রাজশাহীর বাঘা পৌরসভার চকনারায়ণপুর পালপাড়া এলাকায় রাস্তার পাশ ঘেঁষে বাড়ির সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাঘা পৌরসভা স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রোববার এই কাজ বন্ধ করে দেন। তবে এ বিষয় নিয়ে প্রাচীর নির্মানকারী ও স্থানীয়দের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জানা যায়, উপজেলার নারায়ণপুর পালপাড়ার সার্বজনিন দূর্গামন্দিরে যাতায়াতের রাস্তা ঘেঁষে বাড়ির সীমানা প্রাচীর নির্মান কাজ শুরু করেন মৃত হরেন্দ্রনাথ সাহার ছেলে স্বপন কুমার সাহা ও বিশ্বজিত সাহা। রাস্তা ঘেষে বাড়ির সীমানা প্রাচীরের কাজ না করার জন্য বাঘা পৌরসভায় অভিযোগ করেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পালপাড়ার গ্রামের অপূর্ব সাহা, নিহারঞ্জন পান্ডে বাবু, শেফালি, রমেশ সাহা, ডাঃ উত্তম কুমার সাহাসহ ১৪ জন। এই অভিযোগ পাওয়ার পর কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে এনিয়ে প্রাচীর নির্মানকারী ও অভিযোগকারীর মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
অভিযোগকারী পালপাড়ার গ্রামের অপূর্ব সাহা বলেন, জনস্বার্থে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে পালপাড়ার গ্রামের মধ্য দিয়ে পৌরসভা কর্তৃক রাস্তাটি পাঁকা করা হয়েছে। এই রাস্তায় এলাকার জনসাধারণের চলাচলে বিঘœ না হলেও তেমন কোন যানবাহন চলাচল করতে পারেনা। তবে রাস্তাটি সম্প্রসারণের দাবি ছিল সেখানকার বসবাসকারীদের।
তিনি আরো বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) আমিন (সার্ভেয়ার) দিয়ে জমির সীমানা নির্ধারনের দিন ধার্য্য করেন পৌর কর্ত্তৃপক্ষ। কিন্তু পেশীশক্তির দাপটে বিষয়টি জটিল মনে করে, সার্বিক বিবেচনায় নির্বিঘ্নে দূর্গাপূজা উৎসব করার নিমিত্তে আগামী ৩১ অক্টোবর শনিবার সকালে সীমানা নির্ধারণের পুণঃ দিন ধার্য করে পৌরসভার পক্ষে প্যানেল মেয়র শাহিনুর রহমান পিন্টু স্বাক্ষরিত একটি পত্র বাদি-বিবাদিকে জমির কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়। তারপরেও অর্দৃশ্য শক্তির দাপটে কাজ শুরু করেন তারা। পরে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে সরেজমিন পুলিশ গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন।
পৌরসভার আইন মোতাবেক পৌর কর্ত্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি না নিয়ে অবৈধভাবে ইমারত নির্মাণ কাজ করার অভিযোগেও ১৩ অক্টোবর প্যানেল মেয়র (২) আলাউদ্দীন স্বাক্ষরিত একটি পত্র দিয়ে কারণ উল্লেখপূর্বক পত্র প্রাপ্তির ৩ কর্য্যদিবসের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়। একই সাথে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত নির্মান কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। বাদি নিহারঞ্জন বাবু ও বিবাদি স্বপন কুমার সাহা ও বিশ্বজিত সাহাকে অবগত করানো হয়।
আরেক অভিযোগকারী নিহারঞ্জন পান্ডে বাবু বলেন, রাস্তা সম্প্রসারণের দাবিতে পৌরসভায় রাস্তা ঘেঁষে প্রাচীর নির্মাণ কাজের অভিযোগ করার পরও জোর পূর্বক কাজ শুরু করে। কোন উপায় না পেয়ে পুলিশকে অবগত করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।
বাড়ির প্রাচীর নির্মানকারী স্বপন কুমার সাহা বলেন, বাবার তৈরি বাড়ির উপরে কাজ করছি। আগে থেকেই নিজের সম্পত্তিতে সীমানা প্রাচীর দেয়া ছিল। এবারের বর্ষায় সেই প্রাচীরের কিছু অংশ ভেঙ্গে যায়। সেটা সংস্কার করার সময় অভিযোগ দিয়েছে। মিমাংসার জন্য পৌরসভা কর্তৃক (১৬ অক্টোবর) যে তারিখ দিয়েছিলেন ওই তারিখে বসে যদি সমাধান করে দিতেন তাহলে আমার জন্য ভাল হত। কারণ পূজাতে আমার বোন ও তার মেয়ে চিত্র নায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম গ্রামের বাড়িতে আসবেন। সেই আলোকে পূজার আগে সীমানা প্রাচীরের কাজ করছিলাম। তার দাবি, আমাদের জমিও রাস্তার জন্য দেয়া আছে। তবে সমাজের প্রয়োজনে যদি জায়গা ছেড়ে দিয়ে প্রাচীর নির্মাণ করতে হয় সেটা করব। সেই সাথে তার ও উত্তম ডাক্তারের বাড়ির উত্তর পাশের সরকারি রাস্তার জমি অন্যরা নিজেদের দখলে নিয়েছে। একই সাথে সেটাও উদ্ধারের দাবি জানান তিনি।
বাঘা উপজেলা শাখার পূঁজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি সুজিত কুমার বাকু পান্ডে বলেন, সেখানে একজনের জমি আরেকজনের মধ্যে চলে গেছে। সেই সমাধানের জন্য পৌরসভায় অভিযোগ দেয়ার আগে চেষ্টা করা হয়েছে। সেটা না হওয়ায় পৌরসভার হস্তক্ষেপে আগামী ৩১ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়েছে। এছাড়াও বিদ্যা সিনহা মিমের মা ছবি রানী, ছোট যানবাহন চলাচলের জন্য রাস্তা সম্প্রসারনের কথাও আমাকে বলেছেন।
বাঘা পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহিনুর রহমান পিন্টু বলেন, পৌরসভায় অভিযোগ করেছে। কয়েকদিন পর হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দূর্গাপূজা। তাই সবার কথা ভেবে আগের তারিখ পরিবর্তন করে আগামী ৩১ অক্টোবর জমির সীমানা মেপে কাজ করার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে উপর্যুক্ত তারিখ পর্যন্ত রাস্তা ঘেষে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
বাঘা থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, ফোন পেয়ে শৃঙ্খলা রক্ষাতে পুলিশ পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।