(এম আর চৌধুরী লিখিত উপরোক্ত নামীয় পুস্তিকার বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে আলোচক হিসাবে আমার পরিচয় দেয়াটা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
আমার দাদা অর্থাৎ বাপের বাপ ছিলেন গরিব কৃষক, বাবা ছিলেন কেরানি, পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত সামান্য জমির বেশীরভাগ টুকুই বিক্রি করে দিয়ে ভাত কাপড়ের অভাব মিটিয়েছিলেন। আমিও কেরানিগিরি করে চাকুরীজিবন শুরু করে একজন স্বল্প বেতন ভোগী সরকারী কর্মচারী হিসাবে অবসর গ্রহণ করি। মফম্বল শহরে পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত একটি বাসা ছাড়া কোথাও আমার কোন জোতজমি অথবা ব্যাংক ব্যালেন্স নাই। এখনো আমাকে পরিশ্রম করে রোজগার করে খেতে হয়। যেমন চাকুরী থেকে রিটায়ার করে বাবাকেও এক স্কুলে কেরাণিগিরি করতে হয়েছিল। বাংলাদেশে আমার মত এমন কয়েক কোটি লোক রয়েছে।
উপক্রমণিকা দেওয়ার ফলে আলোচনা-বিতর্ক সূত্রে প্রদত্ত আমার মতামত মূল্যায়ন করা সহজতর হবে।)
অসমাপ্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবে ঃ
পুস্তিকার প্রথম অংশ কৃষি বিষয়ক করনীয় প্রসঙ্গে উল্লেখিত বাংলাদেশের কমিউস্টদের আশু লক্ষ্য ও করনীয় বিষয়ের বক্তব্যে আমরা জোত জমির ব্যাক্তিমালিকানায় অবসান ও কৃষকের (?) (প্রকৃতপক্ষে চাষীর) হাতে জমি ন্যাস্তকরনের বিষয়টি সম্পূর্ণরুপে সমর্থন করি।
বস্তুত, ১৯৪৭ সালে ভারতবিভাগের পূর্বে নির্বাচনীযুদ্ধে ও রাজিৈতক সংগ্রমে, মুসলিম লীগ বা কংগ্রেসেরে তো প্রশ্নই উঠেনা, শ্রমিক কৃষকের পার্টি বলে কথিত কমিউনিস্ট পার্টি ও স্বাধীনতার তাৎক্ষনিক পরবর্তী কর্মসূচী হিসাবে জমির জাতীয়করনকে আমলেই আনেননি। যদি-ও জমির জাতীয়করনটা ছিল একান্ত জরুরী কৃষিবিপ্লব তথা গণতান্ত্রিক বিপ্লবেই কর্মসূচী। এ বিষয়ে আমার মতামত অনেক কর্মরেডের/মতামতের সাথে মিলে যায়। তা ছাড়া অন্যান্য মতামত, ব্যাখ্যা বিশ্লেষন ও পদ্বতি আমার নিজস্ব।
বর্গামালিক, জোতদার ও জমিদার তথা পাতি-সামস্ত বাদী শ্রেনী থেকে আগত। লোকজন কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব ছিল বলে এ কর্মসূচী নেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তেভাগা আন্দোলনের ফলে বিক্ষুব্ধ বর্গচাষী ও প্রান্তিকচাষী জমির জন্য ক্ষুদার্থ বাঘের মত হিং¯্র হয়ে উঠলে ক্ষুদে সামস্তবাদী ও ক্ষুদে পুজিঁবাদী শ্রেনীর লোকেরা বিষয়টাতে গুরুত্ব দেননি। তাদেরকেও জমির মালিকানা হারাতে হবে এটা প্রথমে তারা কল্পনাই করতে পারেননি, কিন্তু যখন ঘটনার গুরুত্ব চিন্তা করলেন তখন ভয় পেয়ে গেলেন। তারা আন্দোলনের থেকে সড়ে দাড়ালেন। উপরের স্তরের নেতৃত্বস্থানীয়রা নন, তবে তার নিচেকার স্তরের প্রায় সকলেই। