সরকারের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত কাগজ কল কর্ণফুলী পেপার মিল কেপিএম ধ্বংসের মুল হোতা কেপিএমের এমডি ডঃ এম এম এ আবদুল কাদেরকে অপসারণের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে কাপ্তাই উপজেলার জনপ্রতিনিধিরা।
শুক্রবার (২ অক্টোবর) দুপুরে রাঙ্গামাটি কাপ্তাই উপজেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রতিনিধিরা এ দাবী জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন করেন, কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মফিজুল হক, চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম বেবি, রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মোঃ হানিফ, কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রান ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হানিফ বাবু, সাবেক রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্য কাপ্তাই আওয়ামী পেশাজীবি লীগের আহ্বায়ক প্রকৌশলী রুবায়েত আক্তারসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মফিজুল হক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান সংসদে বলেছেন, কেপিএম মিলকে বাঁচানো হবে। গত অর্থ বছরে ৫৪ কোটি টাকাও বরাদ্ধ দেওয়া হয় কেপিএমকে। অথচ কেপিএম এমডি বলেছেন মিলটি বন্ধ হয়ে যাবে। মিলটি বন্ধ করতে নানান পাঁয়তারাও করছেন তিনি। বন্ধ করেছেন প্রতিষ্ঠানের পাল্প মেশিনসহ নানান যন্ত্রাংশ। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে সর্বশেষ একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেল যমুনা টিভির অনুসন্ধ্যানী প্রতিবেদনে জনপ্রতিনিধিদের নামে মিথ্যা, ভিত্তিহীন কুরুচিপূর্ণ অসত্য বক্তব্য প্রদান করেছেন। আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা চাই কেপিএম বাঁচুক, আবারও ঘুরে দাঁড়াক। এজন্য যা করণীয় আমরা সবই করবো।
তিনি আরো বলেন, গত ২৫ সেপ্টেম্বর টিভি চ্যানেলে অনুসন্ধ্যানী প্রতিবেদনে কেপিএম মিলের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়। আর মিল কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য প্রণোদিত অভিযোগের কারণে এই প্রতিবেদক আমাদেরও বক্তব্য নেয়। আমাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আমরা জবর দখল করে কেপিএম এর বাসাবাড়িতে বসবাস করছি। প্রকৃত পক্ষে মিলের জড়াজীর্ণ বাসস্থান নিজ খরচে মেরামত সাপেক্ষে মিল কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ পত্রের মাধ্যমে আমরা ওই বাসায় বসবাস করছি। যা প্রমাণপত্র আমাদের কাছে আছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি মনগড়া ভাবে প্রায় ৫ বছর পূর্ব থেকেই আনোয়ার ইসলাম চৌধুরী বেবীর নামে বরাদ্দপত্র দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা বকেয়া ভাড়া বাবদ পাওনা হিসেবে দেখিয়েছে। কিন্তু বরাদ্দপত্র যে দিন পাব সেদিন থেকেই ভাড়া প্রদান করবো। যদি বকেয়া পাওনা থেকে থাকে তা হলে আমাকে কেন নতুন করে বাসার বরাদ্দপত্র প্রদান করা হলো। যেদিন বাসার বরাদ্দপত্র দেয়াই হয় তা হলে নতুন বরাদ্দপত্রে পূর্বের বকেয়া পাওনা টাকা কথা উল্লেখ থাকার উচিত ছিলো। এতেই প্রমাণিত হয় মিলের এমডি যা কিছু বলছেন তা সবই মিথ্যা ও বানোয়াট।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, বেসরকারী টিভি চ্যানেলে অনুসন্ধ্যানী প্রতিবেদনে কেপিএমের এমডি ডঃ এম এম এ আবদুল কাদের কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মফিজুল হক ও চন্দঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার ইসলাম চৌধুরী বেবীকে জড়িয়ে মাদক পাচার, মাদক ব্যবসা এবং তাদের নিজ বাসায় মাদকের আখড়া ও অসামাজিক কার্যাকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ করেন যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট এবং উদ্দেশে প্রণোদিত।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দিক নিদের্শনায় করোনাকালীন সময়ে জনগণের সাহায্য-সহযোগিতায় তাদের দ্বারপ্রান্তে কাজ করে যাচ্ছি ঠিক তখনি কেপিএমের এমডি ও ৭১ এর স্বাধীনতা বিরোধী জামাত শিবির সমর্থিত মিলের কর্মকর্তা রেজা শরিফ কামাল, ইমাম ফখরুদ্দিন রাজীর চক্রের যোগসাজসে সরকার দলীয় জনপ্রতিনিধিদের কার্যক্রম বাধাগ্রস্থসহ সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার মানসে এমন আচরণ করেছে বলে আমরা মনে করি।
চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবি বলেন, কেপিএম চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নে অবস্থিত। সকল প্রতিষ্ঠানকে সরকারি রাজস্ব প্রদানের বাধ্যবাধকতা থাকলেও গত কয়েক বছর যাবত তিনি প্রায় ১৪ লক্ষ টাকার টেক্স বকেয়া করেছেন। ফলে ইউনিয়নের কার্যক্রম প্রায় বন্ধের পথে। টাকা না দিয়ে উল্টো আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে আমার বিরুদ্ধে মাদকসহ নানান কুৎসা রটনা করে মিডিয়াতে বক্তব্য প্রদান করেন তিনি। তার এমন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমাদের মানহানি করার কারণে প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করবো। তারা সকলে কেপিএম এর এমডির অপসারণ চাই।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, কর্ণফুলী পেপার মিলে কেপিএমের এমডি ডঃ এম এম এ আবদুল কাদের যোগদানের আগে ৭৯ টন পেপার উৎপাদন হতো। কিন্তু বর্তমানে এমপি’র অব্যবস্থাপনা ও দূর্নীতির কারণে ১৫ থেকে ২০ টন কাগজ উৎপাদন হচ্ছে। আজ কর্ণফুলী পেপার মিলে কোটি কোটি টাকার কাঁচামাল মিলের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর আগে যারা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ছিলো তারা এইসব কাঁচামাল ব্যবহার করে ব্যাপক কাগজ উৎপাদন করেছিলো।
তাই সরকারের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত কাগজ কল কর্ণফুলী পেপার মিলকে ধ্বসের হাত থেকে বাঁচাতে আর এই এলাকার মানুষকে রক্ষা করতে একটি সুস্থ তদন্তের মাধ্যমে কেপিএমের এমডি’র বিরুদ্ধে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহন করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানান।