কুড়িগ্রাম আদালতে ১ ব্যক্তি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হত্যাচেষ্টার মিথ্যা মামলা করতে এসে বাদী নিজেই এখন জেলহাজতে। রোববার (১২ অক্টোবর) কুড়িগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট মোঃ সেফাতুল্লাহ'র আদালতে এ ঘটনা ঘটে। বাদীর আইনজীবী মাকসুদা আকতার বেবি এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার উত্তর বলদিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম(৪২) জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের কারণে একই গ্রামের ফরহাদ হোসেন (২৩), নয়ন মিয়া (২১), শমসের আলী (৫২), ফরিদুল ইসলাম (২৫) ও তাইজুল ইসলামদের বিরুদ্ধে আদালতে একটি নালিশি দরখান্ত দায়ের করেন। গত ২১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার বিবরণ দিয়ে শহিদুল ওই ৫ জনের নামে তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও সাক্ষী তলবের আবেদন করেন আদালতে। আবেদনের সঙ্গে তিনি ভূরুঙ্গামারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণের কাগজপত্র দাখিল করেন। আদালতে যখন শহিদুল উপস্থিত হয় তখন তার মাথায় ব্যান্ডেজ এবং ব্যান্ডেজে মেডিসিনের চিহ্ন ছিল। কিন্তু আদালত কক্ষে বাদী শহিদুলের পান চিবানো ও তার অঙ্গভঙ্গি দেখে বিচক্ষণ বিচারকের সন্দেহ হয়। এ সময় বিজ্ঞ বিচারক বাদীর আইনজীবীকে শহিদুলের মাথার ব্যান্ডেজ খুলে জখম দেখতে চান এবং গুরুতর জখম হলে আবেদন অনুযায়ী আদেশের আশ্বাস দেন। বিচারকের নির্দেশমতো শহিদুলের মাথার ব্যান্ডেজ খোলা হলে তার মাথায় কোনও জখমের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পরে আদালত এ ব্যাপারে ভর্ৎসনা প্রকাশ করে বাদীর আবেদন খারিজ করে দেন এবং আদালতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা ও প্রতারণার অভিযোগে শহিদুলকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
একইসঙ্গে মামলা করতে আসা শহিদুল ইসলামের কোনও ইনজুরি না থাকা সত্ত্বেও আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভূরুঙ্গামারী ২৪ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত ছাড়পত্র কীভাবে শহিদুল ইসলাম বরাবর ইস্যু করলো সে বিষয়ে ট্রিটমেন্ট শিট, অ্যাডমিশন রেজিস্ট্রারসহ ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসককে আগামী ২৫ অক্টোবর সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেন আদালত।
আদালত জানায়, আবেদনকারী শহিদুল মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে আবেদনে উল্লিখিত আসামিদের হয়রানি করার উদ্দেশ্যে আদালতের চোখকে ফাঁকি দেওয়ার অপচেষ্টা করেছে এবং মিথ্যা মামলা আনয়ন করে আদালতের সময় নষ্টসহ বিচারিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পরে আদালত আগামী ২৫ অক্টোবর পরবর্তী হাজিরার তারিখ নির্ধারণ করে শহিদুলকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এব্যাপারে শহিদুল ইসলামের আইনজীবী মাকসুদা আকতার বেবির মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও এই মুহুর্তে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ ঘটনায় আদালত পাড়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।