সরাইলের পাকশিমুলে জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে বৃদ্ধা সেলেনা বেগম (৬০) হত্যার ঘটনায় গত সোমবার সরাইল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের স্বামী আহত কিতাব আলী (৬৫) বাদী হয়ে মামলায় ৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১০ জন সহ মোট ১৯ জনকে আসামি করেছেন। পুলিশ প্রধান আসামি মো. বরকত আলী (৩৫) সহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের রক্ষা করতে ঘটনার পর থেকেই তদবির শুরূ করেছেন কিছু প্রভাবশালী।
মামলা, নিহতের স্বজন ও সরজমিনে জানা যায়, বরকত আলী ও কিতাব আলীর বাড়ি একই সীমানায়। বরকত আলীরা বিশাল অর্থ বিত্তের মালিক। প্রায় আড়াই শতক জায়গায় কোন রকমে গিজাগিজি করে বসবাস করছেন কিতাব আলী। তার পাশেই আপন ছোট ভাই প্রবাসী শের আলমের ঘর। গত ২৯ বছর ধরে জায়গা জমি নিয়ে বরকত ও মোতালিবদের সাথে কিতাব আলীর মামলা মোকদ্দমা চলে আসছে। ৬ সন্তানের জনক কিতাব আলী শুধু স্ত্রীকে নিয়েই ওই বাড়িতে থাকেন। কারণ মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। আর ছেলেরা থাকেন বাহিরে। ঘটনার রাতে ছোট টিনের ঘরের ছোট একটি কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন কিতাব আলী ও সেলেনা বেগম। বাকি ৩ টি কক্ষে কেউ ছিল না। কিতাব আলী জানান, গভীর রাতে (১২.৩০) মোতালিব মিয়া তাকে ডাকছেন। দরজা খুলে দেখেন মোতালিবের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন ঘরের সামনে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা কিতাব আলীর উপর হামলা চালায়। স্বামীকে রক্ষা এগিয়ে আসেন স্ত্রী সেলেনা বেগম। স্বামীকে জাবরাইয়া ধরিয়া রাখেন। এই সুযোগে ধারালো দা দিয়ে সেলেনা বেগমের মাথার পেছনে উপরিভাগে কুব মারিয়া গুরূতর জখম করে। কয়েকজন সেলেনার গলায় চিপিয়া ধরিয়া শ্বাসরোধ হত্যার চেষ্টা করে। এতে সেলেনা গুরূতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান কিতাব আলী। ছোট ভাইয়ের স্ত্রী মরিয়ম বেগম সেলেনার গলার ঘেরঘের শব্দ শুনে চুর ভেবে ভয় পেয়ে যান। পরে মুঠোফোনে পরিচিত কিছু লোককে ডেকে আনেন। লোকজন এসে দেখেন ঘরের পাশে কিতাব আলী ও সেলেনা বেগম পড়ে আছেন। মাথায় পানি দেওয়ার পর কিতাব আলীর জ্ঞান ফিরলেও সেলেনা বেগম লড়ছেন না। জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরাও বলেছেন ঘটনাস্থলে অথবা পথিমধ্যে সেলেনার মৃত্যু হয়েছে। রাতেই কিতাব আলী ও মোতালিবকে নেওয়া হয় পুলিশ হেফাজতে। পরের দিন সোমবার সকালে বরকত আলী, জুম্মত আলী (৫৮) ও হযরত আলী (৪৫) তারা তিন ভাইকে পুলিশ আটক করেন। গত সোমবার দুপুরে মামলাটি নথিভূক্ত হয়। প্রধান আসামি বরকত আলী, জুম্মত আলী, মো. মোতালিব মিয়া ও মো. ফরজ আলী (৪৫) আপন চার ভাইকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। সরজমিনে গেলে বরকত আলীর স্ত্রী সহ স্বজনরা জানায়, এই হত্যাকান্ড সম্পর্কে তারা কেউ কিছুই জানেন না। নিরপরাধ লোকজনকে জেলে পাঠানো হয়েছে। এটা তাদের বিরূদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক লোক বলেন, তাদের মধ্যে জায়গার বিরোধটাই মূল সমস্যা। আর হত্যাকান্ড সম্পর্কে আমরা কোন মন্তব্য করে বিপদে পড়তে চাই না। সরাইল থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) এ এম এম নাজমুল আহমেদ বলেন, মামলার প্রধান আসামি সহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। ঘটনার মূল রহস্য উৎঘাটনে তদন্ত ও অন্য আসামীদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।