সে দিন বিস্যুদবার গাড়ী থেকে নেমে রিকশা করে সোজমুখী নৌকাঘাটে চলে এলাম। এক চার দোকানে অপেক্ষা করেছিলাম। আরও যাত্রী আসবে। এক সাথে যাবো। পাঁচজন এলো পাঁচ টাকায় ঠিক হলো নৌকা। আমি বললুম আমিও যাবো। হলো ছয়জন। শেষে একজন এলেন, হলো সাতজন। সাতজন মিলে পাঁচ ঘন্টার পথ পাড়ি দেয়া হাতে আমার রবীন্দ্রনাথের “বিসজন’ নাটক। ওরা তাস খেলে কাটাবে। কিন্তু তাস নেই খেললোনা ওরা। বসে বসে গল্প করা ছাড়া উপায় নেই। চল্লিশের উপরে বয়স এক লোক গল্প ফাঁদলেন। যাত্রীদের মাসে তিনজন সিলেট থেকে আগত। হিন্দু বনিক বরযাত্রী। একজন একোয়ার্ড এষ্টেটের তহ শিকদার। গল্প বলা লোক আনছার। ঢাকায় চাকুরী করে। গল্প শুরু হলো এক শাহযাদা-শাহযাদা মানে রাজার পুত-পন করে বসলো সে বিয়ে করবেনা। সে বিয়েই করবেনা। রাজা তো মহা দুশ্চিন্তায় পড়লেন। কি করা যায়। ছেলে যখন বিয়েই করবেনা তখনতো আর বসে থাকা যায় না এর একটা উপায় খুঁজেবের করতেই হবে। কেন যে বিয়ে করবেনা তার কারন জানতে হবে। ডেকে পাঠালেন শাহযাদার বন্ধুকে কি মিয়া তোমার বন্ধুর কি খবর” বন্ধু বললো “কি খবর চান” বলি তোমার বন্ধু যে বিয়ে করতে চায় না তার কি খবর। রাত্রি-সাড়ে সাতটা। বসে বসে পত্রিকা পড়ছিলাম। টি,আই বাবু এসে হাজীর হলেন। বরুহা গিয়েছিলেন। দু এক কথার পর কাগজে ‘অরবিন্দ’ একথাটি লিখে জিজ্ঞেস করলেন- “একে চেনেন?” বলুন তো কে? বললাম চিনবনা কেন? অরবিন্দ নামটা আমার কাছে খুব পরিচিত। পঞ্চম শ্রেনী থেকে দশম পর্যন্ত আমার সহপাঠী ছিল অরবিন্দ সরকার। তারপর কলেজ জীবনে আমার সহপাঠী অরবিন্দ সরকার। তাছাড়া আরেকজন আছেন- সে ঋষ্টি অরবিন্দ সরকার। বাংলাদেশে গোপন সন্ত্রাসবাদী দলের অত্র নামতা ও সংগঠক অরবিন্দ সরকার। আজকে হঠাৎ আপনার একথা মনে হল কেন? না এমনিই মনে হলো বলে হেসে দিলেন। ছোট সময় আমার চেহারাটা নাকি ছিল ঠিক ঋশি অরবিন্দের মতো। সে প্রসঙ্গ থাক খানিকখন বাদে টি,সি ও সাথে এলেন। ইরি ধানের কথা উঠলো তারপর উঠল পাটের কথা। আমার অভিমত আবার ব্যক্ত করলাম। ইউনিয়নে ইউনিয়নে সমবায় সমিতির সারারাত পাট কনো হলে কৃষকের অর্থকারী ফসলের দামের সমস্যার একটা সমাধান হতে পারে। টি.মি.ও সাহেব বললেন যে না সেটা সম্ভব নয়। কারন সরকার উপযুক্ত সমবায় সমিতি ব্যতিত অন্য সমিতিকে দমন দিতে পারে না- যার দ্বারা পাট কেনা যায় আর উপযুক্ত সমবায় যদি পড়ে উঠবে জনগনের স্বতস্ফূর্ত প্রচেষ্টার ফলে বললাম কতদিনে গড়ে উঠবে সমবায় সমিতি বললেন যে উপযুক্ত অস্তিত্ব বিলুপ্ত প্রায় একথা মনে হতো ভারী খারাপ লাগতো। অনেক রজনী বিনীদ্র পোহাতে হতো। ধনী দরীদ্রের বৈষম্য দূরীকরণ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে চিন্তা করতাম। এর আগে আওয়ামী লীগের কথা শুনেছি এবং ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ পার্টির কথা শুনেছি। ন্যাশনাল আওয়ামী লীগের পার্টিকে সমর্থন করতাম। ময়মনসিংহের ন্যাশনাল আওয়ামী লীগের পার্টির কর্মীদের দূর থেকে শ্রদ্ধা করতাম যদিও এদরে কারো সাথে ব্যক্তিগত পরিচয় দূরে থাক কাছে গিয়ে দু একটা কথা ও বলিনি। রামপন্থী বইগুলো পড়তে ভালো লাগতো টীন দেখে এলাম পড়ে ভালো লাগলো এবং এমন আরো কয়েকখানা। সাম্প্রদায়ীকতার জন্য মাসীক মোহাম্মদী পত্রিকাটিকে ঘৃনার চোখে দখতাম তেমনি আজাদকে। পত্র পত্রিকার ভক্ত ছিলাম এমন করে একদিন হাতে এলা সমকাল পত্রিকাখানা ভালো লাগলো এবং সাংঘাতিক ভালো লাগলো। পত্রিকাটি প্রত্যেক মাসেই কিনতে চেষ্টা করতাম। কিনতাম ফিরোজ দস্তগীর সাহেবের লন্ড্রী সামকী পাড়ায় ষোলা হলো ছোট্র একটুখানি জায়গা নিয়ে একটা কাপড় সাজানো কাঁচের আলমারীর সামনে বই নিয়ে সারা দিন বসে থাকেন। এমন অনেকদিন দেখি আরেকবার আরো একটি বড় দোকানে লন্ড্রী সাজালেন। সে দোকান থেকে আগে সবাই আনতো একদি সবাই আনতে গিয়ে দেখি দোকানের মালিক অন্য লোক সেই দাড়ীওয়ালা রাজনৈতিক কর্মী। সে যে রাজনৈতিক কর্মী তা জানতাম এবং ভালো মতে শোষনকারী তাও কিছুটা অবস্থা জানতাম। এমপি প্রায়ই দোকানে যায়, এটা সেটা আনে। আরেকদিন রোববার সকাল দশটা-এগারটায় তার দোকানের সামনে দিয়ে আসছিলাম সমকাল পত্রিকায় কয়েকখন্ড কিনে ষ্টেশন থেকে ফিরছি ডাকলেন কাছে গেলাম। হাতে নিয়ে বললেন আপনি দেখা যায় আমার মতো। তারপর তার সাথে আলাপ হলো আকার ইঙ্গিতে তাকে বোঝালাম আমি পূর্ব বাংলার বিচ্ছিনতাকে সমর্থন করি। তিনি বললেন তার কোন দরকার নেই। প্রগতিশীল না না আলোচনার মাঝখানে আমি খুব আকৃষ্ট হই। একদিন বললে আমি কম্যুনিষ্ঠ পার্টিকে সমর্থন করি কিনা। আমি বললাম দেখা যাক চিন্তা করে ভালোমতো বুঝে শুনে নেই। এর কিছু দিন পর আমি কম্যু নিষ্ঠ পার্টিকে সমর্থনের কথা প্রকাশ করি। আমার আকর্ষন অনুভব করে তিনি বললেন আপনি যদি শিক্ষা পেতে চান তাহলে মাসে এক টাকা চাঁদা দিতে হবে। আমি রাজী হলাম একদিন চাঁদা নিয়ে তার কাছে দিলাম। আমি আলাপ করে বাসায় এসেছি তিনি আমাকে বাসায় এসে ডাকলেন। গেলাম বললেন এই টুকরা কাগজখানিতে লিখে দেন ‘মুনির এস.এম টি.সি.সি শিখে দিলাম। তিনি বললেন ডান হাতে শিখে বাম হাতের উপর দিয়ে লেখা কাগজখানি মুছে দিন দিলাম। এরপর দুই তিন মাস একটা করে দিয়েছি কিন্তু শিখা পাইন। এরপর টাকা দিইনি।
১৯৬১ সালে চটগাঁয়ে ভীষন ঝড় এলা পার্টি এককালীন সাহায্যের জন্য চাঁদা চাইছে ১৫ টাকা দিলাম। এরপর বললেন ইউনিট করতে হবে কালেক্টরীতে তখন চাকরী করি।