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তাদেরকে তথা সমগ্র আন্দোলনকেই শেষ ছুরিকাঘাত করে আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেয়। তাই তাদের আচরনের সাথে কংগ্রোস বা মুসলিম লীগের আচরনের কোন পার্থক্যই ছিলনা। তবে একথাও সত্য যে সন্ত্রাসবাদী দলের দ্বীপন্তর-প্রাপ্ত আন্দমান ফেরত রাজবন্দীরা কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদানের পর কৃষকের আন্দোলনে গতিবেগ সঞ্চারিত হয়েছিল এবং তার সম্পত্তি ও জমি (রাজদখন্ডরুপ তাদের অনেকেরও জমি বাজেয়াপ্ত হয়েছিল, তারা সাভাবিক সামাজিক জীবন থেকে বিচ্ছিন হয়েছিলেন) হারিয়েছিলেন। তারা অনেকেই শ্রেনীচ্যুত হয়েছিলেন। কিন্তু তাদের শ্রেনী তাদেরকে সমর্থন তো দেয়ইনি। উল্টোদিকে নানা অর্থনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক ও মনস্তাত্তিক বাধাবিপত্তি সৃষ্টি করে তাদেরকে বিভ্রান্ত ও হতোদ্যম করার চেষ্টা করেছিল। অনেকাংশ তারা সফল হয়েছিল। কৃষকের তেভাগা আন্দোলনের ঘোষিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে আরো বিপ্লবী পর্যায়ে উন্নতী করে গণতান্ত্রীক বিপ্লবের প্রস্তুতি নেয়ার রাস্তা থেকে জাতীয়তাবাদীরা পেছনদিকে সরে এসেছিলেন। পরিস্কারভাবে প্রমানিত হয়ে গিয়েছিল যে কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে শ্রেনীচ্যুতি-বিহীন ক্ষুদে মালিকশ্রেনীর (সামস্ততান্ত্রীক অথবা পুঁজিতান্ত্রীক) নেতৃত্ব ব্যর্থতো বটেই, অশ্রমিকশ্রেনীর নেতৃত্বই (সংখ্যাগত ব্যাপকতা সত্বেও) সম্পূর্ণ অচল ও অর্থহীন।
মার্কস ও এঙ্গেলসের তথাকথিত কমিউনিস্ট সংগঠনগুলো তাদের ঘোষনাপত্রে উল্লেখ করে থাকে, তা কখনোই কাজের পাতা থেকে কমিউনিস্ট কর্মীর মুখে, দাবী জানানোর জন্য শ্লোগান-মুখরিত কন্ঠে ও উত্তোলিত মুষ্টিবদ্ধ হাতে উঠে আসেনি। এবং যারাই জনগনের মুক্তির সংগ্রামের সাথে ভূমির মালিকানার সমস্যা সমাধান ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে সোচ্চার হয়েছেন তারাই পার্টিতে তপংত্তেয় হয়েছেন, কোনঠাসা হয়েছেন। হঠকারী বলে গণ্য হয়েছেন। এই হল বিগত আশি বছরের কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস। ইতিহাসের এই শিক্ষা ১৯৪৭ সালে একবার তারপর ১৯৭১ সালে আর একবার সত্য হিসাবে প্রমানিত হয়। বিভিন্ন কমিউনিস্ট নামধারী পার্টির ঘোষনাপত্র ও কর্মসূচিতে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব, জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব ও বিপ্লবী গণতান্ত্রিক রুপান্তরের জন্য গ্রমজীবনের বিপ্লবী পূর্নগঠনের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু চাষিকে জমি দেওয়ার জন্য চাষিকে নিয়ে অবরোধ-মিছিলে নামা হয়নি। গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মূল ভিত্তি বা শর্ত ভূমিতে ব্যক্তিমালিকানা অবসানের জন্য ভূমি জাতীয়করন বা রাষ্ট্রায়ত্তকরনের কর্মসূচি উপস্ক্রিত করা হয়নি। বিপ্লব শব্দটা ছিল শুধু বাহারি চমকের জন্য নিত্যন্ত সাধারন শব্দ জমির মালিকানাকে যুক্ত করা হয়নি। জোতদার, অনুপস্থিত ভূস্বামী, বর্গমালিকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে চাষযোগ্য জমি রাষ্ট্র তথা জনগনের সম্পত্তিতে পরিনত করতে হলে চাষিকেই জমি পুনর্বন্দোবস্তিকরনের জন্য এগিয়ে আসতে