কৃষক এক জাতের ধানের চারা রোপন করেছিলেন ক্ষেতে, ধান গাছ হয়েছে একাধিক জাতের। অধিক ফলনের আশায় বিএডিসি থেকে ব্রি ৫১ জাতের বীজ নিয়ে চাষ করা কৃষকের ক্ষেতে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে এক জাতের গাছ রেখে অন্য গাছ গুলো কেটে দিয়েছেন। আবার অনেকে বীজতলাই নষ্ট করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
কৃষকরা বলছেন, ভেজো (মিশ্রিত) জাত হওয়ায় এবার আমন মৌসুমে তাদের ক্ষেতে ধান উৎপাদন কম হবে। অনেকে একটি জাত রেখে অন্য জাতের ধান গাছ গুলো কেটে দেয়ায় তার ক্ষেত ফাঁকা হয়ে গেছে। ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। অবশ্য বিএডিসির কর্মকর্তারা বলছেন, কেন এমন হলো তা তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন। আর কৃষি বিভাগের বক্তব্য ভেজো ধান গাছ কেটে দেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই।
এ দিকে কৃষকের সঙ্গে এই প্রতারনার প্রতিবাদ জানিয়েছে ঝিনাইদহ জেলা কৃষকলীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জানান, তারা এরইমধ্যে ডিসির মাধ্যমে কৃষিমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। যেখানে তারা এক জাতের বীজে একাধিক জাত তৈরির কারণ উদ্ধার ও ক্ষত্রিগস্থ কৃষকদের ক্ষতি পূরণের দাবি জানিয়েছেন।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর আমন মৌসুমে ঝিনাইদহে ২২ জাতের ৬৩ হাজার ১৭১ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। যার মধ্যে ব্রী-৫১ জাত রয়েছে ১২২৬১ হেক্টর। এর মধ্যে কিছু বীজ কৃষক বাজার থেকে সংগ্রহ করে চাষ করেছেন, আর কিছু বীজ বিএডিসির ডিলারের নিকট থেকে সংগ্রহ করেছেন। কৃষকরা বলছেন, বাজার থেকে সংগ্রহ করা বীজে কোনো সমস্যা হয়নি, বিএডিসির বীজে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই বীজ ব্যবহার করে তারা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। পাশাপাশি ধান উৎপাদন হ্রাস পাবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় কৃষক হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, ফলন ভালো হয় এই আশায় ২ বিঘা জমিতে ব্রী-৫১ জাতের ধান চাষ করেছিলেন। বিএডিসির বীজ ব্যবহার করেন তিনি। প্রথমে বীজতলায় ধান গাছ বড় ছোট দেখা যায়। পরে চারা রোপন করা হলে গাছ দুই ভাবে বড় গতে থাকে। কিছু গাছ ছোট থেকে যাচ্ছে, আর কিছু গাছ দ্রুত লম্বা হয়ে উঠছে। এই দেখে তারা বুঝতে পারেন ধান একাধিক জাতের হচ্ছে। তিনি জানান, এই অবস্থায় কৃষি বিভাগের পরামর্শ নেন, তারা সরেজমিনে দেখে লম্বা গাছ গুলো কেটে ফেলার জন্য বলেছেন। তাদের পরামর্শে এরইমধ্যে তিনি কেটেও ফেলেছেন। তবে এই কাজে দুই বিঘায় তার ৪ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএডিসির (বীজ) ঝিনাইদহ অফিসের সহকারী পরিচালকের দায়িত্বে থাকা সহকারী উপ-পরিচালক শফিউদ্দিন সবুজ জানান, তারা এ বছর ব্রী-৫১ জাতের ৪০ মেঃ টন বীজ কৃষকদের দিয়েছেন। যার সবই ভেজো হয়েছে সেটা ঠিক নয়। তবে যে ক্ষেত গুলোতে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে সেখান থেকে তারা নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এখন পরীক্ষা-নিরিক্ষা চলছে। কি কারণে এমনটা হয়েছে তা খতিয়ে দেখবেন বলে জানান। তারা মনে করছেন এর ফলে ফলন খুব একটা বেশি ক্ষতি হবে না।
আর কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক কৃপাংশ কুমার হালদার জানান, এ বছর কৃষকের ধান ক্ষেতে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। তারা কৃষকদের বীজতলা থাকা অবস্থায় লম্বা চারা গুলো বাদ দিয়ে রোপনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। এখন জমি থেকে লম্বা গাছ গুলো বাছাই করার পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে কৃষকের ধান উৎপাদনে একটু বেশি পয়সা ব্যয় হবে, তবে উৎপাদন তেমন কমবে না। কারণ ধানের লম্বা গাছ গুলো কেটে ফেলতে ছোট গাছেই সেই স্থান ভরিয়ে তুলবে। ফলে উৎপাদন সঠিক থাকবে বলে তারা আশা করছেন।