‘সরকার ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করেছে। আমরাও চাই ধর্ষকদের ফাঁসি হোক। কিন্তু যারা ধর্ষণের অভিযোগে নিজের স্বার্থ হাসিলের উদ্যেশ্যে মিথ্যা মামলা করবে তাদেরও ফাঁসি চাই।’ রাজশাহী নগরীতে এক যুবককে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার অভিযোগ তুলে এমনটিই দাবি করেছেন অভিযুক্ত ভিকটিমের মা হাসিবা পারভীন। বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাবে ভিকটিম পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলন ভিকটিমের মা বলেন, ‘আমি একজন নারী হলেও আমি মিথ্যা অভিযোগের ক্ষেত্রে সেই অভিযোগকারির শাস্তিও মৃত্যুদণ্ড আইন করা হোক। তাহলে নিজ স্বার্থ হাসিলের উদ্যেশ্যে আর কোন নারী মিথ্যা অভিযোগ করে কোন নিরাপরাধ ছেলেকে ফাঁসানোর সাহস দেখাবে না।
লিখিত বক্তব্যে হাসিবা পারভীন বলেন, গত ৬ আগস্ট এক তরুণী বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করায় আমার ছেলে মনিরুজ্জামান মান্না (২৯) গ্রেফতার হয়ে প্রায় দুই মাস ধরে কারাগারে রয়েছেন। এতে আমরা সমাজের কাছে প্রতিনিয়ত হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি। আর মামলার বাদী বিভিন্ন সময় আমাদের পুরো পরিবারের ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে আসছে। বর্তমানে আমাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অভিযুক্ত মান্নার বাড়ি নগরীর দরগাপাড়া এলাকায়। তিনি ব্যবসা করেন। আর ওই তরুণীর বাড়ি নগরীর বহরমপুর এলাকায়।
সংবাদ সম্মেলনে মান্নার মা হাসিবা পারভীন বলেন, ২০১৫ সাল থেকে মেয়েটির সঙ্গে তার ছেলের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্ক ছিল। এ সুযোগে মেয়েটি তার ছেলের কাছ থেকে দামি দামি উপহারসহ মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। সে মান্নাকে প্রেমের প্রস্তাব দিত। বিয়ের করতে চাইত। কিন্তু মান্না জানতে পারে মেয়েটির একাধিক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। এজন্য মান্না তাকে এড়িয়ে যেতে শুরু করেন। কিন্তু মেয়েটি তাকে নানাভাবে হুমকি দিত। এজন্য ২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল মান্না নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিল। এরপর থেকে তাদের যোগাযোগ বন্ধই ছিল। হঠাৎ এ বছরের ৬ আগস্ট থানায় মামলা করে সে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মান্নার সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় ওই তরুণী ৫টি মোটর সাইকেলে ১২ জন অপরিচিত যুবকদের সাথে নিয়ে বাসায় আসেন। এ সময় মান্নার সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। বাসা থেকে ওই তরুণী তার বন্ধুদের নিয়ে চলে যাওয়ার সময় মান্নাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এরপরের দিন মান্না ও তার বোন শিলার নামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই মান্নাকে বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিকে মামলায় ধর্ষণের তারিখ হিসেবে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ওই সময় মান্না চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন।
তাছাড়া মামলায় শামিম নামে ব্যক্তির ভাড়া বাসাকে ধর্ষণের স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ বোয়ালিয়া থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করতে গেলে ওই বাসার মালিক জানিয়েছেন, তার বাসায় শামিম নামে কোন ভাড়াটিয়া ছিলেন না। পরবর্তীতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে। তদন্ত শেষে পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে। সেখানেও মামলার বাদির ঘটনার তারিখ নিয়ে রহস্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, সেটাও উল্লেখ করা হয়েছে। আর তার মেডিকেল রিপোর্টে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, তার সাথে জোরপূর্বক কোন ধরনের যৌন সম্পর্ক স্থাপনের লক্ষণ পাওয়া যায়নি।
মামলার বিষয়ে অভিযোগকারি তরুণীর কাছে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, ‘মান্না বিয়ের প্রলোভনে তাকে ধর্ষণ করেছেন। তাই তিনি মামলা করেছেন।’ এজাহারে উল্লেখ করা ধর্ষণের সময় অভিযুক্ত আসামি বিদেশে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেন নি। আর মেডিকেল রিপোর্টের বিষয়ে বলেন, রিপোর্ট দেয়া হয়েছে চারদিন পর। সে কারণে এমন রিপোর্ট হয়েছে।