বন্যা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও শৈত্যপ্রবাহ বিপর্যস্ত করে তুলেছে পৃথিবীকে। এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। প্রকৃতির এই বৈরীতায় আক্রান্ত হয়েছে আমাদের দেশ, আমাদের কৃষি। তারপরেও বৈরী আবহাওয়ায় বাম্পার ফলনের ইতিহাস গড়েছে এ দেশের কৃষক। তবে এ বছর দফায় দফায় টানা বর্ষণে সর্বশান্ত হয়েছে দেশের বেশির ভাগ সবজি চাষী। এত সব বৈরীতার পরেও ব্রি ধান-৭৫ আগাম জাতের ধানে ভরে গেছে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ। এই আগাম জাতের ধানের প্রদর্শনী প্লটে সোনালী শীষের দোলায় কৃষকের চোখে নতুন স্বপ্নের ঝিলিক। প্রকৃতির বৈরীতার মাঝে এই নতুন জাতের ধানে হাসি ফুটেছে তাদের মুখে।
প্রদর্শনী প্লটের উদ্যোক্তা কৃষকরা মনে করেন এই জাতের ধান চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে পাল্টে যেতে পারে দেশে কৃষি অর্থনীতি।
এ বছর বীরগঞ্জ উপজেলায় ২৯হাজার ৬শত হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি ধান-৭৫ আগাম জাতের ধান ৩০হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে।
কম সময়ে ফলন এবং কম খরচে এই নতুন জাতের ধান চাষ করে সফলতা লাভ করেছে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা সুজালপুর ইউনিয়নের জগদল গ্রামের কৃষক মোঃ রায়হান আলী।
প্রদর্শনী প্লটের উদ্যোক্তা কৃষক মোঃ রায়হান আলী জানান, এ জাতের ধান চাষে সময় কম লাগে। পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় বালাই নাশক স্প্রে করতে হয় না বলেই চলে। পোকা মাকড়ের আক্রমণ না থাকার কারণে ফলন ভালো হয়। এই ধান আগাম বাজারে আসায় দাম বেশ পাওয়া যায়। তাছাড়া এই জমির ধান তোলার পর সবজি চাষ করে বেশ লাভবান হওয়া যায়। এ জাতের ধান চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে বলে মনে করেন তিনি।
বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে রাজস্ব খাতের অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রদর্শনী প্লটের ধান কর্তন করা হয় সোমাবার সকালে। কর্তনকৃত ৩৩শতক জমিতে ধান হয়েছে ১৮মন। প্রতিমন ধান বিক্রয় হয়েছে ৯শত টাকা। ধানের খড় বিক্রয় হয়েছে ৪হাজার টাকা। লিজসহ ওই জমিতে খরচ হয়েছে ১২হাজার ৫শত টাকা। এতে ৩৩শতক জমিতে কৃষকের লাভ হয়েছে ৭হাজার ৭শত টাকা।
এ ব্যাপারে উপজেলা উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম জানান, আমন মৌসুতে ব্রি ধান ৭৫ একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। ২১জুলাই হতে ২০আগষ্ট বীজ বপন করে ২৫ হতে ৩০দিনের মধ্যে চারা রোপন করতে হয়। মাত্র ১১০ থেকে ১১৫দিনের মধ্যে এ ধান ঘরে তোলা যায়। এ ধানের কান্ড শক্ত বলে গাছ হেলে পড়ে না। শীষ হতে ধান ঝরে পড়ে না। জাতটি আগাম হওয়ায় রোগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম। বিশেষ করে বাদামী গাছ ফড়িং (কারেন্ট পোকা) অথবা মাজরা পোকার আক্রমণ হওয়ার আগের এই জাতটির ফলন কর্তন শুরু হয়। এ জাতের ধানের ফলন বেশি হয় অর্থাৎ হেক্টর প্রতি সাড়ে ৪টন হতে ৫টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া এজান স্বপ্লকালীন হওয়ায় রবি মৌসুমের আগাম শাক সজবিসহ একই জমিতে ৩-৪টি ফসল চাষ করা যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুরেজা মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, এ ধানের চাল মাঝারী চিকন এবং সামান্য সুগন্ধি। তবে রান্নার পর ভাত হতে বেশ সুগন্ধি ছড়ায়। এ কারণে চালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক চাহিদা থাকায় আগামীতে উপজেলায় এই জাতের ধানের চাষ বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে। এই ধানের জাতটি স্বল্পকালীন হওয়ায় কৃষক এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধিসহ আগাম শাক সবজি চাষ করে সাফল্য লাভ করবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।