১৪ অক্টোবর থেকে ৪ঠা নভেম্বর পর্যন্ত মেঘনায় মাছধরা নিষেধাঙা ঘোষণা হওয়ায় সে সময়ের আগে কয়েকদিন ধরে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে ইলিশ শিকারে পুরোদমে নেমেছে জেলেরা।নদীতে নৌ পুলিশের তৎপরতা না থাকায় কয়েক দিন ধরে বেড়েছে মেঘনায় নৌকায় গণহারে ডাকাতি। চাঁদার দাবিতে অপহরণের ঘটনায় জলদস্যু-আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আতঙ্কে রয়েছেন জেলেসহ নৌরুটে চলাচলকারী যাত্রীরাও।
এর মধ্যে শনিবার সকালে রামগতির টাংকি বাজার এলাকার মেঘনা নদী থেকে ৫ জনজলদস্যুকে পুলিশে দিয়েছেন স্থানীয়রা। এরা বরিশালের হিজলা এলাকার কালু (৩০),মিলন (২৫),শাকিল (১৯),নুর ইসলাম (২৫) ও শাহ আলম (২৮)সহ ৫জন।
জেলেদের অভিযোগ, দস্যুদের অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া ও নদীতে জলদস্যু গ্রেপ্তারে তৎপরতা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে জীবিকা নির্বাহে অত্যাচার সহ্য করে ও চাঁদা দিয়ে মাছ ধরছেন তারা। পুলিশ তাদের নিকট টোকেন বানিজ্যে সমঝোতায় থাকায় তারা প্রকাশে দস্যুতা করে বেড়ালে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না। এজন্য এবার স্থানীয়রা জীবনের ঝুঁিক নিয়ে উদ্যোগ নিয়েছে জলদস্যুদের টোপে ফেলে আটকের। এখন পুলিশের কাজ হবে তাদের নিকট থেকে অস্ত্র উদ্ধারের। তা না হলে আবারো নদীতে বেড়ে যাবে দস্যুতা।
নৌ পুলিশ জানান,জেলেরা যেন নিরাপদে মাছ শিকার করতে পারেন, সে জন্য নদীতে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এরইমধ্যে বেশ কয়েকজন জলদুস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। স্থানীয়দের আটককৃত ৫ জলদস্যুকে মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে। সে সাথে চাওয়া হবে অস্ত্র উদ্ধারে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ড।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে,জেলায় প্রায় ৫২ হাজার জেলে রয়েছে। এদের মধ্যে ৪৩ হাজার ৪ শত ৭২ জন জেলে নিবন্ধিত রয়েছে। এদের অধিকাংশই মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে থাকেন এখানকার জেলেরা।
তবে জেলার রামগতির চরগজারিয়া, বয়ারচর, চর আব্দুল্লাহ্ ,তেলিরচর এবং তার আশপাশের জেলেরা নদীতে যাচ্ছেন না জলদস্যু ও ডাকাত-আতঙ্কে। কিছু জেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে গেলে মারধর করে মাছ, জাল ও নৌকা নিয়ে যায়। বাধা দিলে ধরে নিয়ে আটকে রেখে তাদের ওপর নির্যাতন চালায় মুক্তিপণের জন্য। অনেক সময় এদের হাতে প্রাণও দিতে হচ্ছে নদীতে আসা জেলেদের। এদিকে ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ঠা নভেম্বর পর্যন্ত মা ইলিশ রক্ষায় মেঘনায় মাছধরা নিষেধাঙা ঘোষণা করা হয়েছে।
স্থানীয় উদ্ধারকৃত জেলেদের স্বজন ও মৎস্য আড়তদাররা অভিযোগ করে জানান,জেলেদের কাছ থেকে টোকেনের মাধ্যমে জলদস্যু ডাকাতরা চাঁদাবাজি করছে। প্রতি বর্ষায় নৌকা প্রতি চাঁদা দিতে হচ্ছে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। আর ঘাটে মাছ বিক্রি করতে দিতে হয় তাদের ৫ হাজার টাকা। এর বাইরেও আরও অনেক স্থানে চাঁদা দিতে হয় তাদের।
জলদস্যুদের দাবি করা চাঁদা না দিলে নদীতে মাছ ধরতে গেলে হামলা, লুটপাট, অপহরণ, নির্যাতন ও পরে মুক্তিপণ দিয়ে তাদের কাছ থেকে মুক্তি মেলে। আর তা না হলে জলদস্যুদের হাতে হামলার শিকার হতে হয় জেলেদের।
রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.সোলেমান হোসেন জানান,রামগতির টাংকির বাজার এলাকার মেঘনা নদী থেকে জলদস্যু সন্দেহে ৫ জনকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে তারা পুলিশের নিকট আটকৃতদের তুলে দেন। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে প্রকৃত তারা জলদুস্যু কি না। আটকৃতরা সবাই নদীর ওপার বরিশালের হিজলা উপজেলার।