দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ থামাতে গিয়ে স্কুলশিক্ষক ছেলে ও তাঁর স্ত্রীর বেধড়ক পিটুনির শিকার হয়ে এখনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাঁতরাচ্ছে বৃদ্ধা নুরুন্নাহার বেওয়া (৭০)। এই বিষয়ে আহত বৃদ্ধার ছোট ছেলে বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। তবে অভিযুক্ত স্কুলশিক্ষক বাদীকে এখনো বিভিন্ন ভাবে হুমকী দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়। আহত বৃদ্ধা
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার দর্গামাড়িয়া গ্রামের মৃত আবদুর রহমানের স্ত্রী। হামলাকারী আবদুল বারি চাঁনপাড়া আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ধর্মীয় বিষয়ের শিক্ষক।
মায়ের অভিযোগ ছেলে তাঁর নামে থাকা জমি-জমা নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে চান। ছেলের প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতে এবং ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধে না জড়ানোর জন্য বলা হলে ক্ষোভে তাঁর ওপর হামলা করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
থানায় দায়ের করা বৃদ্ধার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানের অভিযোগ ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুই ভাই স্কুলশিক্ষক আবদুল বারি ও মোস্তাফিজুর রহমানের মধ্যে পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া বাঁধে। একপর্যায়ে ঝগড়া বিষয়টি জানার পর বৃদ্ধা বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। তাঁদের বিরোধে না জড়ানোর জন্য বলেন বৃদ্ধা। একপর্যায়ে আবদুল বারি ও তাঁর স্ত্রী রিনা বিবি ক্ষুব্ধ হয়ে বৃদ্ধাকে পেটান। এতে তিনি গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যান। এ সময় বৃদ্ধার আরেক ছেলে আবু বকর সিদ্দিক ছুটে আসলে তাঁকেও মারপিট করা হয়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারি ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় লোকজন ঘটনাসস্থলে ছুটে এসে তাঁদের নিবৃত্ত এবং আহত অবস্থায় বৃদ্ধা নুরুন্নাহারকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
ছোট ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, তাঁর বড়ভাই স্কুলশিক্ষক আবদুল বারি ও তাঁর স্ত্রী মিলে বৃদ্ধ মাকে বেধড়ক পিটিয়েছেন। তাঁর ভাই দীর্ঘদিন ধরে মায়ের কাছ থেকে জমি-জমা রেজিস্ট্রি করে নিতে চান। তাতে আপত্তি জানালে তিনি মায়ের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি এই বিষয়ে গত বুধবার থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর আবদুল বারিক ও তার লোকজন বিভিন্ন ভাবে হুমকী ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিনে গিয়ে বৃদ্ধা নুরুন্নাহারকে কাতরাতে দেখা যায়। শরীরে এখনো ব্যাথা রয়েছে। চিকিৎসকেরাও একই রকম কথা বলেছেন। বৃদ্বা অভিযোগ করে বলেন, দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া থামাতে গিয়ে তাঁর ওপর ছেলে ও তার স্ত্রী মিলে হামলা করেছে। তিনি জানান, বড় ছেলে আবদুল বারিককে সংসারের ক্ষতি করে লেখাপড়া শেখানো ও চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। সে (আবদুল বারি) জমি-জমা নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে নিতে চায়। না দেওয়াতে সে ক্ষুব্ধ ছিল।
স্কুলশিক্ষক আবদুল রাবি বৃদ্ধ মায়ের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তাঁর মা আগ থেকেই অসুস্থ তাঁর ওপর হামলা করা হয়নি। তাঁকেই বিরোধ মেটানোর জন্য বলা হয়েছে মাত্র। তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ছোট ভাইয়েরা (মোস্তাফিজুর ও আবু বকর সিদ্দিক) মিলে শক্রুতামূলক ভাবে তাঁদের চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি এবং তাঁর বাড়িতে পাশ দিয়ে কেবল তার যাওয়াতে তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাগমারা থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) আতাউর রহমান জানান, অভিযোগ পাওয়া গেছে তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।