বিপুলসংখ্যক বিদেশী নাগরিক এদেশে বছরের পর বছর অবৈধভাবে বসবাস করছে। তাদের মধ্যে শত শত বিদেশী নাগরিক নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশ এদেশে অবৈধভাবে অবস্থানকারী ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৭শ ব্যক্তির তালিকা তৈরি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, ক্রেডিটকার্ড জালিয়াতি, জঙ্গি তৎপরতা, আদম পাচার, জাল ডলার ব্যবসা, মাদক পাচারের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তালিকাভুক্ত বিদেশীদের মধ্যে নাইজিরিয়া, শ্রীলঙ্কা আফ্রিকা, ফিলিপিন্সসহ কয়েকটি দেশের নাগরিক রয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের ভেতরে ৭০০ বিদেশীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তালিকাভুক্ত বিদেশীদের যে ঠিকানা দিয়ে এসেছে ওই ঠিকানায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অবৈধভাবে অবস্থান করার কারণে তারা ফরেনার্স এ্যাক্টও ভঙ্গ করেছে। ফৌজদারি অপরাধ ছাড়াও ফরেনার্স এ্যাক্টের অধীনে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ভেতরে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশীদের খুঁজে বের করে আটক করে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ।
সূত্র জানায়, এদেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশীরা ফুটবলার, গার্মেন্ট ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও পর্যটক হিসেবে এদেশে এসেছে। কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তারা নিজ দেশে ফিরে যায়নি। এমনকি ভিসা নবায়নও করেনি। তার উপর তারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। দেশীয় অপরাধী চক্রের সদস্যরা বিদেশী নাগরিকদের অপরাধ করার সঙ্গে সহায়তা করছে। এজন্য বিদেশী নাগরিকরা অবৈধভাবে দেশে অবস্থান করে অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযান পরিচালনায় অংশ নিচ্ছে পুলিশ, র্যাব, সিআইডি, এসবি ও গোয়েন্দা সংস্থা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গত দু’মাসে এ ধরনের অপরাধী চক্রের অর্ধ শতাধিক বিদেশী নাগরিককে গ্রেফতার করেছে। ওসব অপরাধীরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রায় ১০টি দেশের সহ¯্রাধিক অপরাধী চক্রের সদস্যের তৎপরতার তালিকা তৈরি করে অভিযান পরিচালনা শুরু করা হয়েছে। তারা বাংলাদেশ বিভিন্ন স্থানে থাকলেও মূলত একই সংঘবদ্ধ একটি চক্র বলে তদন্তে পাওয়া গেছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশে অবৈধভাবে অবস্থানকারী আফ্রিকান নাগরিক যারা আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িত তারা ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে গিফট দেয়ার নামে প্রতারণামূলকভাবে নিজ নিজ দেশের সহযোগী ও ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা একটি আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র। তাদের সহযোগীরা উল্লেখিত প্রত্যেকটি দেশে অবস্থান করছে। তাছাড়া এদেশের রাজধানীতেই অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশী নাগরিক প্রতারণা, ক্রেডিটকার্ড জালিয়াতি, জঙ্গি তৎপরতা, আদম পাচার, জাল ডলার ব্যবসা, মাদক পাচারের মতো অপরাধে জড়িয়ে রয়েছে। বিদেশী ওসব অপরাধীরা ইন্টারনেটে, ফেসবুক, ইমেইল, হোয়াটএ্যাপ, ম্যাসেঞ্জারসহ নানা ধরনের পদ্ধতিতে প্রতারণার ফাঁদ পেতে থাকে। আর প্রতারণার ফাঁদে পড়ে লোভের বশীভূত হয়ে অনেকেই রিক্ত নিঃস্ব হচ্ছে। প্রতি বছরই আন্তর্জাতিক ওই অপরাধী চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির একজন কর্মকর্তা জানান, আফ্রিকান ওসব প্রতারক বায়িং হাউসের ব্যবসার নামে এবং বিভিন্ন ক্লাবে চুক্তিভিক্তিক খেলোয়াড় হিসেবে বাংলাদেশে আসে। তারপর তারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তাদের অপরাধমূলক কাজে দেশের বাইরে থেকেও অন্য বিদেশীরাও সহায়তা করছে। একইসঙ্গে দেশীয় কিছু লোক টাকার বিনিময়ে তাদের সঙ্গে কাজ করছে। ওসব প্রতারককে গ্রেফতার করে আদালতে তোলার পর তারা জামিন নিয়ে বেরিয়ে যায়। আর একবার জামিনের পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে ওই অপরাধীরা বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে না।
অন্যদিকে স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে যেসব বিদেশী বসবাস বা অবস্থান করছে তাদের মধ্যে কালো আফ্রিকান নাগরিকরাই বেশিরভাগ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আফ্রিকা অঞ্চলের কিছু মানুষ তাদের পাসপোর্ট ফেলে দিচ্ছে। এরপর তাদের অবস্থানে সহযোগিতা করছে স্থানীয় কিছু অর্থলোভী নারী-পুরুষ। শুধু তাই নয়, অপরাধেও মদদ জোগানো হচ্ছে। ধরা যদি কেউ পড়েও জামিনে বেরিয়ে ফের অপরাধে জড়াচ্ছে। বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশী অপরাধীদের শনাক্ত করার পর তালিকা তৈরি করে ফেরত পাঠানোসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে কী করণীয় তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে অবৈধভাবে বসবাস করে ৭০০ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।