রংপুরের পীরগঞ্জে কাদিরাবাদ বনবীটের বাগানকৃত জমির গাছ কেটে ওই জমি জবর দখলে গ্রামবাসীর মাঝে কোন বিরোধ নেই। যেন মিলে মিশে ভোগদখল করছে তারা। বনায়নকৃত জমির মধ্যে কত একর জমি বেদখল হয়েছে, বনবীট কর্মকর্তা তার সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। ইতঃপূর্বে বীট কর্তৃপক্ষের সৃজিত সাড়ে ১২ একর জমিতে লাগানো ওষুধী বাগানের বিভিন্ন প্রজাতির সাড়ে ১২ হাজার ওষুধী গাছ দুর্বৃত্তরা কেটে সাবাড় করেছিল। বীট অফিস জানায়,উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের কাদিরাবাদ বীটের আওতায় ১৮টি মৌজায় ৮১০ দশমিক ৪২ একর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ বাগান থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা নেই। ওই বীটের বিভিন্ন মৌজায় প্রায় ৩’শ একর বাগানকৃত জমিতে বাগান নেই। অবৈধ দখলদাররা ওই জমি দখল করে ঘরবাড়ি নির্মান, চাষাবাদ করছে। বেদখলী জমি উদ্ধারে বীট কর্তৃপক্ষ একাধিক মামলা করেছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বনবীটের অধীনে মদনখালী মৌজায় প্রায় ১’শ একর জমি এলাকার কতিপয় ব্যক্তি মিলে-মিশে জবর দখল করে আসছে। প্রতি বছরই এ জবর দখলীয় জমির পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। কমে যাচ্ছে বনের জমি ! মদনখালী গ্রামের আবদুর রশিদ গং প্রায় ১০ একর, জহুরুল ইসলাম ২ একর, বাবলু মিয়া ১ একর, নুরুল মিয়া ১ একর, শামীম মিয়া ১ একর এ রকম অনেক দখলবাজ বনের জমি দখল করে রোপনকৃত গাছ কেটে রাতারাতি আবাদি জমিতে পরিণত করেছে বলে বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছে। ওইসব জমিতে স্যালোমেশিনে সেচ দিয়ে ধান, পাট, ফলজ বাগান, কলা, হলুদ, আখসহ দুই মওসুমেই শষ্য চাষাবাদ করা হয়। অপরদিকে বনের অনেক জমিতে ঘরবাড়ী তৈরী করে বসবাস করছে দখলবাজরা। সুত্র জানায়, খেতাবের পাড়া মৌজায় ২১ একর, বাবনপুরে ৭৯ একর, হাসারপাড়ায় ১’শ একর, হরনাথপুরে ২ একর জমির বাগান কেটে অবৈধ দখল করার ঘটনা ঘটেছে। অপরদিকে লক্ষীপুর, কোচারপাড়া, বড়ফলিয়া, পত্নীচড়া, শ্যামদাসেরপাড়া, বাঁশপুকুরিয়া, তাঁতারপুর, জলামহল, পাটগ্রাম, কৈগাড়ী, উজিরপুর, ধাড়াকোল এবং ওমরপুর মৌজার চিত্রও একই রকম। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দখলদার বলেন, বীট কর্তৃপক্ষকে মাসিক ট্যাকাণ্ডপইসা দেই। অপরদিকে এলাকার সাধারণ মানুষ জানায়, বীটের জমিতে অবৈধ দখলদাররা জোটবদ্ধ। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। বীট কর্মকর্তা বলেন, ইতঃপূর্বে মামলা করে জমি উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়েছে। মদনখালী গ্রামের জহুরুল ইসলাম, জয়তুল ইসলাম ও জয়নাল আবেদীন, নুরু মিয়া, কোচারপাড়ার শফিকুল ইসলাম, সবুজ মিয়া ও সেকেন্দার আলীসহ ১০/১২জন বনবীটের প্রায় সাড়ে ১২ একর জমি জোরপূর্বক ভোগদখল করে। তিনি আরও বলেন- বিগত ২০১৩ ইং সালের জুনে উল্লে¬খিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে জমিগুলো উদ্ধার করে ওই জমিতে আমলকি, হরতকি, বহেরা, শতমুলী, অর্জুন, জাত নিম, জাম, গামার, সোনালু, শিমুল, বকুল, চন্দন, রক্ত চন্দন, পারুল, অশোকসহ ৩২ প্রজাতির সাড়ে ১২ হাজার ওষুধী গাছ রোপন করে গাছগুলো পরিচর্যা করা হচ্ছিলো বলে জেনেছি। ওই সময় দুর্বৃত্তরা নির্দয়ভাবে গাছগুলো কেটে প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি করে। অবৈধ দখলদাররা প্রতি বছরই ধারাবাহিকভাবে ২/৪ একর করে জমি দখল করে আসছে। কাদিরাবাদ বনবীটের কতটুকু জমি বেদখলে গেছে এর সঠিক হিসেব নেই। অপরদিকে হাসারপাড়া মৌজাতেও প্রায় ১’শ একর জমি বেদখল হয়েছে। আমি সেগুলো উদ্ধারে পদক্ষেপ নিয়েছি। রংপুর সামাজিক বনায়ন জোনের সহকারী বন সংরক্ষক জানান,সরকারীভাবে বনবিভাগ ২০১২-২০১৩ সালে বাংলাদেশের জীব বৈচিত্র্য ও ইকোট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ওষুধী বাগান সৃজনের জন্য পদক্ষেপ নেয়। ওই প্রকল্পের অধীনে বিগত ২০১৩ ইং সালের জুনে কাদিরাবাদ বীট অফিস সংলগ্ন কোচারপাড়া গ্রামে সাড়ে ১২ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির ওষুধি গাছ লাগানো হলে দুর্বৃত্তরা গাছগুলো রাতের আঁধারে কেটে ফেলেছে। সে সময় মামলা করা হয়েছিল। এখনো মামলা চলছে। কাদিরাবাদ বনবীটের জমি দখলে নিয়ে মিলেমিশে ভোগদখল করছে এলাকাবাসী। তারা সমবেত হয়ে প্রতি বছরই বনবীটের নতুন নতুন জমি দখলে নিচ্ছে। তাই এলাকবাসীর প্রশ্ন, এভাবে আর কতদিন ?