আল্লাহ রাব্বুল আল আমীন বান্দাদের তাগিদ দিয়ে বলেছেন, মানুষকে ভালোবাস। যার মধ্যে রয়েছে অর্ন্তনীহিত অনাবিল শান্তির আঁধার। রাসূল (সাঃ) ও সাহাবাদের উদ্দেশ্যে বার বার বলেছেন মানুষকে ভালোবাস। আকলাকুল মাকলুকাত মহান আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। যে মানুষকে ভালো বাসল না সে আল্লাহর সৃষ্টিকেই ভালোবাসল না। দুনিয়াতে যতকিছু আছে এসব কিছু মানুষের কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার বিভিন্ন কবিতা ও প্রবন্ধে লিখেছেন, এ জগতে মানুষের চেয়ে মহীয়ান আর কিছু নেই। কবি যতীন্দ্র মোহন বাগচী লিখেছেন, ভালোবাসায় ভুবন করে জয়। স¤্রাট শাহজাহানের অমর কীর্তি আগ্রার তাজমহল তার স্ত্রী আরজুমান বানু মমতাজ বেগমের ভালোবাসারই অপূর্ব ঐতিহাসিক নিদর্শন। এ ধরণের উপমা উদাহরণ ও কোরআন হাদীসে আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের নির্দেশনার যেন শেষ নেই।
পাকিস্তান আমলে ছাত্রজীবনেই মজলুম জেননেতা মওলানা ভাসানীর ন্যাপের ছাত্র রাজনীতির সাথে ১৯৬৯ সাল থেকে জড়িয়ে পড়ি। মওলানা ভাসানীর জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি জীবন ব্যবস্থাই আমার দর্শন। মওলানা ভাসানীর রাজনীতিই আমার রাজনীতির উৎস ও আদর্শ। এখনও মওলানা ভাসানীর প্রতিটি মৃত্যু বার্ষিকীতে অনেক শিষ্য, ভক্ত ও সুহৃদ রাজনৈতিক অনুসারীদের মতো ১৭ নভেম্বর টাঙ্গাইলের সন্তোষে গিয়ে উপস্থিত হই। এ পর্যন্ত কোনো হরতাল অবরোধও আমাকে নিবৃত করতে পারেনি। পথিমধ্যে ময়মনসিংহ মুক্তাগাছা, মধুপুর ও টাঙ্গাইলে রাতে থেকে সন্তোষে গিয়ে উপস্থিত হয়েছি। তখন আমার মতো এমন অসংখ্য ভাসানী অনুসারীকে পেয়েছি। মওলানা ভাসানীর রাজনীতি করতে গিয়ে পাকিস্তান আমলের ডিপিআর এ্যাক্টে (উবভবহপব ড়ভ চধশরংঃধহ ৎঁষবং) এবং বাংলাদেশ আমলেও অনেকের মতো রাজনৈতিক মামলায় জেলে গিয়েছি। প্রতিবারই তদানীন্তন কিশোরগঞ্জ মহকুমা সাব কারাগারে কয়েক দিন রেখে ময়মনসিংহ জেলা কারাগারসহ অন্যান্য কারাগারে স্থানান্তর করা হয়ে থাকে। যে দুর্বিসহ জীবনের কথা এ কলামে নাই বা বললাম। তখন ডিটেনশন আদেশ (নিবর্তনমূলক সাইন) ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পিতা, মামা ও একান্ত নিকটাত্মীয় ছাড়া অনেকের সাথেই দেখা সাক্ষাতের সুযোগ ছিল না। তারপরও অনেকেই কষ্ট করে আমাকে একনজর কারাগারে দেখতে গিয়েছে। যাদের কথা কোনদিনই আমি ভুলতে পারব না ও পারি না। “কারাগারের দিনগুলো” নিয়ে একটি বই ছাপাতে দিয়েছি তাতে অনেক কিছু রয়েছে।
কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ কারাগারে থাকার সময় যারা আমাকে দেখতে যায় তারা কোনো রাজনীতি করত না। একেবারে দিনে আনে দিন খাওয়া, সহজ সরল সাধারণ মানুষ। একবার এলাকার এমন দুজন আমাকে কারাগারে দেখতে যায়, যাদের গায়ে ছিল গেঞ্জি, পড়নে লুঙ্গি। তারা আমার জন্য দুই হালি গেরাকলা ও এক প্যাকেট বিস্কুট নিয়ে গিয়েছিল। কারাগারের গেইটে আমাকে দেখে তারা হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। তাদের কান্না দেখে আমিও কোনোমতেই অশ্রু সংবরণ করতে পারছিলাম না। সে স্মৃতি আজও আমার হৃদয়কে বিদীর্ন করে থাকে।
