রাঙ্গামাটির দূর্গম নানিয়ারচর উপজেলায় চেঙ্গী নদীর উপর নির্মিত পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘতম সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আর উদ্বোধনের অপেক্ষায় হাজারো মানুষের স্বপ্নের এই সেতুটি। আর নতুন দিগন্তের সম্ভাবনাময় সেতুটি চালু হলে এর সুফল ভোগ করবে নানিয়ারচরের প্রায় ৭০ হাজারেরও অধিক বাসিন্দাসহ পার্বত্য রাঙ্গামাটি সকল জনগণ।
এছাড়াও এই সেতু চালু হলে একদিকে যেমন বাড়বে সড়ক যোগাযোগের নতুন দিগন্ত, অন্যদিকে এলাকায় বাড়বে শিক্ষা, চিকিৎসা ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন। শুধু তাই নয়, সেতুটি চালু হলে রাঙ্গামাটি, লংগদু-বাঘাইছড়ি ও সাজেক এবং খাগড়াছড়ি পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপন হবে। এতে করে এখানকার বসবাসরত মানুষের জীবন-জীবিকার অনেকাংশে পরিবর্তন হবে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিনের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর নানিয়ারচর সেতুর কাজ শুরু হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি নানিয়ারচরের এক জনসভায় এ সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। আগামী ডিসেম্বর মাসে সেতুটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
নানিয়ারচর সেতু প্রকল্প অফিস সুত্রে জানা গেছে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এ সেতুটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইসি ব্রিগেড এর ২০ ইঞ্জিনিয়ার্স কনষ্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি) ইউনিট। সেতুটির দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৫০০ মিটার এবং প্রস্থ হচ্ছে ৯.৮মিটার। এই সেতু প্রকল্পটির মোট বাজেট হচ্ছে ২২৭ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য খরচ হচ্ছে ৪৬ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। সেতুটির সাথে সংযোগ সড়ক রয়েছে ২.২ মিটার। এই সড়কের প্রস্থ হচ্ছে ৭.৯ মিটার।
এব্যাপারে নানিয়ারচর সেতুর প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর মোঃ মিজানুর রহমান ফকির বলেন, এটি হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু। এটির দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৫০০ মিটার। এই সেতুর মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাঙ্গামাটি জেলা সদরের সাথে লংগদু উপজেলাকে সংযোগ স্থাপন করা। আর এই সেতুর কাজ তিন বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু জমি অধিগ্রহণে একটি সময় লেগেছে। আশা করি ডিসেম্বরে এই সেতু উদ্বোধন করা হতে পারে। আর এই সেতুটি চালু হলে এলাকার মানুষ অনেক উপকৃত হবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী শেখ মোঃ আলমগীর কবির বলেন, আগে রাঙ্গামাটি থেকে নানিয়ারচর আসতে হত পানিপথে ইঞ্চিন বোট করে। এতে প্রচুর সময় লেগে যেতো। সব চেয়ে কষ্ট হতো কোনো রোগীকে রাঙ্গামাটি হাসপাতালে রেফার করা হলে। আর এই ব্রিজের কারণে এখন রাঙ্গামাটি থেকে নারিয়ারচর আসতে সময় লাগে মাত্র এক ঘন্টা। শুধু তাই নয়, সেতুটি’র ফলে অসুস্থ রোগীকে এখন রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন হাসপাতালে সহজেই নেয়া যাবে।
নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা বলেন, নানিয়ারচরের এই ব্রিজটি হওয়ার কারণে এলাকার জনগণ অত্যন্ত শুশি। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করি সংযোগ সেতুটি দ্রুত উদ্বোধন হবে এবং মানুষের দীর্ঘদিনের দূর্ভোগ লাঘব হবে।
নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ত্রিদীপ কান্তি দাশ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মধ্যে নানিয়ারচরের সর্বোচ্চ আনারস উৎপাদন হয়। ব্রিজটি স্থাপনের ফলে সারা দেশে আনারস সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। এতে করে লাভবান হবে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
তাই এ সেতু নির্মান হলে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির ৪টি উপজেলার সঙ্গে সমগ্র দেশের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। আর তাতে পাহাড়ের অনগ্রসর একটি অংশে এই সেতু খুলে দেবে সম্ভাবনার দুয়ার। এতে করে নানিয়ারচর, লংগদু, বাঘাইছড়িতে উৎপাদিত পণ্য সহজে বহনের মাধ্যমে বাজারজাত করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অভিজ্ঞমহল।