চট্টগ্রামের হালিশহরে দুই লক্ষ টাকা যৌতুক না পেয়ে গৃহবধূ শারমীন আক্তারকে তাঁর স্বামী ইসমাইল হোসেন রুবেল দফায় দফায় মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে। উক্ত নির্যাতন সহতে না পেরে গৃহবধূ শারমিন পিতার বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। এরই মধ্যে রুবেল মাটিরাঙ্গার তবলছড়িতে দ্বিতীয় বিয়েও করেছেন বলে জানাগেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় বর্তমানে শারমিনকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন পাষন্ড ওই স্বামী। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ০৪ অক্টোবর দুপুরে এই ঘটনায় হালিশহর থানায় জিডি করা হয়েছে। জিডি নং-১৪৩।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানাগেছে, বরগুণা জেলার পাথরঘাটা থানার চরধানি এলাকার মো. সেলিমের মেয়ে শারমিন আক্তারের সাথে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা থানার ২নং তবলছড়ি ইউনিয়নের নজির আহামদের পুত্র ইসমাইল হোসেন রুবেলের সাথে গত ১৭/০১/২০১৭ইং বিয়ে সম্পন্ন হয়। ওই বিয়ের তিন দিন পূর্বে শারমিনকে রুবেল অপহরণ করেন। এরপর তাদের জোরপূর্বক বিয়ে হয়। এই বিয়েতে সহযোগিতা করেন তবলছড়ির শাহাদাত, পিতা-এয়াকুব আলী, কামাল, পিতা-তৈয়ব আলী, সোহেল, পিতা- নজির আহামদ, রুবেলের পিতা-নজির আহামদ, হাফিজ, পিতা-আতরের রহমান। এরমধ্যে নজির আহামদ এলাকায় নজির ডাকাত নামেই পরিচিত। অপরদিকে হাফিজ হচ্ছেন রুবেলের দ্বিতীয় স্ত্রীর পিতা। এরা সবাই গ্রামে নানা ধরণের অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে বলে গ্রামবাসী জানিয়েছেন। এই ঘটনায় নিরুপায় হয়ে শারমিনের পিতা মো. সেলিম পরবর্তীতে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে আসবাবপত্রসহ দুই লক্ষ টাকার মালামাল প্রদান ও এক লক্ষ আশি হাজার টাকা মূল্যের সম্পত্তি মেয়ের স্বামী রুবেলের নামে লিখে দেন। পরবর্তীতে স্বামী রুবেল শারমিনের পিতার নিকট একটি সিএনজি গাড়ী ক্রয়ের জন্য দুই লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করেন। এই যৌতুকের টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় শারমিনের ওপর স্বামী রুবেলের চলে নানা সময় নির্যাতন।
বিগত ০৩/০৯/২০১৬ইং খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা থানার ০৩নং বড়নাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী আকবর স্বাক্ষরিত শারমিনের জন্ম নিবন্ধনে দেখা যায় বিয়ের সময় শারমিনের ১৪বছর পূর্ণ হয়। কিন্তু পাশ্ববর্তী ২নং তবলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল কাদের জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে শারমিনের ২০বছর পূর্ণ হয়েছে মর্মে একটি জন্ম নিবন্ধন দেয়। যা মিথ্যা। শারমিন আক্তারের বিয়ের পর স্বামী রুবেলের বাড়ী তবলছড়ির আদর্শ গ্রামের ঠিকানায় জাতীয় পরিচয়পত্রও নেওয়া হয়। শারমিনের আইডি নং-৮২৫৫৯১৩০১৭। সূত্র জানায়, একপর্যায়ে নির্যাতন সইতে না পেরে চলতি বছর গৃহবধূ শারমিন স্বামীর বাড়ী থেকে তাঁর পিতার বর্তমান বাসা হালিশহরের সবুজবাগ খানবাড়ী রোড়ের ভাড়া বাসায় আশ্রয় নেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই বাসায় গত ০৫/০৬/২০২০ইং রাতে স্বামী রুবেল কৌশলে ঢুকে পড়েন। এরপর গৃহবধূ শারমিনের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলা চালায়। এসময় শারমিনের মাতা মিনারা বেগম মেয়েকে বাঁচানোর জন্য আত্মচিৎকার শুরু করেন। এতে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসার আগেই স্বামী রুবেল সেখান থেকে পালিয়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে শারমিনের পরিবার জানতে পারেন; রুবেল তবলছড়ি এলাকায় আরেকটি বিয়ে করেছেন। এই খবর পেয়ে শারমিন রুবেলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে রুবেল শারমিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
রুবেল শারমিনকে তাঁর পিতা মো. সেলিমের ০১৫৫৩-১৩৪৬৬৭ মোবাইল নাম্বারের ফোন দিয়ে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। এতে শারমিনকে তুলে নিয়ে লোকজন দিয়ে গণধর্ষণের পর লাশ গুম করবে বলে রুবেল শারমিনকে প্রতিনিয়ত শাসাচ্ছেন। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন শারমিন এবং তাঁর পরিবার। মো. সেলিম জননেত্রী সৈনিকলীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এবং চট্টগ্রাম সিটি রিক্সা শ্রমিকলীগের (রেজি: নং- ২১০৩) সভাপতির পদে আছেন। এছাড়াও তিনি বহু সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত। মেয়ের এমন অবস্থায় তিনি খুবেই মর্মাহত হয়েছেন। এই ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি করেছেন উক্ত সংগঠন দুটির নেতারা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এক প্রতিক্রিয়ায় গৃহবধূ শারমিন আক্তার কান্না জড়িত কন্ঠে শীর্ষ অনলাইন সংবাদ সংস্থা এফএনএসকে বলেন, আমার বখাটে স্বামী রুবেলের অত্যাচারের আমি অতিষ্ট। তাঁকে আমার পিতা দুই লক্ষ টাকা যৌতুক না দিতে পারায় এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। এখন আবার হত্যার হুমকিতে আমি এক সন্তান নিয়ে চরম উৎকন্ঠায় আছি। আমি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজি, র্যাবের মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম পুলিশের ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারের নিকট রুবেলকে দ্রুত গ্রেপ্তারসহ ন্যায় বিচার কামনা করছি।