হবে লাঠি ঠেঙ্গা লাল নিশান নিয়ে এমন কথা তারা কখনো বলেননি। আজ বড় বড় গম্ভীর শব্দ ব্যবহার করে জমির/ভূমির মালিকশ্রেনী আশি বছর পরেও প্রতারনার নতুন কৌশল দিয়ে উৎপাদক শ্রেনীকে ঠকিয়ে আরও কিছুকাল টিকে থাকতে চান। তারা চাষিকে ঋণ দেয়, প্রাথমিক চিকিৎসার ঔষধপত্রের কথা বলে প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলে আধুনিক শিক্ষা ও আধুনিক গণজ্ঞাপন (মাস কমিউনিকেশন) এর ভাষা ব্যবহার করে। কিন্তু মূল বিষয়টা তাদের সমাজ্যবাদী মহাজনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ঋণ ব্যবসা করে অনুৎপাদনের পাতিসামস্ততান্ত্রিক জীবনধারাটা বজায় রাখা।
গ্রামে ভূস্বামী ও সা¤্রাজ্যবাদীদের অনুচর এন-জি-ও দের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে এন-জি-ওদের ট্যাকটিকস, তাদের ভাষা(বুদ্ধিজীবি মার্কা পরিশীলত অথবা উচ্ছসিত ভাষা) ব্যবহার করেন তাতে করে এগিয়ে যাওয়া যায়না। মনে রাখা দরকার, কার্যত ভূমিহীন চাষিকে ভূমি দিতে হলে ভূমির সাবেকী মালিকানাকে শিকড়শুদ্ধ উপড়ে ফেলতেই হবে। পুরাতন ভূমীমালিকানা ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ ও নিশ্চিহ্ন করতেই হবে।
উপরোক্ত করনীয়ের বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ একমত পোষন করা যায়। যদিও জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও পরিবর্তন এমন স্তরে পৌছেছে কিনা যাতে তাকে বিপ্লব (হোক সে অসমাপ্ত শব্দটির অর্থ বলা যায় সে বিষয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। সুতরাং অসমাপ্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব টার্ম টি/ আরও পরিষ্কার ব্যাখ্যা করে বলা দরকার।
(২)
শ্রমিক ও কৃষকদের বিপ্লবী গণতান্ত্রিক একনায়ত্ব এবং শ্রমিক কৃষক ও বিপ্লবী গণতান্ত্রীদের একনায়কত্ব এক জিনিষ নয়। প্রথমটার মধ্যে বিপ্লবী গণতন্ত্রীদের একনায়কত্ব এক জিনিষ নয়।প্রথমটার মধ্যে বিপ্লবী গনতান্ত্রীক একনায়কত্বের অংশীদারীত্ব ও পরিচালনায় কেবলমাত্র দুইটি শ্রেণী যথা শ্রমিক ও কৃষকের কথা বলা হয়েছে। আর দ্বিতীয়টিতে শ্রমিক ও কৃষক ছাড়াও আর একটি শ্রেণী বা গোষ্ঠী, যারা সাধারনত পোটিবুর্জোয়া, পেটিফিউডল অথবা উভয়ের জটপাকানো সামাজিক গোষ্ঠী থেকে আগত, তারা রেয়েছে। আর এই শেষোক্ত সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে বুদ্ধিজীবিরা পড়ে। তারা বিপ্লবী চিন্তায় পরিশীলিত হয়ে বিদ্যামান আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তনের কর্মসুচীতে অংশগ্রহন করতে আসেন ব্যাক্তিগতভাবে কিন্তু তার পারিপার্শ্বীক অবস্থার কারনেই বিপ্লবী কার্যক্রম থেকে সরে পড়েন অথবা বিশ্বাসঘাতকতা করেন সামাজিক গোষ্ঠীগতভাবেই, ব্যক্তিগতভাবে নয়। কিন্তু শ্রমিক যখন বিপ্লবী কর্মসুচীতে আসে তখন ব্যক্তিগতভাবে নয় শ্রেণীগতভাবেই আসে। তারা শ্রেণীগতভাবে শ্রেণীর সাথে কোন বিশ্বাসঘাতকতা করেনা। বিষয়টি আর একটু পরিষ্কার করে বলা দরকার।