রাজধানীতে বেদখল হয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধারে শিগগিরই বিশেষ অভিযানে নামছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। একইসঙ্গে দখলমুক্ত খালের দু’পাড় স্থায়ীভাবে বাঁধাই করে ওয়াকওয়ে তৈরিসহ খালে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। খালে কোন প্রকার ময়লা আবর্জনা ফেলা যাবে না। যে ফেলবে তাকে চিহ্নিত করে জরিমানা ও শাস্তির আওতায় আনা হবে। খালপাড়ের বাড়িগুলোর সামনের পানি হবে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন। এমনকি প্রতি ১০০ ফুট খাল পরিচ্ছন্ন বা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব স্থানীয় বাড়িওয়ালাদের প্রদান করারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মূলত নিজ সীমানায় অবস্থিত সকল খালকে দখলমুক্ত করে পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা হবে। মূলত মশা জন্মের প্রধান উৎপত্তিস্থল ওসব খাল সারাবছর পরিচ্ছন্ন তথা ময়লা আবর্জনা ও কচুরিপানামুক্ত রাখতেই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ডিএনসিসি। একইভাবে মশার প্রজননস্থল হতে দেবে না ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনও (ডিএসসিসি)। সংস্থাটির প্রধান তার সীমানার মোট ১০টি খাল ও জলাশয় অতি দ্রুততার সঙ্গে পরিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে তার সীমানার সকল সংস্থার নিজস্ব খাল ও লেক বা জলাশয় সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে কচুরিপানা ও ময়লা আবর্জনামুক্ত তথা পরিষ্কার করতে নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছে ডিএসসিসি। ডিএনসিসি এবং ডিএসসিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ডিএনসিসির নেয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগামী ২০ অক্টোবর থেকে বিশেষ অভিযান শুরু করা হবে। প্রথমে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সকল খাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হবে। পরবর্তীতে নতুন করে খাল বা লেক ভরাট করলে যে অংশটুকু ভরাট করা হবে বা যার বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের সামনের অংশ ভরাট হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে চলমান অভিযানে কোনো ব্যক্তি বা সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান খালে যে কোনো প্রকার বর্জ্য বা অব্যবহৃত ব্যবহার্য সামগ্রী ফেলে পানি চলাচলে বাধার সৃষ্টি করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। একইসঙ্গে মশা জন্মগ্রহণে সহায়তা করার মাধ্যমে নাগরিক দুর্ভোগ সৃষ্টির অপরাধে তার বা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র জানায়, ডিএনসিসি আসন্ন শীতের আগেই তার সীমানায় অবস্থিত সকল পাড়া মহল্লা অলিগলিতেও জন্ম নেয়া কিউলেক্স মশা সম্পূর্ণরূপে নিধন করতে চায়। তারই অংশ হিসেবে ডিএনসিসি কিউলেক্স মশক নিধন কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এ কর্মসূচি সফল করতে ডিএনসিসি তার সীমানার সকল খাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে। মশার জন্মস্থান তথা যাতে করে মশা উড়ে এসে যাতে বিশ্রাম পর্যন্ত নিতে না পারে সেজন্য বর্তমানে ওসব খালের পাড়ের সকল ঘাস পরিষ্কার করার কাজ শেষ করা হয়েছে। সংস্থাটি প্রায় এক মাস ধরে এ কাজ করছে। তার পরের ধাপ হিসেবে খালগুলো পরিষ্কারে নেমেছে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। প্রতিটি খাল, লেক বা ছোট-বড় জলাশয় পরিষ্কার করতে প্রতিদিন ৫১০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করছে। ওসব কর্মী দ্বারা ডিএনসিসির সীমানার নিজস্ব ও সকল সরকারি সংস্থার সকল জলাশয় পরিচ্ছন্ন করার পরই কারা তা দখল করে বা ভরাট করে তা পর্যবেক্ষণে বিশেষ অভিযানে নামবে ডিএনসিসি।
সূত্র আরো জানায়, খাল, ডোবা-নালা অপরিষ্কার থাকলেই ২০ অক্টোবর থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া শুরু করা হবে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার নিজস্ব লেক বা জলাশয় রয়েছে সেগুলো অতি দ্রুত পরিষ্কার করতে চিঠি দেয়া হয়েছে। রাজউক, পিডব্লিউডি, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সংস্থাকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে। একই সাথে আগামী শীতের আগেই কিউলেক্স মশামুক্ত করতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজ দায়িত্বে নিজস্ব জলাশয় তথা লেক বা খালগুলো পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় ময়লা আবর্জনা ফেলে মশার উপৎত্তিস্থল তৈরি ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টির দায়ে আইনানুগ জরিমানা বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। একইসঙ্গে নিজ বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনার সামনের ভরাটকৃত জলাশয় ডোবা নিজ দায়িত্বে পরিচ্ছন্ন করতে বিভিন্ন মিডিয়াতে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ডিএনসিসি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এ সংক্রান্ত চিঠি রাজউককে পাঠিয়েছে। রাজউকের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। রাজউক ইতিমধ্যেই মশার উৎপাদন হয় এমন পরিবেশ না রাখতে প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করেছে। রাজউকের অধীনে থাকা সকল জলাশয় অতি দ্রুতই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হবে। রাজউকের সীমানায় অবস্থিত উত্তরা লেক, হাতিরঝিল লেক, বনানী লেকসহ সকল লেক ও জলাশয় দ্রুত কচুরিপানা ও ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে চিঠি দিয়েছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ডিএসসিসির এলাকায় অবস্থিত ১০টি অঞ্চলের ১০টি খাল ও জলাশয় উদ্ধারে প্রকল্প গ্রহণ করেছে ডিএসসিসি। সংস্থাটির পক্ষ থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা শীতের আগেই মশকমুক্ত ডিএসসিসি কাজ শুরু করেছে। একইসঙ্গে সংস্থাটির প্রধানের নির্দেশ অনুযায়ী কোন প্রকার ময়লা আবর্জনা যেন কোনো খালে না ফেলা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে স্থানীয় সকল ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে মেয়র নাগরিকদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার জন্য বিশেষভাবে আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে মেয়র ইতিমধ্যেই কয়েকটি খালের সর্বশেষ অবস্থা দেখতে সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়েছেন।
অন্যদিকে রাজধানীর বিভিন্ন খাল ও লেক পরিষ্কার করাকালে খালে যেসব অবাঞ্ছিত সামগ্রী পাওয়া যায় তা তুলে ধরা হয়েছে। উদ্ধার কার্যকালে বিভিন্ন খাল থেকে শতাধিক জাজিম, কয়েক ডজন সোফা, টেলিভিশনের খোলস, ভাঙ্গা ফ্রিজ, সুটকেস, বালিশ, ২০০ ট্রাক ডাবের খোসা পাওয়া গিয়েছে। খাল পরিষ্কারের
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম জানান, রাজধানীর সকল খাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পানি প্রবাহের অবাধ সুযোগ তৈরি করতে চাওয়া হচ্ছে। সেজন্যই বারবার সরকারকে রাজধানীর খালগুলোকে বর্ষায় যাতে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানিতে ওভারফ্লু হয়ে না যায় তা রুখতে ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। মূলত সব সময়ই দেখা যায় রাজধানীর খালগুলো থাকে নোংরা অপরিচ্ছন্ন। এ যেন আবর্জনার ভাগাড়। দায়িত্ব যাদের পরিষ্কার করা তারা তা করে না। ফলে ময়লা আবর্জনায় প্রতিনিয়তই মশার জন্ম নেয়। একেকটি খাল বা জলাশয় যেন মশার উৎপাদন কেন্দ্র। নাগরিক স্বার্থে সিটি কর্পোরেশন তা রক্ষার কাজে নেমেছে। এডিস মশা থেকে নগরবাসীকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য চিরুনি অভিযান পরিচালনা এবং জরিমানা করা হয়েছে। একইভাবে আসন্ন শীত মৌসুমে নগরবাসীকে কিউলেক্স মশা থেকে সুরক্ষা দিতে আগামী ২০ অক্টোবর থেকে ডিএনসিসি এলাকার খাল, ডোবা-নালা পরিদর্শন করা হবে। এ নিয়ে বিশেষ অভিযান চলবে। খাল, ডোবা-নালা পরিষ্কার অবস্থায় পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্টদের জরিমানাসহ শাস্তির আওতায় আনা হবে। খাল অপরিষ্কার থাকলে সরকারি, বেসরকারি কিংবা ব্যক্তি মালিকানাধীন যে কোনো সংস্থাই হোক না কেন তাকে জরিমানা করা হবে। কারণ খাল কচুরিপানাপূর্ণ বা অপরিষ্কার থাকলে সেখানে মশা বংশবিস্তার করে। এক্ষেত্রে সব সংস্থা, সরকারি-বেসরকারি এবং ব্যক্তি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ সিটি কর্পোরেশনের একার পক্ষে তা সম্ভব নয়। তবে সবাই মিলে এগিয়ে আসলেই সম্ভব।