, ‘উপরে যারা আছে তাদেরকেও দিতে হয়। আপনারা বুঝবেন না।’
একই ইউনিয়নের ৪,৫,৬ ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য ও পিআইসি সভাপতি রাজিয়া বেগম বলেন, আমার কাজের মেঝেতে একটু ত্রুটি হয়েছিল। সেই মেঝে আবার পুরোটাই তুলে ফেলে নতুন করে করতে হয়েছে। আমার কাছ থেকে ১০০-১০০ কাজ করে নিয়েছে। তারপরেও আমরা যখন ফাইনাল বিল নিতে যাই তখন খরচ বাবদ পিআইও আমার কাছ থেকে টাকা চায়। প্রথমে ২৭-২৮ হাজার টাকা দাবি করে। শেষে ১৭ হাজার করে টাকা নিয়েছে।
এসব পিআইসিদের আরও অভিযোগ, তারা ক্যামেরার সামনে পিআইও’র এমন দুর্নীতির বক্তব্য দেওয়ার পর থেকে তিনি তাদের লোকজন দিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে বড়াইল ইউপি চেয়ারম্যান আবু রাসেদ আলমগীর জানান, বিল তোলার সময় ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা দেওয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে পিআইও’কে ফাইল খরচ বাবদ কিছু টাকা দিতে হয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত ক্ষেতলাল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমীন পাপন বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তাদের অন্য কোন স্বার্থ উদ্ধার হয়নি বিধায় তারা আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যে অভিযোগ করেছে।
যা লিখবেন জেনে শুনে সত্য লিখবেন।
এ ব্যাপারে ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ,এফ,এম, আবু সুফিয়ান বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।