দখলবাজদের দখলে হারিয়ে যাওয়া ভোলাহাট উপজেলার পয়ঃনিষ্কাশনের একমাত্র সরকারী ৮কিঃমিঃ ক্যানেল অবশেষে দখলমুক্ত করলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান। একমাত্র সরকারী ৮কিঃমিঃ ক্যানেল উপজেলার মহানন্দা নদী হয়ে বজরাটেক, হলিদাগাছী, ইমামনগর, বীরেশ^রপুর, সুরানপুর গ্রামসহ সিংহ ভাগ অঞ্চলের জমে থাকা পানি এ ক্যানেল দিয়ে বিলভাতিয়ায় নিষ্কাশন হতো। কিন্তু এলাকার দখলবাজ প্রভাবশালী থেকে শুরু করে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান সরকারী এ ক্যানেলটি দখলে নিয়ে অস্তিত্ব বিলীন করে ফেলে।
ফলে পয়ঃনিষ্কাশন সম্পন্ন ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে রাস্তাসহ আম বাগান, বাড়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে চরম দূর্ভোগের শিকার হতে হতো এলাকাবাসিকে। এলাকার ভুক্তভুগিরা সমস্যার সমাধানে ইতঃপূর্বে বার বার স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করে প্রতিকার চেয়ে কোন প্রতিকার পায়নি। ভুক্তভুগিরা জানান, সরকারী ক্যানেলটি দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালীরা নামে বেনামে দখলে নিয়ে বাড়ী-ঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নিমার্ণ করে ২৪ ফুট প্রস্থ্য ক্যানেলটির অস্তিত্ব বিলীন করে দিয়েছে। দেখার উপায় নাই ক্যানেলটি একসময় ২৪ ফুট দৈর্ঘ ছিলো। দখল করা ক্যানেলটি কোথাও একেবারে মাটি ভরাট করে ভিটে বানিয়েছে কোথাও ১/২ ফুটের নালা করে যে যার মত করে দখল করে আপন খেয়ালে স্থাপনা তৈরী করে ফেলে।
এর পূর্বে ১৯৯৩-৯৪ অর্থ বছরে এ ক্যানেলটি সংস্কারের জন্য তৎকালীন গোহালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান ও ভোলাহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান চারটি প্রকল্পে প্রায় ৬শত ম্যাট্রিক টন গম বরাদ্দ নিয়ে সংস্করণ করেন। কিন্তু তারপর থেকে ক্যানেলটির উপর কারো কোন নজরদারী না থাকায় চলে যায় দখলবাজদের দখলে। হারিয়ে যায় অস্তিত্ব। শুরু হয় এলাকায় চরম জলাবদ্ধতা। চরম দূর্ভোগে পড়ের এলাকার মানুষ। এ ঘটনায় ভোলাহাটের মূখপত্র সাপ্তাহিক ভোলাহাট সংবাদসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ক্যানেলটি উদ্ধার করে সংষ্কারের দাবী জানানো হলেও ভুক্তভুগিদের দাবীর কোন গুরুত্ব পায়নি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে। দখল মুক্ত করতে গোহালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল কাদের দফায় দফায় নোটিস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কিন্তু গত ১৭ আগস্ট ভোলাহাট উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান যোগদান করে জনস্বার্থে ভোলাহাট উপজেলার উন্নয়নে ঝাঁপিয়ে পড়লেন প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে সোনার বাংলা গড়তে মাতৃভূমির অংশের সাথে বেঈমানি না করে নিজ কর্মস্থল ভোলাহাট উপজেলাকে আইনের শাসন বাস্তবায়নে উন্নয়নের অঙ্গীকারে অবিরাম ছুটে চলেছেন কোণ থেকে কোণান্তরে। তিনি দীর্ঘদিনের ভুক্তভুগিদের প্রত্যাশা পূরণে নিজ দায়িত্বে অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করলেন ক্যানেলটি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে উপজেলার উন্নয়নে ক্যানেলটি দখলমুক্ত হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমানকে এলাকাবাসী ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে গোহালবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন ক্যানেলটি দখলমুক্ত করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমানকে ধন্যবাদ জানিছেন এবং বলেন এমন মানুষ ভোলাটের উন্নয়নে আর্শীবাদ। তিনি বলেন, ক্যানেলটি পূনঃসংস্কার করে পূর্বের চেহারায় ফিরে আনার দাবী করেন। এদিকে বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল কাদের বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ ক্যানেলসহ উপজেলার সরকারী জায়গায় গড়ে উঠা অবৈধ্য স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালিয়ে উন্নয়নে ব্যাপক ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাকে ভোলাহাট উপজেলার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিছেন।
উল্লেখ্য, শুধু ক্যানেল নয় তিনি উপজেলার মেডিকেলমোড়, বড়গাছীবাজার, মুশরীভূজাবাজার, ময়ামারীবাজার, গোহালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ গেট বাজার, ইমামনগরবাজার, ফুটানীবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে রাস্তার প্রশস্ত করেছেন এবং সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন অফিসের কমকর্তা ও কর্মচারীরা ঠিক মত অফিস করছেন কিনা তদারকি, উপজেলা চত্বরসহ বিভিন্ন স্থান পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ, রাস্তার পাশে বেঁধে রাখা গরু-ছাগল সরানো, বাল্যবিবাহ রোধ, সন্ত্রাসমুক্ত, মাদকমুক্ত সমাজ গড়াসহ যাবতীয় কাজ করে যাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, ভোলাহাট উপজেলাকে আলোকিত করতে রাত দিন ও ছুটির দিনেও কাজ করে যাবেন। সরকারী জায়গায় কোন অবৈধ স্থাপনা থাকবে না। উচ্ছেদ অভিযান চলমান থাকবে বলে তিনি জানান। তিনি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে কারো সাথে কোন আপোশ করবে না বলে জানান। তিনি জানান ভোলাহাট উপজেলার উন্নয়নে দিন রাত কাজ করে যাবেন এমনাটাই দাবী করেন।