বিপ্লবী গনতান্ত্রীক একনায়কত্ব হল শ্রমিক কৃষকের একনায়কত্বের একটা রুপ। কিন্তু শ্রমিক কৃষকদের একনায়কত্বের সাথে শরিক হতে মালিক শ্রেণী অথবা তাদের প্রতিনিধিরা আপাত বিপ্লবী গনতান্ত্রী সাজে। যখন সময় ও সুযোগ পায় তখন বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে।তখন বুঝা যায় যে বিপ্লবী গনতন্ত্রে শ্রেণী-শক্তি সমাবেশে শ্রমজীবী শ্রেণীর সাথে মালিক শ্রেণীর প্রতিনিধিদের সমপর্যায়ে অবস্থানের সুযোগ রাখা হয়েছে। পুস্তিকায় ..... আমাদের মত একটি কৃষি প্রধান অনুন্নত পুঁজিবাদী দেশে কমিউনিস্টদের গনতান্ত্রীক ও সমাজতান্ত্রীক উভয় কর্তব্যই পালন করতে হবে..... বুর্জোয়ারা এ কাজ সমাধা না করার কারনেই আমাদের এ দায়িত্ব পালনে অগ্রণী হতে হচ্ছে।..... সুতরাং ধরে নেয়া যায় য়ে জাতীয় গণতান্ত্রীক বিপ্লবে শ্রমিক শ্রেণী কেবলমাত্র নিজেদের শ্রেণী দ্বারাই নয় অন্য শ্রেণীসমুহ যথা কৃষক ও পেটিবুর্জোয়া বিপ্লবী গণতান্ত্রী ( উৎপাদন উপায়ের মালীকানাহীন বুদ্ধিজীবি ও ক্ষুদে উৎপাদনের মালীকশ্রেণী) দের সাহায্য নিয়েই জাতীয় গনতান্ত্রীক বিপ্লব সম্পন্ন করবে। কৃষক যেহেতু একধরনের ক্ষুদে মালিক, তাই সেও জাতীয় গণতান্ত্রীক বিপ্লবে অংশীদার হবে--- এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হওয়া যায়। সুতারাং জোতজমার ব্যক্তি মালিকানার অবসানে কৃষকদের মধ্যেকার ক্ষুদে মালিক গোষ্ঠী অংশগ্রহন করবে কিনা তা গভীরভাবে বিচার বিশ্লেষন করে দেখা প্রয়োজন। কারন কৃষকদের মধ্যে ধনী কৃষক যেমনি রয়েছে তেমনি প্রান্তিক চাষীও রয়েছে। শ্রমিক ও কৃষকের বিপ্লবী গনতান্ত্রীক একনায়কত্ব-কে যদি জাতীয় গনতান্ত্রীক বিপ্লবের মাধ্যমে জোতজামির ব্যক্তিমালিকানার অবসান করতে হয়, তাহলে তাকে শ্রমিক ও কৃষকের--- না বলে শ্রমিক ও চাষীর বিপ্লবী গনতান্ত্রীক একনায়কত্ব বলাই শ্রেয়। আর একটি কথা। শ্রমিক কৃষক ও বিপ্লবী গনতন্ত্রী শব্দনিচয়ে উল্লেখিত বিপ্লবী গনতন্ত্রীদের মধ্যে যেহেতু ক্ষুদে মালিকেশ্রেণীর অবস্থান রয়েছে, সুতরাং যেখানে কৃষক শব্দ ব্যবহারের ও কোন প্রয়োজন নেই। কৃষক এর বদলে চাষী শব্দ ব্যবহার করাই সমীচীন। কারন সমগ্র কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় কৃষক একটি সাধারন শব্দ। এতে জোতদার-ধনীকৃষক থেকে শুরু করে ধনী কৃষক, মাঝারী কৃষক, গরীব কৃষক ও প্রান্তিক চাষী পর্যন্ত সবাই রয়েছেন।
বর্তমান আলোচনায় শ্রমিক ও কৃষকের বিপ্লবী গনতান্ত্রীক একানায়কত্ব এবং শ্রমিক-কৃষক ও বিপ্লবী গনতন্ত্রীদের একনায়কত্ব যেহেতু এক ধারনা নয় বলে প্রমান করার চেষ্টা করা হয়েছে যেহেতু দুইটি শব্দনিচায়কে সমার্থক না করে আলাদা ভাবে উল্লেখ করাই যুক্তিসংগত। অর্থাৎ দুইটি শব্দনিচায়ের মাঝখানকার সংয়োগসুচক অব্যয় < বা > এর বদলে < এবং > ব্যবহার করাই সংগতিপুর্ন।
< জোতদার-মহাজন সহ ধনী কৃষকদের শ্রেণীগত অস্তিত্ব তথা সামাজিক প্রক্রিয়ার এরদর (১) নিয়ন্ত্রন ক্ষমদা বিলুপ্ত করতে হবে(পৃষ্ঠা নং ৩)>এবং< বাজার (২) বা প্রতিযোগীত্র মাধ্যমে পুনরায় নতুন ভাবে শ্রেণীবৈষম্য গড়ে উঠার (৩) সুযোগ না থাকে অর্থাৎ পুনরায় যাতে নব্য ধনী কৃষক সহ জোতদার-মহাজনের সৃষ্টি হতে না পারে তা (৪) নিশ্চিত করতে হবে > এই বাক্য দুটিতে চারটি বিষয়ের প্রতি নজর দেয়া দরকার
