অধ্যক্ষ ও এক দাতা সদস্যের মধ্যে বিরোধের জের ধরে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে আইনুল হুদা ফাজিল মাদরাসার শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এ ঘটনায় এক পক্ষ আর পক্ষের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অর্থ আত্মসাত, চাদাঁবাজী ও দুর্নীতির অভিযোগ করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ও বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল, অবকাঠামো ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পতির বিবেচনায় অত্যান্ত সম্ভাবনাময় এ মাদ্রাসাটির ভবিষ্যত সংকটে পড়ার শংকায় উদ্বিগ্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য মাদ্রাসা অধ্যক্ষ রিয়াজুল ইসলাম পার্বতীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ হাফিজুল ইসলাম প্রামানিক নিকট প্রতিকার চেয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর একটি আবেদন করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০ সালে ফসলী জমিসহ প্রায় ৪ একর সম্পতিতে পার্বতীপুর উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কালাইঘাটি গ্রামে আইনুল হুদা মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। গত কয়েক বছর পূর্বে ওই গ্রামের মৃত ইউসুফ আলীর ছেলে আফছার আলী মাদ্রাসার কার্যকরী কমিটিতে দাতা সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০১৬ সালে গঠিত কমিটিতে নির্বাচিত হতে না পেরে অধ্যক্ষের ৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনেন। এঘটনাকে পুঁজি করে ২০১৭ সালে বিক্ষুদ্ধ আফসার আলী অধ্যক্ষকে ব্লাকমেইল করে তার পার্বতীপুর শহরে নতুন বাজারে অবস্থিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ওই ঘটনার পর আফসার আলী আমার নিকট আরও ৫ লাখ টাকা দাবী করে। টাকা না দিলে মিথ্যা মামলা দিয়ে চাকুরীচ্যুত, মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ও আমাকে পথের ভিখারী বানানোর হুমকি দেয়া হয়। আমি এ বিষয়ে কোন উপায়ন্তর না দেখে গত ১৭ সেপ্টেম্বর পার্বতীপুর উপজেলা চেয়ারম্যানের নিকট এর বিচার চেয়ে আবেদন করি। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জানান, বর্তমানে মাদ্রাসায় ৬৬৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। গত ২০১৭ সালে থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিন শিক্ষা বর্ষে এ মাদ্রাসা থেকে পিইসিতে শতভাগ, জেডিসিতে গড়ে শতকরা ৯০ ভাগ, দাখিল পরীক্ষায় শতকরা ৯০ ভাগ, আলিম পরীক্ষায় শতকরা ৯০ ভাগ ও ফাজিল পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করে। এ ভালো ফলাফল করার পরও ওই প্রতিষ্টানের বিরুদ্ধে কেউ অপতপরতা চালাতে পারে। এটা বিশ্বাস করা কঠিন।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক সরদার বলেন, মাদরাসা পরিচালনাার জন্য গর্ভনিং বডি রয়েছে। কারও কোন প্রকার অভিযোগ থাকলে কমিটিতে জানাতে পারত। কমিটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারতো। আফসার আলী বর্তমান কমিটির কেউ নন। তিনি ছাড়া অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অন্য কারো নেই। অথচ ১৮ বছর পূর্বের তার মন গড়া অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাপ করে বেড়াচ্ছেন। এটি মাদ্রাসার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুইনা।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার জমিদাতা আফসার আলী বলেন, আমি এলাকার সচেতন মানুষ, কেউ মাদ্রাসার অর্থ আত্মসাৎ করবে তা আমি কখনো মেনে নিব না। আমি এর প্রতিকার চাই। অধ্যক্ষের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট।
পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ হাফিজুল ইসলাম প্রামানিক আবেদন পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বর্তমান সরকার ইসলামি শিক্ষা বান্ধব সরকার। কেউ মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধের পায়তারা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।