প্রাইভেট পড়া তো দূরের কথা, অভাবের সংসারে দু’বেলা দু’মুঠো খাবারই ঠিকমতো জোটেনি আসমানি খাতুনের। জোটেনি ভালো পোশাকও। সহপাঠীরা সবাই ইঞ্জিনচালিত গাড়িতে স্কুলে আসা-যাওয়া করলেও দিন মজুর বাবার পক্ষে টাকা দেয়া সম্ভব ছিল না। তাই সারা বছর বাড়ি থেকে প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হয়েছে তাকে। তবে সব অভাবকে মাড়িয়ে এ বছর এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে আসমানি।
অদম্য মেধাবী আসমানি খাতুন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ডাউটি গ্রামের ওলিয়ার মোল্লার মেয়ে। আসমানির কলেজে ভর্তি নিয়ে আশঙ্কা দেখা দেয়। এরপরই আসমানি ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশ-বিদেশের অনেক বিত্তবান ব্যক্তি-সামাজিক সংগঠন।
আসমানির কলেজে ভর্তির ফি দিয়েছেন লন্ডন প্রবাসী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আশিক আল ফেরদৌস, রাজধানীর ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম ও মোস্তাফিজুর রহমান জুয়েল। আগামীতেও সাধ্যমতো আসমানি ও তার পরিবারকে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তারা।
আসমানির পাশে দাঁড়িয়েছে যশোর, মাগুরা, নড়াইল ও ঝিনাইদহের পেশাজীবীদের সংগঠন ‘বৃহত্তর যশোর সমিতি’ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘হেল্পফুল হ্যান্ডস’। সংগঠন দুটি প্রতি মাসে আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেবে আসমানির বাড়িতে।
মেধাবী আসমানি খাতুনের বাবা ওলিয়ার রহমান বলেন, আমার কোন জমি নেই। পরের জমিতে কামলার কাজ করে সংসার চালাই। আমার মেয়ে ভালো রেজাল্ট করলেও তার পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব ছিলনা। মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলাম। অনেকেই আমার মেয়ে ও পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।
আসমানির মা নাছিমা বেগম বলেন, সংসারে সারা বছরই অভাব লেগে থাকে। এর মধ্যেই লেখাপড়া চালিয়ে গেছে আসমানি। মেয়েকে একটি ভাল কলেজে ভর্তি করা আমাদের জন্য ছিলো স্বপ্ন। আমার মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।
কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভুপালি রানি সরকার জানান, মেধাবী আসমানির পরিবার ভূমিহীন। আগামীতে সুযোগ এলে তাদের জন্য সরকারি সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।