নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের পূর্ব বেলপুকুর ডাঙ্গীরপাড় গ্রামের কাঁচা রাস্তাটির প্রাায় ১০০ মিটার অংশ ও ১০টি পরিবারের বাড়িঘর চিকলী নদীর ভাঙনে নদী গর্ভে তালিয়ে গেছে।। ফলে ওই গ্রামের মানুষজন কাঁচা রাস্তাাটির ভাঙা অংশে নির্মিত বাঁশের একটি সাঁকো দিয়ে চলাচল করছেন। আর গ্রামটিতে প্রবেশের একমাত্র কাঁচা রাস্তার ওপর বাঁশের তৈরি নড়বড়ে সাঁকোটি দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। এছাড়াও নদীর ভাঙনে গ্রামের ১০ পরিবারের বেশকিছু বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সৈয়দপুর উপজেলার ২ নম্বর কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে পূর্ব বেলপুকুর ডাঙ্গীরপাড়ে এ গ্রাম। ওই গ্রামে প্রায় শতাধিক পরিবারের বসবাস। এখানে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মসজিদ। আর ওই গ্রামের পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে বয়ে গেছে চিকলী নদী। গত বছর এ গ্রামে প্রবেশের কাঁচা রাস্তাটির প্রায় ১০০ মিটার অংশ ভেঙ্গে চিকলী নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এতে করে ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে চলাচলে মানুষজন মারাত্মক দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মানুষের চলাচলের রাস্তায় একটি সাঁকো নির্মাণ করে দেয়া হয়। কিন্তু ওই সাঁকোটি দিয়ে গ্রামের মানুষ শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে চলাচল করতে পারেন। বাঁশ ও কাঠের তৈরি সরু সাঁকোটি দিয়ে রিকশা ও ভ্যান চলাচল করতে পারে না। এতে করে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে ওই গ্রামের মানুষ জরুরী প্রয়োজনে রিকশা কিংবা রিকশাভ্যান নিয়ে অনেক পথ ঘুরে চলাচল করে আসছেন। এদিকে প্রায় এক বছর আগে নির্মিত বাঁশ ও কাঠের সাঁকোটি কাঠের পাটাতন নষ্ট হয়ে পড়েছে। এছাড়া সাঁকোটির বাঁশের খুঁটির গোঁড়াগুলো পচে নষ্ট হয়ে পড়ায় নড়বড়ে অবস্থা। তারপরও গ্রামের সব বয়সী মানুষ চিকলী নদীর পাড়ের নড়বড়ে সাঁকোটি দিয়ে অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। গতকাল সকালে সরেজমিনে উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের পূর্ব বেলপুকুর ডাঙ্গীরপাড় গ্রামে নিয়ে দেখা যায়, সাঁকোটির এক প্রান্তের কাঠের পাটাতন পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও মানুষ অনেকটাই নিরুপায় হয়ে ভাঙা পাটাতন ও নড়বড়ে সাঁকোটির ওপর দিয়ে চলাচল করছেন। এ সময় সেখানে কথা হলে গ্রামের বাসিন্দা মো. আফজাল হোসেন বলেন, বর্তমানে সাঁকোটি নষ্ট হয়ে পড়ায় পায়ে হেঁটে চলাচল করাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। দিনের বেলা কোন রকমে চলাচল করা সম্ভব হলেও রাতের বেলা সাঁকোটির ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারি না। অপরদিকে, চিকলী নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে গ্রামের খচ্ছর আলী, আবু বক্কর সিদ্দিক, এমদাদুল হক, রেজাউল হক ও মো. রাকিবুল হকের অন্তত ১৫ থেকে ১৬ টি টিন ও খড়ের ঘর, বেশ কিছু গাছপালা চিকলী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। গ্রামের প্রতিবন্ধী খচ্ছর আলীর বৃদ্ধা স্ত্রী মহছেনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, নদীতে হামার ভিটেমাটি ও দুইটা বসতঘর চলি গেইছে। এখন মুই প্রতিবন্ধী মানুষটাকে নিয়া কোনঠে য্যায়া মাথা গোঁজার ঠাঁই পাইম। এদিকে, গত কয়েকদিনের একটানা ভারী বর্ষণে কর্মহীন অসহায় মানুষের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে পাওয়া ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাসিম আহমেদ ডাঙ্গীরপাড় গ্রামে যান। এ সময় তিনি চিকলী নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়া ডাঙ্গীরপাড় গ্রামর ভাঙ্গা রাস্তায় বাঁশের ও কাঠের নড়বড়ে সাঁকোটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি গ্রামের মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ লাঘবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সময়ে রাস্তাটি মেরামতের আশ্বাস দেন। এ নিয়ে সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল সরকারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ফোনে তাকে পাওয়া না যাওয়ায় মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।