নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেছেন, গত বছর কোন মহামারী ছিল না। গতবছর একেকটি পূজা মন্ডপে আমরা ১২ হাজার করে টাকা দিয়েছিলাম। এবার মহামারী আছে। সাড়ে তিন মাস আমরা মহামারীর মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে কর্মহীন মানুষের মাঝে সহায়তা প্রদান করে আসছি। খাদ্য, ওষুধ সরবরাহ ও চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে আসছি। তারপরও এবার শারদীয় দূর্গোৎসবে আমরা ১৮ হাজার করে প্রতিটি পূজা মন্ডপে অর্থসহায়তা দিচ্ছি। আমরা বলি মির্জা ফখরুল সাহেব দেখে যান, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলেই আজও সরকারের সহায়তা প্রদান অব্যাহত আছে। কার কথা সত্য, মির্জা ফখরুল না সরকারের? সরকারের কথা সত্য।
আমরা স্বপ্নে খাওয়া-দাওয়া করি না, মির্জা ফখরুলরা স্বপ্নে স্বপ্নে খায়, আর আমরা সত্যি সত্যি খাই। আমরা যা করি জনগণ তা দেখে। বাংলাদেশের সময়ে দূর্নীতি হচ্ছে, আমার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করছে। বাংলাদেশের টাকা লুট করতে চাচ্ছে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেফতার করছে। সাবরিনা, সাহেদরা গ্রেফতার হচ্ছে। অথচ বিএনপি’র সময় এরকম কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। বিএনপি’র সময় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হলো জজমিয়া নাটক সাজানো হলো। টর্চার সেলে একটা মানুষকে দীর্ঘদিন টর্চার করে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে। গোপাল কৃষ্ণ মহুরী, শাহ এ এস এম কীবরিয়া, আহচান উল্লাহ মাষ্টার, কালিদাস বড়াল হত্যা ঘটনায় তখন কোন থানাই মামলা নেয়নি। পূর্ণিমা, মাহিমা, রাজুফা এমনকি ছোট শিশু নির্যাতনের কোন মামলা তখন নেয়া হয়নি। বায়তুল মোকারম মসজিদে আগুন, ঝালকঠিতে বিচারকের এজলাসে বোমা মারার ঘটনায় কোন মামলা হয়নি। এই ছিল দেশের তখনকার অবস্থা। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে, অনেক নাম আমরা ভুলে গেছি, ১০ ট্রাক অস্ত্রর মত আলোচিত বিষয়ের কোন মামলা হয়নি। তখন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভয়ঙ্কর অবস্থায় ছিল। মানুষকে নিশ্চুপ করে রাখা হয়েছিল। যারাই কথা বলতে গিয়েছে তাদের উপর আক্রমণ করা হয়েছিল। ১লা অক্টোবরের নির্বাচনের সময় বিরলে নির্যাতনের ঘটনায় বিরল থানা তো দূরের কথা কেউ মুল্লুক দেওয়ান পার হয়ে আসতে পারেনি। মানুষজন হাটে-বাজারে উঠতে পারেনি। কাউকে কথা বলতে দেয়া হয়নি। এই ছিল বিএনপি’র শাষনামল।
আমরা এখনও দেখি যারা মার্চে যখন প্রথম করোনা শুরু হলো তখন থেকে বলা শুরু হয়েছে বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থ। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। বাংলাদেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েছে। সমালোচকরা যারা দেশ বিরোধী কথাবার্তা বলে তারা এগুলো বলেছে। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েনি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দেশনেত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে।
গত পরশুদিনে বাংলাদেশের যে সকল গণমাধ্যম আছে, সেগুলোর প্রধান শীরোনাম ছিল, বাংলাদেশের অর্থনীতি ভারতের চেয়ে উর্দ্ধমূখী। এই সংবাদ পরিবেশনের পরে গত ৩/৪দিন যাবৎ অর্থনৈতিক আলোচক পর্যালোচকদের মাঝে ব্যাপক আলোচনার তৈরী হয়েছে। এই যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এটা আমাদের আওয়ামী লীগের কথা নয়, এটা মন্ত্রীদের কথা নয়, এটা সরকারের কথা নয়, আন্তর্জাতিক যে অর্থনৈতিক জরীপকারী আছে তাদের কথা এটি, যে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন উর্দ্ধমূখী।