১৯৭০ সালে আমি কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজের শিক্ষার্থী। তখন আমি পূর্ব বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন ও পরবর্তী সময় স্বাধীনতার পর বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন কিশোরগঞ্জ মহকুমার সভাপতি, ময়মনসিংহ জেলা ছাত্র ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কার্যকরি কমিটির সদস্য ছিলাম। পরবর্তী সময় ভাসানী ন্যাপের যুব সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয় যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হোটেল ইডেনে ৭৬ সালের কাউন্সিলে বাংলাদেশ জাতীয় যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে থাকি। তখন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন বর্তমানে বিশিষ্ট কলামিষ্ট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, সাবেক মন্ত্রী নূর মোহাম্মদ খান, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব নাজমুল হক নান্নু। অপরদিকে কিশোরগঞ্জ মহকুমা ও ময়মনসিংহ জেলা ভাসানী ন্যাপের অন্যতম নেতা ছিলেন, অধ্যাপক আইয়ুব রেজা চৌধুরী, আলতাফ উদ্দিন তালুকদার, ইসহাক আখন্দ, এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহমদ, এডভোকেট আব্দুল লতিফ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
১৯৭৪ সালে আমাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে (ঝঢ়বপরধষ চড়বিৎ অপঃ- ৭৪) গ্রেফতার করে কিশোরগঞ্জ সাব কারাগারে ৬/৭ দিন রাখার পর ময়মনসিংহ জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তখনও ময়মনসিংহ কারাগারে এলাকার অনেক লোক আমাকে এক নজর দেখতে যায়। তাদের কথা ও কৃতজ্ঞতা সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করে থাকি। আমাকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তখন কিশোরগঞ্জ মহকুমা ডিআইবির কর্মকর্তা (বর্তমানে ডিএসবি) আব্দুর রৌফ এমন কিছু অবান্তর প্রশ্ন করেছিল যে বেদনা এখনও হৃদয় থেকে দূরে সরে যায়নি। সেই সময় কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম ও এস.আই হাবিবুর রহমানের মানবিকতা ও সহৃদয়তার কথা আজও ভুলতে পারি না। আর কারাগারে নেয়ার পর কিশোরগঞ্জ সাব জেলার ও ময়মনসিংহ কারাগারের হাবিলদার আলী আহমদের সহযোগিতা ও সহৃদয়তার কথা বারবার মনে পড়ে। ভোক্তভোগী ছাড়া এ ব্যাথা না বুঝারই কথা। কবির পংক্তিতে বলব, “ব্যথিত বেদন বুঝিবে সে কিশে কভু আশী বিষে দংশেনি যারে।” আমার রাজনৈতিক আরও নির্যাতনের কথা অন্য কলামে লেখার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে অন্য প্রসঙ্গে যাচ্ছি।
