‘মানুষ মানুষের জন্য’ -এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত এক মহৎ দম্পতির নাম ইতোমধ্যে পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার সবার মুখে মুখে। নির্লোভ, সাধারণ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রতিনিয়ত মানব সেবায় আত্মপ্রাণ নিবেদন করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ), ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান ও তার সহধর্মিনী মাহমুদা সবুজ সমাজসেবক হিসেবে নিজ এলাকা বেড়া উপজেলায় মানবতার ফেরীওয়ালার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
পৃথিবীতে সমাজকর্মী হিসেবে নিরব নিভৃতে বিভিন্ন অবস্থানে মানবতার কল্যাণে কাজ করেছেন এবং করছেন ইতিহাসে বিরল। অথচ সবুজ-মাহমুদা দম্পতির বেলায় ঘটেছে ভিন্ন। প্রচারবিমুখ সমাজকর্মী হিসেবে নিরবে মানবতার কল্যাণে কাজ করে আসছেন তারা। কোনো বিনিময় ছাড়া সমাজ বিনির্মাণে সুন্দর ও সুশীল সমাজের স্বপ্ন নিয়ে এই নির্লোভী দম্পতি প্রতিষ্ঠা করেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘তাসকিনা সিনথি চ্যারেটি ফাউন্ডেশন’ ও ‘১০০+ গ্রুপ’।
জানা যায়, ‘তাসকিনা সিনথি চ্যারেটি ফাউন্ডেশন’ (টিএসসিএফ) সরকারি রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যেটি বেড়া উপজেলার পল্লী এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এর আর্থিক সহযোগিতা করে থাকে টিএসসিএফ ফাউন্ডেশন। যার প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক মাহমুদা সবুজ। পাশাপাশি তিনি ১০০+ গ্রুপটিও পরিচালনা করছেন। আর মাহমুদা সবুজের সব ধরণের সামাজিক কার্যক্রমে সহায়তা করে সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন তার স্বামী প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান।
ইতোমধ্যে তাদের গৃহীত যে কার্যক্রমসমূহ মানুষের নজর কেড়েছে- বন্যাকালীন ও প্রাকৃতিক দূর্যোগে যান চলাচলের রাস্তা মেরামত ও সংস্কারে সহযোগিতা করা, প্রাকৃতিক দূর্যোগে মানুষের সহযোগিতাসহ সচেতনমূলক প্রচারণা, অসহায় গরীব মেধাবী এবং ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করাসহ তাদের মেধাবৃত্তি প্রদান, প্রকৃতি দূষণকারী ময়লা আবর্জনা যেমন- প্লাস্টিক দ্রব্যাদি, পলিথিন প্রভৃতি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার জন্য ডাস্টবিন প্রদান এবং নিজ দায়িত্বে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা, প্রতি শুক্রবারে আশেপাশের বাজারঘাটে ধারাবাহিকভাবে ৭-৮ টি টিমে ভাগ হয়ে ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করা, যান চলাচল সহজকরণের জন্য ছোট চাপা রাস্তার পাশে থাকা ডালপালা ও আগাছা পরিস্কার করা যাতে মানুষ সহজেই চলাচল করতে পারে, মাদক, বাল্যবিবাহ ও বয়ঃসন্ধিকাল সম্পর্কে সচেতনমূলক ভিডিও দেখিয়ে সেমিনারের আয়োজন করাসহ করোনাকালীন মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রদান এবং অসহায় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও সহযোগিতা করা।
সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৫০ জন যা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পরিচালিত হচ্ছে। অদূর আগামীতে দেশব্যাপী সংগঠনটির বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকৌশলী সবুজ খেলাধুলা ও শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গনকে এগিয়ে নেবার জন্য খেলার মাঠ তৈরি, তরুণদের মধ্যে খেলাধুলার সামগ্রী বিতরণ, টুর্নামেন্ট পরিচালনা ও সাংস্কৃৃতিক উৎসবসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এ ছাড়া এলাকার অবহেলিত শিশু-কিশোরদের লেখাপড়ার শতভাগ মান নিশ্চিত করতে নিজ গ্রাম শ্যামপুরে ‘সিনথী পাঠশালা’ নামের একটি প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। আগামীতে সিনথী বাড়ি নামে একটি বৃদ্ধাশ্রম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
‘তাসকিনা সিনথি চ্যারেটি ফাউন্ডেশন’ ও ‘১০০+ গ্রুপ’ এর পরিচালক মাহমুদা সবুজ জানান, সমাজ সংস্করণ ও সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখা ইবাদতেরই অংশ। ‘তাসকিনা সিনথি চ্যারেটি ফাউন্ডেশন’ এর পাশাপাশি আমরা ১০০+ নামে একটি গ্রুপ পরিচালনা করছি। যেখানে ১০০+ সদস্য নিয়ে সমাজের ১০০+ অসংগতি দূরীকরণে কাজ করে সুন্দর, সুস্থ ও স্বাভাবিক সমাজ গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এলাকার কিছু তরুণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছি আমি। ইতোমধ্যে আমাদের কার্যক্রম দেখে স্থানীয় কয়েকটি সংগঠন আমাদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। আমরা আশাবাদী যে, এই সংগঠনটি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করে আগামীর লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। তিনি বিশ্বাস করেন- মানুষ তার প্রাচুর্যে নয়, সৎ কর্মে বেঁচে থাকে।’
স্থানীয় শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী শিকদার সোবহান বলেন, ‘একটি সুশীল সমাজ গড়ার লক্ষ্যে তাদের সাথে নির্ভীক ও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এলাকার একদল তরুণ। মানবসেবার তাগিদে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, উদার মনোচিত্তের অধিকারী সবুজ-মাহমুদা দম্পতির মত মহৎ মানুষের ব্যক্তিত্ব শুধুমাত্র ছোট ছোট অসহায় অনাহারে পড়ে থাকা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন সাজায় না, বরং একটি সুন্দর সাবলীলভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্নের মাঝে আলোকিত জীবন ও দেশ গঠনের নিমিত্তে সাফল্যশীর্ষে অন্য এক অমূল্য অবদান রাখে। যা স্মৃতির স্বর্ণাক্ষরে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা।