নীলফামারীর ডিমলায় গরু ছাড়া নিজেই তেলের ঘানি টানছে ৭০ বছরের বৃদ্ধ ও তার স্ত্রী। ঘানি টেনেই ৩৫ বছর ধরে জীবন জিবিকা নির্বাহ করছে তারা। এমন খবর সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে গত(১৪ অক্টোবর)বুধবার বিকেলে বৃদ্ধ সহিমুদ্দিন (৭০) এর নিজ বাড়ীতে গিয়ে তার হাতে উপহার হিসেবে ১টি গরু ও ৩০কেজি শরিষা তুলে দেন অংকুর ইন্টারন্যাশনাল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ সময় ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম, খালিশা চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান সরকার ও অংকুর ইন্টারন্যাশনাল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ডিমলা ভোলান্টিয়ার সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের সরকার পাড়া গ্রামের মৃত নছাই মামুদের ছেলে সহায় সম্বলহীন সহিমুদ্দিন(৭০) ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী ৩ ছেলে ৩ মেয়ের বাবা। ছেলেরা বিয়ে করে নিজ নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে নিলুফা আক্তার(২০) নীলফামারী জেলার জলঢাকা সরকারী ডিগ্রী কলেজে ডিগ্রী ২য় বর্ষের ছাত্রী।
অভাব অনাটনের সংসারে ভিক্ষা বৃত্তি বেছে না নিয়ে গত ৩৫ বছর আগে অতিকষ্টে ঋণ করে একটি গরু কিনে সরিষার তেলের ঘানি চালিয়ে কোন রকমে সংসার চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ১৫ বছরের মাথায় ঘানি টানা গরুটি হটাৎ করে মারা যায়। সেই থেকে গরু কেনার সামর্থ না থাকায় গত ২০ বছর ধরে স্ত্রী নুর নাহার(৫৫) সহ প্রতিদিন ভোর ৩ টায় ৫ কেজি সরিষা ঘানিতে দিয়ে বেলা ১১টায় (৮ঘন্টা) পর্যন্ত ঘানি টেনে তেল মাড়াই শেষ করে। মাড়াই করা তেল চাপানি বাজারে বিক্রি করে সেই লাভের সামান্য টাকা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটান। এবং অতিকষ্টে ছোট মেয়ে নিলুফা আক্তারের পড়ালেখার খরচ চালান। এভাবেই বেশ কিছু অতীত অধ্যায়ের সমাপ্তি হলেও সমাপ্তি হয়নি ৭০ বছর বয়সে পা রাখা বৃদ্ধের তেলের ঘানি টানা কাজের। ঘানি টানা বৃদ্ধ সহিমুদ্দিন স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে তার বর্তমান পরিস্থি তুলে ধরে সমাজের বৃত্তবানদের নিকট সাহায্যের আবেদন করেন। বিষয়টি সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে অংকুর ইন্টারন্যাশনাল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে তেলের ঘানি টানার জন্য ১টি গরু ও ৩০কেজি শরিষা প্রদান করা হয়। উপহার পেয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বৃদ্ধ সহিমুদ্দিন বলেন, আজ আমি এই উপহার পেয়ে মহা খুশি। আমার এই চরম দুর্দিনে যারা আমাকে সাহায্য করলেন। আমি তাদের জন্য সারা জীবন দোয়া করবো।