রংপুরের পীরগঞ্জে ক’দিনের টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তলিয়ে গেছে চাষীদের কপাল। উপজেলার রামনাথপুর, ,টুকুরিয়া, বড়আলমপুর , চতরা ও কাবিলপুর ইউনিয়নে বন্যার প্রকোপ বেশী। এই ৫ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ১৫ হাজার মানুষসহ উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের নিচু এলাকায় ২৫ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। কৃষকের জমির ধানসহ অন্যান্য ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এলাকার পুকুর গুলো বন্যার পানিতে একাকার হওয়ায় লাখ-লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে । ফলে মুলত বানের পানিতে তলিয়ে গেছে মৎস্য চাষীদেরও কপাল। পাশাপাশি করতোয়া নদী তীরবর্তী গ্রামের বেশকছিু বাড়ী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। ভাঙ্গন হুমকিতে আছে মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উপজেলার চতরা ইউপির চেয়ারম্যান বলেন, তার ইউনিয়নের ৮ গ্রামের কমপক্ষে ৬ হাজার মানুষ পানি বন্দি অবস্থায় অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছে। বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ী ঘন বর্ষনের কারনে ভেঙ্গে গেছে। কাজ না থাকায় বেশী দুর্দশায় আছে কর্মজীবী শ্রমিকরা। কাবিলপুর ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নের ফরিদপুর, গোপালপুর, ঘণশ্যামপুর,জামিরবাড়ি, হলদীবাড়ি,গাংজোয়ার,সহ ৭টি গ্রামের মানুষ পানি বন্দি দিন কাটাচ্ছে । কোন-কোন গ্রামের রাস্তা কোমর পানিতে ডুবে যাওয়ায় খেটে খাওয়া মানুষজন খাদ্য কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তিনি ইতোমধ্যে কর্মহীন মজুর শ্রেণীর মানুষের মাঝে ১০ বস্তা চাউল বিতরণ করেছেন। টুকুরিয়া ইউপির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন,তাঁর ইউনিয়নে দক্ষিন দুর্গাপুর, সুজার কুঠি নামাপাড়া,বোয়ালমারী,মেরীপাড়া,হরিনা,আব্দুলেরচর,রামকানুপুর,বিছনা ও জয়ন্তীপুরঘাট পাড়াসহ ১০ গ্রামের প্রায় ৭ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে ৫ টি বাড়ী ভেঙ্গে করতোয়ার গর্ভে গেছে । শতাধকি মাটির ঘর-বাড়ী অতিবর্ষার কারনে ভেঙ্গে গেছে। কাজ না থাকায় দিন মজুরদের দুর্ভোগ বেড়েছে। করতোয়া নদীর পানি আজও বাড়ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আরও ব্যাপক ক্ষতির আশংকা রয়েছে। গত মঙ্গলবার উপজেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন কর্মকর্তা-মিজানুর রহমান চতরা ইউনিয়নের বেশী ক্ষতিগ্রস্থ কুয়াতপুর, কুমারপুর, নামা ঘাষিপুর, নামা মাটিয়ালপাড়া, চকগোলবাড়ী, গিলাবাড়ী,বড়বদনাপাড়াসহ ৮টি গ্রামের বন্যার দৃশ্য নৌকা যোগে সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এ সময় তার সাথে থাকা ইউপি সদস্য নুর মোহাম্মদ গেল্লা ও জিয়াউর রহমান বলেন, চতরা ইউনিয়নের ওই ৩ ওয়ার্ডের সকল রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে। ৬ হাজারের অধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। নৌকা ছাড়া তাদের চলাচল করার কোন উপায় বা বাহন নেই । ধানসহ মাঠের অন্যান্য ফসলি জমি এখন পানির নীচে । হাজার-হাজার টাকার পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ঘন বৃষ্টি আর বানের পানির কারনে বহু মাটির ঘর-বাড়ী পড়ে গেছে। কাজ না থাকায় দিন মজুর শ্রেণীর লোকজরা সীমাহীন কষ্টে দিনাতিপাত করছে । উপজেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন কর্মকর্তা-মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও পানি বন্দি মানুষের প্রাথমিকভাবে সহায়তার জন্য ইতোমধ্যে ২’শ বান্ডিল ঢেউটিন, ৬ লাখ টাকা ও ৫০ মে: টন চাউল জরুরী ভিত্তিতে বরাদ্দ চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ আসা মাত্রই তা বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে ।