নীলফামারীর ডিমলায় সমবায় সমিতির নামে সুদের রমরমা ব্যবসা । নিঃস্ব হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষ ও ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা। অনেকেই চড়া সুদের টাকা দিতে না পেরে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের শঠিবাড়ী বাজারে সমবায় সমিতির নামে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ঋণ দিয়ে দিন কিস্তি আদায়ের মাধ্যমে দিঘৃদিন যাবত রমরমা সুদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে গয়াবাড়ী ইউনিয়নের রহিদাস রায়ের ছেলে লক্ষী কান্ত রায়(৩৮)। শতকরা ৩০% থেকে ৩৫% পর্যন্ত সুদ আদায়সহ মাসিক মেয়াদের পরিবর্তে সাপ্তাহিক/দিন কিস্তি মাধ্যমে সুদাসল আদায় করা হচ্ছে স্থানীয় সহায় সম্বলহীন সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে।
এনজিওর আদলে গড়ে ওঠা এসব সমিতির খপ্পরে পড়ে অতিরিক্ত সুদ ও স্বল্প সময়ের ঋণ পরিশোধের ফলে পুঁজি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন সেইসব মানুষ । সমবায় সমিতি হিসেবে রেজিস্ট্রেশন নেয়া হলেও সমবায় আইন কানুন কিছুই মানছে না এইসব চড়া সুদের ব্যবসায়ী। এমনকি করোনাকালীন সময়েও তারা সরকারী নিষেধ অমান্য করে সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কিস্তি আদায় করা হচ্ছে। উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের শুটিবাড়ী বাজারে গড়ে ওঠা প্রচেষ্টা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড (নিবন্ধন নং-৬৮)। যার পরিচালক গয়াবাড়ী ইউনিয়নের রহিদাস রায়ের ছেলে লক্ষী কান্ত রায়। সমবায়ের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে স্থানীয় সমবায় অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দির্ঘদিন যাবত শঠিবাড়ী বাজারসহ আশপাশের এলাকায় গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গ্রহন করে সুদের রমরমা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। ঋনের টাকা দেয়ার নাম করে কৌশলে নেওয়া হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সহি করা একাধিক চেকের পাতা ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প । সময় অনুযায়ী টাকা দিতে না পারলে সহি করা চেকের পাতা ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প দিয়ে ঋণ গ্রহীতার নামে করা হচ্ছে আদালতে মামলা।
এ ছাড়া নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বার্ষিক মেয়াদের পরিবর্তে মাসিক বা ত্রৈমাসিক মেয়াদে ঋণ দিচ্ছে যা সম্পূর্ণরূপে সমবায় আইন বা দেশের প্রচলিত বেসরকারি আর্থিক সংস্থার নিয়মনীতির বর্হিভ’ত।
এভাবে অতিরিক্ত সুদ আদায় এবং সরকারি আইন ভঙ্গ করলেও স্থানীয় সমবায় অফিস সুদ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় গ্রাহকরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন এবং অতিরিক্ত সুদ প্রদানের কারণে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন সহায় সম্বলহীন ঋণগ্রহীতা সাধারণ মানুষ । ইতোমধ্যে চড়া সুদের টাকা দিতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে বাকি সুদের টাকা দিতে না পেরে শঠিবাড়ী বাজারের ইয়াকুব আলী, আইনাল, মামুন, সুভাষ (মুচী) পল্লব কর্মকারসহ অনেকেই এলাকা ছাড়া হয়েছে। এমনকি শঠিবাড়ী বাজারের সোমেন কর্মকারের স্বর্ণের দোকানটি বর্তমানে ওই সুদখোর ব্যবসায়ীর দখলে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অধিক মুনাফালোভীর সুদখোড়ের অত্যাচারে অনেকেই বাড়ি/ঘড় ছেড়ে যাযাবর জীবন যাপন করছে। এ বিষয়ে লক্ষী কান্ত রায় বলেন, আমি সমবায় আইর মেনেই ক্ষুদ্র ঋনের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। এতে করে কেউ নিস্ব হলেও আমার কিছু করার নেই। ভুক্তভোগিরা ক্ষুদ্র ঋনের নামে সুদের ব্যবসাকারী লক্ষি কান্ত রায়ের নিকট জমাকৃত সহি করা চেক ও ষ্ট্যাম্প উদ্ধারের জন্য ডিমলা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার নিকট লিখিত আবেদন করেছে। ডিমলা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর জামান বলেন, কেউ সমবায় নীতিমালার বাইরে কোন কার্যক্রম পরিচালনা করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই সমবায়ের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নীলফামারী জেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুস সবুর জানান, সমিতিগুলো কোনোভাবেই আইনের বাইরে পরিচালিত হতে পারে না। যারা নিজস্ব কমিটি করে আইনবহির্ভূত কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ব্যাপারে রেজিস্ট্রেশন বাতিল সহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।