রাজনীতি করতে গিয়ে বিভিন্ন বিপদে আপদে যেমন অনেকেরই অপরিসীম সহযোগিতা পেয়েছি, তেমনি অনেক চাটুকার ও স্বার্থান্বেষীদের কারণে যারপর নাই নাজেহালও হয়েছি। তদোপরি চাটুকার, শয়তানের প্রেতাত্মা ও স্বার্থপরদের কথা এ কলামে বিবৃত না করলেও তাদের বেরসিক চরিত্র অন্য নিবন্ধে তুলে ধরার আশা রাখি। তবে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দৃপ্ত কন্ঠে বলতে হচ্ছে এলাকার খেটে খাওয়া কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, সাধারণ মানুষ ও আরও অনেকের কথা। যারা আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয়। এ প্রসঙ্গে কবি গোলাম মস্তোফার কামনা কবিতার পংক্তির উদ্ধৃতির সাথে যোগ করে বলব, মরণের পরপারে যে বেশে, যেই দেশে যাই, মানুষের ভালোবাসা যেন দেখিবারে পাই।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া-হোসেনপুর নির্বাচনী এলাকা হতে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সংসদ নির্বাচন ও ১৯৮৫ সালে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছি। সেই নির্বাচনে এলাকার ভোটার, নারী, পুরুষ, সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যে সহযোগিতা করেছিল তা কৃতজ্ঞতার সাথে মনে থাকবে। তাদের কাছে আমি চিরঋণি ও চিরকৃতজ্ঞ। তবে সেই নির্বাচনটি ছিল নির্দলীয়। তাই কোনো দলীয় প্রতীক ছিল না। আমার নির্বাচনী প্রতীক ছিল গোলাপ ফুল। জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন ও সহযোগিতায় তখন অনেকগুলো কেন্দ্রে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলাম। তন্মধ্যে এলাকার কোদালিয়া হাইস্কুল কেন্দ্র, ঠুটারজঙ্গল প্রাইমারী স্কুল কেন্দ্র, চন্ডিপাশা প্রাইমারী স্কুল কেন্দ্র, সুখিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্র, চরপলাশ হাই স্কুল কেন্দ্র, আশুতিয়া প্রাইমারী স্কুল কেন্দ্র, ষাইটকাহন ভোট কেন্দ্র, পোড়াবাড়ীয়া মেলা বাজার ভোট কেন্দ্রসহ আরও অনেক ভোট কেন্দ্র উল্লেখযোগ্য।
এ কলামে একটি ঘটনা উল্লেখ না করলে এলাকার মানুষের নিকট দায়বদ্ধ এবং অকৃতজ্ঞ থাকব বলে সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হলো। ১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদের নির্দলীয় নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করাকালে তখন এলাকার প্রায় ৪শত রিকশা শ্রমিক আক্কাছ, রাশিদ, কেরামত, লতু ও অন্যান্যদের নেতৃত্বে রিকসায় ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ও এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে থাকে। তারা আমার কাছ থেকে কোনো পারিশ্রমিক নেয়নি। সেই দিন অনেক চেষ্টা করেও তাদেরকে কোনো পারিশ্রমিক দিতে পারি নাই। তাদেরকে আমার অভিভাবক বড় মামা আবদুছ ছোবান আজাদ শুধু গুড়, মুড়ি ও চিড়া দিয়ে আপ্যায়ন করতে পেরেছিলেন। যে স্মৃতি আজও ভুলা যায় না। এলাকার মানুষের তেমনি কিছু করতে না পারলেও যখন আমার গ্রামের বাড়ী সুখিয়ায় যাই, তখন এলাকার অনেকেই খোঁজ খবর নিতে আসে। অনেকেই বলে থাকে এলাকায় আসবেন। আমরা কিছু চাই না। আপনি বাড়ীতে আসলে আমাদের খুবই ভালো লাগে। আপনাকে দেখলে আমাদের প্রাণ জুড়ায়। এ কথাগুলো শুনার পর আবেগ আপ্লুত হয়ে অশ্রু সংবরণ করতে পারিনা। যখন শুনি, এলাকার অমুক দুঃখ, কষ্টে আছে এবং অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছে সে ব্যাথা সহ্য করতে পারি না। যদিও তাদের জন্য শুধু অন্তরের ভালোবাসা ব্যতিত তেমন কিছু করতে পারিনি।
