নীলফামারীর চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ি রেল পথ সংযোগের পর এবার বাংলাদেশ সীমান্ত ছুঁয়ে পরীক্ষামূলক চলাচল করলো ভারতীয় একটি রেলইঞ্জিন। ৮ অক্টোবর ভারতের কুচবিহার জেলার হলদিবাড়ি সীমান্ত রেলস্টেশন পেরিয়ে ইঞ্জিনটি বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পৌঁছে। সেখানে ১০ মিনিট অবস্থানের পর পুনরায় ছেড়ে যায় হলদিবাড়ির উদ্দেশ্যে। পরে সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় রেলবিভাগের কর্মকর্তারা স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরীক্ষামূলক রেল চলাচলের নেতৃত্বে ছিলেন ভারতের উত্তর-পূর্ব রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী জেপি শিং, উপ-প্রধান প্রকৌশলী ভিকেমিনা ও নির্বাহী প্রকৌশলী পিকেজে।এ সময় ভারতীয় প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগের প্র্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবদুর রহিম, নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম। ৫৫ বছর পর দুই সীমান্ত ছোঁয়া এলাকায় ভারতীয় রেলের উপস্থিতিতে উভয় পার্শ্বে ভীর জমে দুই দেশের উৎসুক মানুষের ঢল। তারা দূর দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন দীর্ঘ প্রতিক্ষীত রেল চলাচল দেখতে। সীমান্তের দুই ধারে দাঁড়িয়ে তারা উপভোগ করলেন স্বপ্নপূরণের সন্ধিক্ষণের দৃশ্যটি। ৬ অক্টোবর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি সীমান্তের ৭৮২ নম্বর পিলারের কাছে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতিতে হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রেল পথের সংযোগ স্থাপিত হয়। সে পথ দিয়ে ভারতের অংশে পরীক্ষামূলক রেল চলাচল করে। সূত্রমতে, ১৯৬৫ সালের পর চিলাহাটি-হলদিবাড়ি পরিত্যক্ত রেলপথটি চালুর উদ্যোগ নেয় দুই দেশের সরকার। এ উদ্যোগে ডোমার উপজেলার চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ নির্মানকাজ প্রায় সমাপ্তের পথে। এর আগে ভারত হলদিবাড়ি রেলস্টেশন থেকে সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ নির্মানকাজ সমাপ্ত করলেও তাদের অংশে জিরো পয়েন্টে দেড়শ মিটার অবশিষ্ট ছিল। গত মঙ্গলবার অবশিষ্ট অংশের কাজ সমাপ্ত করে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে দেয় ভারতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট পাক-ভারত বিভক্তের পরও এপথে রেল চলাচল চালু ছিল। সে সময়ে এ পথে দুই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করতো যাত্রি ও মালবাহি ট্রেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর বন্ধ হয় দুই দেশের মধ্যে রেল চলাচল। বন্ধ থাকা পথটি চালু করতে ৮০ কোটি ১৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয় বর্তমান সরকার। প্রকল্পটির মধ্যে রয়েছে চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে সীমান্ত পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭২৪ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ ও দুই দশমিক ৩৬ কিলোমিটার লুপলাইন নির্মানসহ অন্যান্য অবকাঠামো। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর চিলাহাটি রেল স্টেশন চত্বরে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। চলতি বছরের ২৮ আগস্ট চিলাহাটির জিরো পয়েন্টে ভারত-বাংলাদশ সংযোগস্থলে রেলপথের নির্মাণ কাজের পরিদর্শণ করেন তিনি (রেলপথমন্ত্রী)। এ সময় তিনি জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর অথবা ২০২১ সালের ২৬ র্মাচ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর র্পূতি উপলে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী এ পথে রেল চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। করোনা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সেটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। চিলাহাটি স্টেশন মাস্টার মো. মোমিন উদ্দিন প্রামানিক দুই দেশের সীমান্তে রেলপথ সংযোগ স্থাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ভারতীয় অংশে ওই চলাচলের বিষয়টি নিশ্চিত করে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবদুর রহীম বলেন, ভারত তাদের অংশে লেরপথ নির্মান কাজ সমাপ্ত করে পরীক্ষামূলক রেল চলাচনার কাজও শেষ করেছে। বাংলাদেশ অংশে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে পরীক্ষামূলক রেল চলানো হবে। এদিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাই কমিশনার শ্রী সঞ্জিব কুমার ভাটী ৮ অক্টোবর বিকালে নীলফামারী শহরে ভারতীয় অর্থায়নে নির্মানাধীন কালিবাড়ি মন্দির পরিদশণে এসে বলেন, খুব শীঘ্রই চিলাহাটি-হলদীবাড়ি রেলপথ চালু হবে। ইতোমধ্যে নির্মাণ কাজ প্রায় সমাপ্ত। ওইদিন পরীক্ষামূলকভাবে ভারত হতে একটি ইঞ্জিন চিলাহাটি-হলদীবাড়ি জিরো পয়েন্টে এসে ফিরে গিয়েছে।