প্রথমত অর্থনীতির চরম বহিঃপ্রকাশ বা ঘনিভূত রুপ হল রাজনীতি কিন্তু বিপরীতে অর্থনীতিকেই নিয়ন্ত্রন করে রাজনীতি। সুতরাং নিয়ন্ত্রন ক্ষমতাটা রাজনীতির হাতে। জোতদার-মহাজন সহ ধনী কৃষকের নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা বিলুপ্ত করতে হলে এদের রাজনৈতিক ক্ষমতাকেই বিলুপ্ত করতে হবে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্ষমতা বলতে বুছায় স্বেচ্ছা-তান্ত্রীক উপায়ে শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা। আর শক্তি প্রয়োগ অর্থই হল সশস্ত্র শক্তিপ্রয়োগ। গ্রামাঞ্চলে তেমন সশস্ত্র-শক্তিধর রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তার অধীনে আট দশ জন দফাদার-চৌকিদার আছে যারা যে কোন মুহুর্তে যে কোন ব্যক্তিকে ধরে বেঁধে নিয়ে আসতে পারে। এ জন্য তাকে অবশ্য থানার সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়। গ্রামঞ্চলে সর্বোচ্চ সশন্ত্র ক্ষমতাই হল থানা। কিন্তু থানার দারোগা-পুলিশ যেহেতু স্থানীয়ভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা তথা কৃষি অর্থনীতির সাথে যুক্ত নয়, সে হেতু গ্রামাঞ্চলে জোতদার-মহাজন -ধনীকৃষকই হল রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতিভু। কারন নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেদার টাকা খরচ করার মাধ্যমে জোতদার-মহাজন-ধনীকৃষকরাই শতবরা পচানব্বুই ভাগ ক্ষেত্রে চে?য়ারস্যান নির্বাচীত হয়। এই চেয়ারম্যান-মেম্বরগন শুধুমাত্র সাধারন অপরাধী নয় রাজনৈতিক অপরাধী অর্থাৎ প্রচলিত উৎপাদন-ব্যবস্থার রাজনীতির বিরোধী ব্যক্তিদের সম্পর্কে থানাকে নিয়মিত তথ্য সরবারাহ করে থাকেন। আবার জোতদার-মহাজন-ধনীকৃষক-বর্গামালিক রুপে ভুমি-মালিক হিসাবে ভুমি মালিকানার সূত্রে,ভুমি-মালিকদের সাথে গোষ্ঠীগত অথবা রক্তবংশ সম্পর্কে সম্পর্কীত হয়ে অথবা তাদের স্বার্থে স্বার্থ সম্পর্কীত হয়ে জাতীয় আইন প্রনয়ন সংস্থার সদস্য বা কুশীলবে নির্বাচীত ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন।তারা নিজেদের স্বার্থে আইন তৈরি করেন। এইভাবে তারা রাষ্টীয়ক্ষমতায় অংশগ্রহনের যোগসুত্র বা মই ব্যবহার করে আংশীকভাবে রাষ্টীয় ক্ষমতার অংশীদারী হন। গ্রামঞ্চলে বর্তমানে তারা একচ্ছত্র রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী।জোতদার-মহাজন-ধনীকৃষক এবং গ্রামের সাথে উপরোক্ত যোগসুত্রসম্পন্ন ব্যক্তিরাই রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী। এদের যোগসুত্র বা মইটা কেড়ে নিতে হবে। সাংবিধানিক আইন করতে হবে যাতে স্থানীয় বা আঞ্চলিক পরিষদে মাত্র এক-পঞ্চমাঙশ সদস্য তাদের মাধ্য থেকে নির্বাচীত হবে কিন্তু প্রধান পদে নির্চাচীত বা পদাধীকারী হতে পারবেনা,সর্বোচ্চ জাতীয় পরিষদে নির্বাচীত হওয়ার অধিকার বিলুপ্ত করতে