সবাই যেমন টাকার পাগল না তেমনি অনেকেই ক্ষমতাসীন কারও পেছনে হুরহুর, ঘুরঘুর ও পায়রোবী করতে দ্বিধা সংকোচ বোধ করে থাকে। মানুষ চায় একটু ভালো ব্যবহার, ভালোবাসা, দুঃখে, শোকে, অসুখে, বিসুখে, আপদে বিপদে শান্তনা ও সাহস যোগানো। অনেকে এখনও নিজের গাছের আম, জাম, পেয়ারা, বেল, তাল নিয়ে এমনিতেই অনেকের কাছে চলে আসে। এসব কিছুই নির্মল ভালোবাসার নিদর্শন। যা কোনো চাওয়া পাওয়ার আশায় নহে। সমাজে অনেক টাকাওয়ালা ও বিত্তশালী রয়েছে। তাদের কাছে অনেকেই যায় না। ছোট চাকরি করে এমন কেহ ছুটিতে বাড়ীতে আসলে অনেক সময় অসুখে, বিসুখে ও অভাব অনটনে তাদের কাছে যেতে দ্বিধা, সংকোচ করে না। এসব কিছু ভালোবাসারই প্রতিচ্ছবি।
এলাকার মানুষের সাহায্য, সহযোগিতা ও কোরবানীর চামড়া বিক্রীর টাকা দিয়ে ও এতিমখানায় থেকে পড়ালেখা করে ভালো স্থানে রয়েছে এমন অনেকেরই উদাহরণ রয়েছে ওরা এলাকার অসহায় লোকদের অভাব অনটনে, অসুখ, বিসুখ ও আপদে বিপদে সাহায্য, সহযোগিতা করাতো দূরের কথা ঔরষজাত হিসেবে মাতা পিতাকেও চেনে না। এমন উপমা, উদাহরণেরও কমতি নেই। মানুষের ¯েœহ, মায়া ও ভালোবাসা পেতে হলে দরকার সুন্দর মন, স্বচ্ছতা, হিংসা, বিদ্বেষ ও অহংকার পরিহার।
১৯৭৬ সালের ১৭ই মের কথা। এর আগের দিন ১৬ মে, মওলানা ভাসানীর ডাকে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চে অংশগ্রহণ করে থাকি। মওলানা ভাসানী সেদিন লংমার্চ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানষাট থেকে সরাসরি টাঙ্গাইলের সন্তোষের চটের বেড়া ও ছনের ছাউনির ঘরে চলে আসেন। পরের দিন ১৭ নভেম্বর শ্রান্ত, ক্লান্ত, বৃদ্ধ, হুজুর ভাসানীকে দেখার জন্য ন্যাপ নেতা ফজলে লোহানী, আনোয়ার জাহিদ, গাজী শহীদুল্লাহ, আবু নাসের খান ভাসানী, নূর মোহাম্মদ খান, এ.জেড.এম এনায়েতউল্লাহ খানসহ অন্যান্যদের সাথে সন্তোষে যাই। সেখানে যাওয়ার পর একজন ব্যক্তি মানুষের ভীড় ডিঙিয়ে হুজুর ভাসানীকে ক্রন্দনরত অবস্থায় কদমবুছি করে এবং তার পাঞ্জাবীর পকেট থেকে দুটি পাকা পেয়ারা দিয়ে হুজুর ভাসানীকে খেতে বলে। হুজুর ভাসানী তখন পেয়ারা খেতে খেতে বলেন, তুমি কী চাও। লোকটি আবেগ, উচ্ছাসে অশ্রুসিক্ত আপ্লোত নয়নে বলল, হুজুর আমি কিছুই চাই না। আপনি একবার যমুনা চরের বস্তিতে থাকা আরজ আলীকে দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে আমিও আপনাকে একনজর দেখার জন্য ছুটে আসি। সেদিন আপনাকে কদমবুছি করে ওঠার সময় আমার পিঠে দুইবার থাপড়িয়ে আদর করেছিলেন। আপনার ¯েœহ ভালোবাসা আজও ভুলতে পারি না। তাই আপনাকে দেখতে এসেছি। তখন হুজুর ভাসানী খাদেম তোরাবালী ফকির ও মুসলীমকে ডেকে বললেন, এই লোকটিকে ভালোভাবে খাওয়া দাওয়া করায়ে রাতে ঘুমানোর ব্যবস্থা কর।