তিনি আরো বলেন, মির্জা ফখরুল কোন দিন কথা বলা বাকি আছে? রুহুল কবীর রিজভী কোন দিন কথা বলতে বাকি আছে? কথা বলতে বলতে অসুস্থ হয়ে রিজভী এখন হাসপাতালে। তারপরও ওঁরা বলছে বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। আমারমত মানুষও কখনও দোটানায় পড়ে যাই। মিথ্যা কথা এত সুন্দরভাবে বলা যায়, এটা বিএনপি’র নেতাকর্মীদের কথা না শুনলে বলা যাবে না। এমন সুন্দরভাবে মিথ্যা কথাগুলো বলে, এরা তারপরও বলে আমাদের কথা বলতে দেয়া হয় না। বিএনপি’র সাংসদরা কথা বলে, স্পিকার কোন দিন তাদের থামাননি। কথা বলতেছে, কোন বাঁধা নাই। তারপরও বলে দেশে কোন গণতন্ত্র নাই। বিএনপি’র নেতাকর্মীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে, তারপরও বলে বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা নাই। আমরা এই যে ত্রাণ সহায়তা দিলাম। আমাদের ত্রাণ সহায়তায় কোন আওয়ামী লীগ-বিএনপি নাই। সবাইকে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করে বলেন, গতকাল ডাঃ জাফরুল্লাহ বললো দেশে মধ্যবর্তী নির্বাচন দরকার। মির্জা ফখরুল বলে ফ্রেশ নির্বাচন দরকার। আমি বলি মির্জা ফখরুল রাজনৈতিকভাবে আগে আপনারা ফ্রেশ হয়ে আসেন। তারপরে আপনারা ফ্রেশ নির্বাচনের কথা বলেন। আমি বলি আপনারা রাজনৈতিকভাবে ফ্রেশ না। কারণ যুদ্ধাপরাধী, খুনি, ঘাতকদের সাথে আপনাদের আঁতাত আছে। আপনারা সেই রাজনীতি এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজনীতি করলে ফ্রেশ হোন, পবিত্র হয়ে আসেন, তারপর এসব কথাবার্তা বলেন। এই অবিত্র মুখে জনগণকে নিয়ে আর তামাশা করবেন না। জনগণ ভালো আছে, জনগণকে আর আতঙ্কিত করবেন না। আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কোন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড থেমে নেই।
সোমবার সকালে বিরল উপজেলা পরিষদ হলরুমে উপজেলার ৯৪টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দূর্গোৎসবে সরকারি অনুদানের অর্থ বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি উপর্যুক্ত কথাগুলো বলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জাবের মোহাম্মদ সোয়াইব এর সভাপতিত্বে ও পূজা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রমা কান্ত রায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরমেয়র আলহাজ্ব মোঃ সবুজার সিদ্দিক সাগর, কর্মকর্তা ইনচার্জ শেখ নাসিম হাবিব। অন্যান্যের মধ্যে জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রবিউল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রভাষক বিভূতি ভূষণ সরকার, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব সুবল রায়সহ উপজেলা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ সহযোগি সংগঠন ও ৯৪ টি পূজা মন্ডপের সভাপতি/সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপজেলার ৪৭ জন পুরোহীত এর মাঝে নগদ অর্থ ও উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন প্রধান অতিথি। এর আগে প্রধান অতিথি মঙ্গলপুর ইউপি’র বেলখুড়িয়া শিব মন্দির ও শ্মশ্মান এর উন্নয়ন কাজ এবং বিরল রেল স্টেশন দূর্গা পূজা মন্ডপের উন্নয়ন কাজের শুভ উদ্বোধন করেন।