হবে। কোন সেনাবাহিনী প্রধান বা প্রতিষ্ঠান প্রধান ভুমিমালিকাশ্রেণীর মধ্য থেকে নিযুক্ত হওয়ার অধিকার বিলুপ্ত করতে হবে। সকল উপায়ে তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতালাভের পত বন্ধ করতে হবে। তাতে করেই নতুন ধনীকৃষক-জোতদার-মহাজন সৃষ্টির সম্ভাবনা কিছুটা দুরীভুত হতে পারে। উপরোক্ত বিষয়গুলো কৃষি করনীয়-তে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা দরকার। প্রথম, তৃতীয় ও চতুর্থ পয়েন্ট আলোচনা করা হল। < গ্রামীন অর্থনীতিতে বাজার বা প্রতিযোগীতার মাধ্যমে > শব্দ সমষ্টিতে বাজার ও প্রতিযোগীতা ধারনা দুটির একটিকে বা শব্দ দ্বারা আর একটির বিকল্প হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কারন বাজার সব সময়ই প্রতিযোগিতামূলক। একচেটিয়া বাজার প্রতিযোগিতাকে হ্রাস করে করে নিঃশেণ করে একচ্ছত্র হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু সত্যিকারের মুক্ত বাজার প্রতিযোগীতামুলক হওয়াই স্বাভাবিক। বাজারের প্রতিযোগিতার ডামডোলে/ ক্রিয়ার বা প্রক্রিয়ায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজি ধংশ হয়ে যায়। বড় পুঁজি আরও বড় হয়। একচোটিয়া হয়। কিন্তু বাজার ছাড়া প্রতিযোগিতা যে অন্য সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় বা ব্যবস্থাপবায় থাকবেনা বা থাকতে পারবেনা এমন ধারনা যুক্তিসংগত নয়। বাজার ছাড়াও অর্থব্যবস্থার কোন কোন ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। যেমন একটি কৃষি খামার আর একটি কৃষি খামারের সাথে উৎপাদন উন্নয়নের বিষয়ে প্রতিযোগিতায় নামতে পারে। কোন খামার কত বেশি উৎপাদন করতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলতে পারে। রুশ,চীন, কোরিয়া,কিউবা ও ভিয়েৎনামে যে সপল পরীক্ষা ও প্রচেষ্টা চালানো হয়েছেল এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য। ব্যর্থতার কারনটা নিহিত শ্যমিক শ্রেণীর পার্টির সাংগঠনিক সমস্যার মধ্যে,উৎপন্ন দ্রব্যের বন্টন-প্রক্রিযায় অদক্ষতার দধ্যে এবং সর্বোপরি সমাজতান্ত্রীক নীতিমালা অনুসরনে দ্বিধাগ্রস্ততা ও অপাগতার মধ্যে। সর্বহারা শ্রমিক শ্রেনী নিজ দেশের প্রাকপুজিঁবাদী শোষক ও পুজিঁবাদী শোষকদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তত্ব ও কৃৎকৌশল-জ্ঞানে নিজেদেরকে ণিপুণ করে তুলতে পারেনি, আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদীদের দ্বারা আন্তর্জাতিক পরিসরেও তেমনি আক্রান্ত ও আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে। তার চেয়ে বেশী আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে সংগঠনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা পুঁজিবাদী শোষকদের প্রতিনিধিদের নিকট থেকে)। অকএব বাহার থাকবোনা, কিন্তু প্রতিযোগিতা থাকবেই অবৈর প্রতিযোগীতা মধ্যে থাকে ব্যক্তি-মানুষের দক্ষতা উন্নয়ন-প্রয়াসের ও তার ফলাফলের যাচাই বা পরিমাপের একটি আকাংখা। এই আকাংখা। এই আকাংখা সর্বজনীন। এতে