আমি তখন আমার নির্বাচনী প্রচারে খুবই ব্যস্ত। একবার নির্বাচনী এলাকার আশুতিয়া বাজারে একটি সভা করতে যাই। সেই নির্বাচনী সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আশুতোষ স্যার (পটল বাবু)। তখন মানুষের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার সময় একজন আমার সাথে হাত মিলিয়ে বলল, আমি শুক্কুর আলী। এরই মধ্যে উপস্থিতিদের মধ্যে অনেকেই আমাকে জানাল, আপনার নির্বাচনে ওই শুক্কুর পুরাতন আশুতিয়া বাজারে নিজ উদ্যোগে পানের দোকান খোলে বসেছে। সে বিনা পয়সায় পান খাওয়ায় ও আপনার জন্য ভোট চায়। এসব শুনে শুক্কুর আলীকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম তুমি আমার ভোটের জন্য মানুষকে বিনা পয়সায় পান খাওয়াও আর আমি কিছুই জানি না। কোনো দিনতো আমাকে কিছুই বলনি বা কিছুই চাওনি। তদোত্তরে শুক্কুর আলী বলেছিল, আমি আপনার ¯েœহ, ভালোবাসা ও দোয়া চাই। ইতোপূর্বে যখনই আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছে ততবারই আমার সাথে দেমাগ না করে যে সুন্দর ব্যবহার করেছেন তাতে আপনাকে ভুলতে পারি না। আপনার ভোটের জন্য মানুষকে পান খাওয়ানোর জন্য আমি আপনার টাকার কাঙ্গাল নই। আপনার সুন্দর মন ও ভালোবাসার কাঙ্গাল। আমার জীবনে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে। যার সবকিছুর বর্ণনা করা সম্ভব নয়। মানুষকে মনে প্রাণে ভালোবাসলে দুঃখে, শোকে, আপদে বিপদে সামান্য হাত বাড়ালে যে ভালোবাসা, সম্মান, ইজ্জত, মর্যাদা ও দুঃসময়ে যে সহযোগিতা পাওয়া যায় তা কল্পনাও করা যায় না। বাস্তবিক অর্থে মানুষকে মনে প্রাণে ও অন্তর থেকে ভালোবাসলে টাকা পয়সা ও অর্থবিত্তের মালিক না হয়েও যে অফুরন্ত সম্মান ও ভালোবাসা পাওয়া যায় তা দুকথা লেখে বুঝানো সম্ভব নয়।
এ বয়সে অনেক আপদে, বিপদে ও অসুখ বিসুখে পড়েছি। শুধু আল্লাহর রহমত, গায়েবী সাহায্য, মানুষের দোয়া ও ভালোবাসার জন্যই তা উত্তোরন ঘটেছে।
বসন্তকালে কোকিল কুহু কুহু ডাকলেও আষাঢ় মাসে কোকিল কুহু কুহু ডাকে না। বসন্তকালে কোকিলদের পেছনে না ঘুরে এই সময়টুকু মানুষের জন্য আল্লাহর দরবারে এরাদা করলে সেই লোকের প্রত্যাশা অপূরণ থাকার কথা নয়। তাদের ব্রেইনে স্বার্থ ছাড়া আর কিছু থাকে না। ওদের যেমন চোখের পর্দা নেই, লজ্জা নেই, লাগাম নেই তেমনি কোনো আদর্শ নেই। ওদের একটাই দর্শন স্বার্থ আর স্বার্থ, হিংসা, অহংকার ও নিজের বাহাদুরী।
বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমদের একটি লেখা ১২/৯/২০ ইং দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত হয়েছে। লেখাটির শিরোনাম ছিল, “যে বেদনা চিরদিন বইতে হবে”। লেখার মর্ম কথায় মানুষ ও অমানুষের যে চালচিত্র ফুটে ওঠেছে ভোক্তভোগী ছাড়া এ ব্যাথা না বুঝারই কথা।
পরিশেষে আবারও বলব, মানুষের ভালোবাসা ভুলা যায় না, ভুলতে পারি না। “জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস”। আমার নির্বাচনী ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারেও লেখা ছিল আপনাদের ভালোবাসার মাঝে বেঁচে থাকতে চাই। জীবনে ও মরণে মানুষের অনাবিল ও অকৃত্রিম ভালোবাসাই প্রত্যাশা।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট