কিশোরগঞ্জের নিকলীতে আলোচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সরকারি গাড়ি ভাংচুর মামলায় আদালতে চার্জশীট দিয়েছে পুলিশ। চার্জশীটে নিকলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কারার সাইফুল ইসলাম ও তার ভাতিজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কারার শাহরিয়ার আহমেদ তুলিপকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসাতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান মো. রুহুল কুদ্দুস ভূইয়া জনি তার ভাগ্নে ও একজন ব্যাক্তিগত চালককে দিয়ে গাড়ির কাঁচ ভাংচুর করান বলে উল্লেখ করা হয়।
চার্জশীট থেকে প্রধান দুই আসামি আওয়ামী লীগ নেতা কারার সাইফুল ইসলাম ও কারার শাহরিয়ার আহমেদ তুলিপকে বাদ দেয়া হয়। তবে নিজেই গাড়ি ভেঙ্গে প্রতিপক্ষকের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অভিযুক্ত করা হয়নি। পুলিশ বলছে, বিষয়টি আদালত সিদ্ধান্ত নিবে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়ের করা মামলায় গত ৯ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশীট দাখিল করে পুলিশ। এতে ৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিকলী থানার এসআই মো. শফিকুল ইসলাম আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট নং-৭৪) দাখিল করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, ‘মামলার বাদী অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় অতিশয় সু-কৌশল অবলম্বন করিয়া মামলার এক নং আসামি কারার সাইফুল ইসলাম এবং ২ নং আসামি কারার শাহরিয়ার আহমেদ তুলিপ চেয়ারম্যানকে ফাঁসানোর জন্য বাদী তাহার সরকারি গাড়ির বেসরকারি ড্রাইভার লিটন এবং বাদীর সম্পর্কে ভাগ্নে তুষারকে দিয়ে তাহার সরকারি গাড়ির দুইটি গ্লাস ভাংচুর করিয়েছেন মর্মে তদন্ত কালে প্রতিয়মান হয়। এবং বাদীর নির্দেশনায় আসামি তুষার ও লিটন সরকারি গাড়ির গ্লাস ভাংচুর করিয়া ক্ষতি সাধন করিয়াছেন মর্মে সুস্পষ্ট সাক্ষ্য প্রমান পাওয়া যায়।’
চার্জশীটে তুষার ও লিটনসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্ত আসামিরা হচ্ছেন, নিকলী খালিশাহাটি গ্রামের মো. জমির আলীর ছেলে মো. কামরুল ইসলাম (৩২), ধুপাহাটি গ্রামের কারার শহীদের ছেলে কারার পলক (২৬), দামপাড়া গ্রামের মো. ইদ্রিস আলীর ছেলে মো. লিটন মিয়া (৩৩), বড়কান্দা গ্রামের হাজী সাহাবুদ্দিনের ছেলে তৌহিদুজ্জামান তুষার (২৭), সাইটধার রামেশ্বরহাটি গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে মো. নাজিউর রহমান সোহেল (৩২), নাগারছিহাটি গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে সুমন (৩৬), মোহরকোনা গ্রামের হেলু মিয়ার ছেলে সবুজ মিয়া (৪০), তেলিহাটি গ্রামের মো. ইব্রাহিমের ছেলে মো. কামাল (৩৪) এবং পূর্বগ্রাম জঙ্গিলহাটির আবদুল ছালেকের ছেলে আরিফ মিয়া (২৩)।
প্রসঙ্গত, মালিপদে চাকুরি দেয়ার কথা বলে নিকলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান মো. রুহুল কুদ্দুস ভূঁঞা জনি তার এক সময়কার নির্বাচনী কর্মী কামরুল ইসলামের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা উৎকোচ নেন বলে অভিযোগ করেন কামরুল। কিন্তু চাকুরি দিতে না পারায় ক্ষুব্ধ হয়ে কামরুল চেয়ারম্যানের কাছে টাকা ফেরত চান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়।
গত ২৬ জুলাই নিকলী উপজেলা পরিষদ হলরুমের সামনে চেয়ারম্যানের গাড়ি থামিয়ে তার কাছে টাকা ফেরত চান কামরুল। এ নিয়ে উভয়পক্ষের লোকজনের মধ্যে তর্কাতর্কি ও ধাক্কাধাক্কি হয়।
এ দিন বিকেলে উপজেলা চেয়ারম্যান বাদী হয়ে কামরুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কারার সাইফুল ইসলাম ও সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কারার শাহরিয়ার আহমেদ তুলিপসহ ৯ জনকে আসামি করে গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগে নিকলী থানায় একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয় রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে কারার সাইফুল ইসলামের নির্দেশে আসামরিা তার গাড়িতে হামলা করেন।
অপর দিকে একই দিনে কামরুল বাদী হয়ে চাকুরি দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়ার অভিযোগে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস ভূইয়া জনি, তার সহযোগী নিয়াদ হাসান রকি ও শফিকুল ইসলাম ওরফে শকুলকে আসামি করে নিকলী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এ মামলাতেও গত ৯ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশীট দাখিল করে পুলিশ (চার্জশীট নং-৭৫)। চার্জশীট থেকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান মো. রুহুল কুদ্দুস ভূইয়া জনিকে বাদ দিয়ে অপর দুই আসামি নিয়াদ হাসান রকি ও শফিকুল ইসলাম ওরফে শকুলকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে চেয়ারম্যানের কথা বলে রকি ও শকুল কামরুলের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে চার্জশীটে উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে, নিকলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কারার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সত্য কখনো চাপা থাকেনা। চেয়ারম্যান আমাকে ফাঁসাতে নিজের সরকারি গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে আমাকে ফাঁসাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে আসল সত্য। কিন্তু তাকে চার্জশীটে কেন আসামি করা হয়নি সেটি রহস্যজনক।’ এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান, আওয়ামী লীগ নেতা কারার সাইফুল ইসলাম।
গাড়ি ভাংগার মামলার নিজের সম্পৃত্ততা থাকলেও কেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে চার্জশীটে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামসুল আলম সিদ্দিকীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তের সময় যা পেয়েছে, সেটি চার্জশীটে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বাদীকে গাড়ি ভাংচুরের নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি বিষয়টি আদালত সিদ্ধান্ত নিবে।’