হিংসা থাকেনা, হিং¯্রতা থাকেনা। ক্রীড়া-নৈপূন্য বাড়ানো অথবা সুকুমার বৃত্তির উৎকর্ষ সাধনে যেমন হিংসা অথবা হিং¯্রতার কোন অবকাস থাকে না। সুতরাং প্রতিযোগীতাকে বাজারের বিকল্প হিসাবে উপস্থাপন না করে বাজারকে(অবশ্যই পুজিঁবাদী বাজার) এক ধরনের একটি সংগঠন এবং প্রতিযোগীতাকে মানবীয় স্বভাব ও কর্মকান্ডের প্রক্রিয়া হিসাবে বিবেচনা করা উচিত। < বাজার বা প্রতিযোগিতা> শব্দগুচ্ছ থেকে <বা> শব্দটি বাদ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হল। এখানে বা তার বদলে < বাসার প্রতিযোগিতা বলাই শ্রেয়> ৪৩ নং পৃষ্ঠার চতুর্থ অনৃচ্ছেদেরে সপ্তম লাইন < কখনও কিছু ছাড় দেওয়ার অর্থ> শব্দ সমষ্টির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নিশ্চিত দিয়ে বলা হয়েছে যে < এ নয় যে মূল লক্ষ্য থেকে আমরা দূরে সরে যাব>। জাতীয় ভাবে এবং নীতিগত ভাবে যখন জমির জাতীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠাকেই মূল লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে, তখন দূরে সরে না যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত দেওয়ার প্রশ্নই উঠেনা, কারন একটা মূল লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যহীন একটা নিতান্তই সাময়িক ব্যাবস্থার জন্যই সমগ্র ব্যবস্থা বিষয়ক নীতিগত প্রশ্নটি (যা ইতোমধ্যেই মীমাংসিত) সাময়িকভাবে হলেও পূর্ণবিবেচনার প্রয়োজন ও অবকাশ নেই। কারন পৌরনিক কাহিনী বেহুলা-লক্ষিন্দরের লোহার বাসরে সুত্রধরের রেখে দেওয়া ছিদ্র দিয়ে যেমন সাপ প্রবেশ করতে পারে। সুতরাং<যে লক্ষ্যে সরে যাবে।> বাক্যটি পরিহার করাই উচিত বলে মনে হয়। পূর্নরুপ গড়ে উঠা শ্রমিক শ্রেনীর পার্টিই অবস্থার প্রেক্ষিতে ঠিক করবে এ ধরনের বাক্য/বক্তব্য/ থাকবে কি থাকবেনা।
১৭ নং পৃষ্ঠার প্রথম অনুচ্ছেদে জমি ব্যবহারের জন্য যে করণীয়গুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনি ভাবে রাষ্ট্রের সমস্ত ভূমি ব্যবহারের ব্যাপারেও করনীয় নির্ধারন করতে হবে। কৃষি করনীয়টা গ্রামাঞ্চলের সকল ভূমির সাথে সম্পর্কীত। সুতরাং গ্রামঞ্চলে কেবল কৃষি কাজ নয়, জনসাধারনের জন্য প্রয়োজনীয় এজমলি বা যৌথ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ভূমি ব্যবহারের লক্ষ্যে গ্রামাঞ্চলে (শহরাঞ্চলেও) ভূমি সম্পর্কীয় করনীয় নির্ধারন করা দরকার। গ্রামীন কৃষি অর্থনীতির অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় সংস্থা বা পরিষদের অফিস, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, বাজার, যানবহন ষ্টেশন, বিশ্রামাগার (মালিক শ্রেনী লক্ষ কোটি টাকা আয় করেও যাত্রী ও বাস শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণ করেনা), পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা, শস্য গুদাম, ঠান্ডাঘর কোন্ড স্টেরেজ), সাধারন ও প্রযুক্তি বিদ্যালয় ইত্যাদি অত্যন্ত প্রয়োজন। অথচ জমির অভাবে এগুলো নির্মান বা স্থাপন সম্ভব হয়না। আজকাল কেউ ভূমি দান করতে চায়না। অনেক সময় ব্যক্তিগত জমিও বিক্রি করতে চায়না। শহর ও নগরের অবস্থাও জটিল। খাস জমি বা সরকারের নিজস্ব জমির অভাবে এখানে স্যানিটারী ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়না। এ রকম পরিস্থিতিতে গ্রাম ও শহরের সকল ভূমি জাতীয়করন ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নাই। অবশ্য একথা ঠিক যে একটা আমলাতান্ত্রীক ব্যবস্থা গড়ে উঠার সম্ভাবনা ছাড়া থেকে যায়, তবে চাষী ও মজুরের সংঘবদ্ধ তৎপরতাই এই আমলাতন্ত্রীকতাকে প্রতিরোধ করতে হবে। রাশিয়াতে পেপিবুর্জোয়া ও ফিউডাল শ্রেনী থেকে আগত আমলা ও প্রকৌশলীরাই চাষী ও ক্ষেতমজুরদের সংঘবদ্ধ তৎপরতাকে সব সময় ভেতর থেকে সাবোটাজ করে। শিল্প-শ্রমিকদের পার্টির নেতৃত্ব শক্তিশালী ক্ষেতমজুর ও চাষী সংগঠন গড়ে তোলার বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করে তাই একান্ত প্রয়োজন ও কর্মত্যপরতার।
অন্যান্য রচনায় মত এই রচনাটিতেও সাম্যবাদী চিন্তানায়কদের রচনা থেকে অনেক উদ্বৃতি দেয়া হয়েছে। ফলে এর বেশী সংখ্যক উদ্ধৃতির জন্য অনেকের কাছে তা দুখপাঠ্য (অথবা কষ্ট পাঠ্য) মনে হতে পারে। নন্দন সাহিত্যের মিনিমাম মান বিবেচরায় তা কেবল দুখপাঠ্যই নয়, কষ্ট পাঠ্যও বটে। এটা স্বীকার করা যায়। তবে গরজ বড় বলাই। ১৮৮৫ইং সনে প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার পর, ১৯৪০ সনে জোতদারী ও বর্গাদারী ব্যবস্থা বিলোপ সংক্রান্ত কৃষি সংস্কার বিষয়ক ফ্লাউড কমিশন রির্পোট প্রকাশের পর, ১৯৫০ সনে জমিদারী উচ্ছেদের পর, ২০০০ ইং সন পর্যন্ত দীর্ঘ সময়। একশত বছরেরও বেশী আরও পনের বছর। কমবেশী একশত বছর ধরে কমিউনিস্ট আন্দোলন বিকাশের পর চাষীর কাছে জমি ২তরিত হয়নি। এটাই প্রকৃত সত্য জমির জন্য চাষীকে যাতে লড়তে না হয়, জমির জন্য লড়াইয়ে যাতে সে সংগঠিত না হয় তার জন্য এই বিষয়টা থেকে চাষীদের দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে রাখার জন্য জমিদার, তালুকদার, জোতদার, বর্গমালিক, ধনীকৃষক শ্রেনী থেকে আগত আমলা বুদ্ধিজীবিরা নানান টালবাহানা করে যাতে আরও কিছুকাল মামার বাড়ির সুখ ও আবদার বজায় রাখা যায় সেই চেষ্টা করে।
নিজেদের ও মামার বাড়ীর আম খেতে ও আনতে গিয়ে হিসাব করে চলা ভাল। তা না হলে আম ও ছালা দুটোই হারানোর একশত ভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। ভূস্বামী সর্ম্পকের সাথে সম্পর্কৃত পেটিবুর্জোয়ারা (বুদ্ধিজীবি সহ) যাতে ভূমীর আর্থীক মূল্যমান শিল্প ও তার অবকাঠামোগত বিনিয়োগ কর্মকান্ডে স্থানান্তর করেন এটাই সকলের প্রত্যাশ্যা। এটাই তাদের জন্য বিপ্লবী কাজ। জাতীয়করনের মাধ্যমে জমির সাধারন মালিকানা পতিষ্ঠার অনুকূলে মার্কস, এঙ্গেলস, লেলিন ও মা ওসে তুং এর উদ্ধিৃতি-সংবলিত রচনার জন্য লেখককে ধন্যবাদ। এখন জমির সাধারন মালিকানা প্রতষ্ঠিার লক্ষ্যে জমির জাতীয়করন আন্দোলন সংগ্রামের প্রস্তুতি নেয়ার সময়। আমরা কায়িক ও মানসিক সহ সকল ভূমিহীন মেহনতি মানুষকে এই প্রস্তুতি নেয়ার ডাক দিয়ে যাই। তনয় /