সিরাজদিখানে আলুচাষীদের বিরুপ প্রতিক্রিয়া। বিগত দিনে তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। অনেকে দেউলিয়া, ঋণের দায়ে অনেকে এলাকা ছাড়া। অনেক কৃষক ঋণগ্রস্ত। দীর্ঘদিনে তারা লাভের মুখ দেখে নাই। ভিটে মাটি বিক্রি করে আলুচাষ করেছে অনেকে। কৃষিমন্ত্রী ও ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রতি পুনঃবিবেচনার কথা কৃষকদের পক্ষ থেকে উঠে এসেছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের কারণে যদি কৃষকরা বিপাকে পরে তবে আগামীতে আলু চাষে আগ্রহ হারাবে বলে অনেক কৃষকের দাবী। বিএডিসি আলু সরকার উৎপাদন করে সেখানে প্রতি কেজি কত খরচ পরে, ভর্তুকি কেন দেয় সরকার, এমন প্রশ্ন আরো অনেক কৃষকের।
সিরাজদিখানের বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে আরো অনেক তথ্য উঠে আসে।
বালুচর ইউনিয়নের বাসিন্দা আলুচাষী মাসুদ রানা জানান, বিগত দিনে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হইছি, চালানের অর্ধেকও পাই নাই। অনেকে দেউলিয়া হইছে, ঋণের দায়ে অনেকে এলাকা থেকে পালাইছে। অনেকে মনে করে স্টোরে যে আলু আছে এগুলো সিন্ডিকেটের হাতে আসলে এ তথ্য সঠিক না, সমস্ত আলু কৃষকের। এখানে কিছু বীজ আলু ও কিছু খাওয়ার আলু আছে। মন্ত্রণালয়ের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এখন যদি কৃষকরা বিপাকে পরে তবে আগামীতে আলু চাষে কৃষকের অনিহা আসবে। আগ্রহ হারায় ফেললে ভবিষ্যতে দেশে আলুতে আরো ক্ষতি হবে। বিগত দিনে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আলু চাষে মুখ ফিরায় নিছে। সরকার বা প্রশাসন কোন টেক কেয়ার করে নাই, কৃষি মন্ত্রণালয় কোন খোঁজ খবর নেয় নাই। আলুতে ঋণের দায়ে আত্মহত্যা করেছে এমন প্রমাণ আছে। আমরা অল্প কিছু কৃষক কোন ভাবে এখনো টিকে আছি। এ বছর যদি আমরা দাম না পাইতাম তাহলে আমরাও ফেরত যাইতাম। একটা কৃষক কত বছর লোকসান দিতে পারে। আলু ফসল শতভাগ ঝুঁকিতে চাষ। এ বছর ৪০ টাকা বা ৫০ টাকা খুচরা বাজারে বিক্রি হলে আহামরি কিছু না। একবার ২০০৮ বা ৯ এ ৩০/৩৫ টাকা হইছিল। এখন তো চাষে খরচ বেশি, সব কিছুর দাম বেশি, স্টোর ভাড়া বেশি। বিএডিসি আলু সরকার উৎপাদন করে সেখানে পার কেজি খরচ কত? ভর্তুকি কেন দেয়, সেখানে সরকার এটা বিবেচনা করুক। বিগত দিনে আলু খায় নায় আমরা আলু খালে নদীতে ফালায় দিছি। এখন মানুষের চাহিদা আছে, তারা কিনে খায় তাই দাম বাড়ছে। এখন শেষ সময় আলুর দাম এমনিতেই কয়দিন পর কমে যাবে।
অনেকে আলুচাষী মো. কোরবান আলী মৃধা সদস্য মালখানগর ইউনিয়ন পরিষদ তিনি জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্ররি শ্লোগান কৃষক বাচবো তো দেশ বাচবো। তিনি বলেছেন এ দেশের এক ইঞ্চি জায়গা যেন খালী না থাকে। আমরা প্রত্যেকটা কৃষক ঋণগ্রস্ত। অনেক কৃষক দেনার দায়ে পালিয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ তেমন একটা লাভের মুখ দেখছি না। আমার ভিটে মাটি বিক্রি করে আলুচাষ করে আসছি ১২ বছর ধরে। দীর্ঘদিন ধরে বর্ষা, করোনা দুর্যোগ তাই আলু বাজার ভালো হয়েছে। আমরা ব্যাংক ঋণ, এনজিও ঋণ, ধারকর্য কইরা এবং স্ত্রীর স্বর্ণ বন্ধক রাইখ আলু খেতি করি। এবছর শেষ দিকে দুইটা পয়সার মুখ আমরা কৃষকরা দেখতে ছিলাম, বিগত দিনের কিছুটা ক্ষতি পুশিয়ে উঠতে ছিলাম, কিন্তু মূল্য এতো নামিয়ে দেওয়ায় আমাদের মাথায় হাত। আমরা কিছু আলু ষ্টোরে রাখছিলাম বিক্রি কইরা সামনে আলু সিজেন কিছু আলু লাগাইতাম। আমি গতবছর ৪ শতাংশ জায়গা বিক্রি করে আলুচাষ করেছি। গত দুই বছর আগে আমার ৩ হাজার বস্তা আলু পোকায় নস্ট করেছে পচেঁগেছে। আমি কারো কোনো সহযোগিতা পাই নাই। আমরা কৃষিমন্ত্রী ও ভোক্তা অধিদপ্তরের নিকট আকুল আবেদন করছি দামটা পুনঃবিবেচনা করে কৃষকদের বাঁচান।
আলুচাষী মো. বাচ্চু দেওয়ান সদস্য বয়রাগাদী ইউনিয়ন পরিষদ তিনি জানান, কৃষকের উপর এমন চাপ সঠিক না। আমরা কি আলু সস্তায় হওয়াইতে পারছি যে সস্তায় খাওয়াইবো। হাজার হাজার কৃষক আলুতে ক্ষতিগ্রস্ত আছে। বিগত দিনে আমরা যে লস খাইছি তখন সরকার ভর্তুকি দেয় নাই কেন। এখন কেন রেট দেয়। আমি আলুতে দীর্ঘদিনে লক্ষ লক্ষ টাকা মাইর খাইছি। আমি এবার ১৪ গন্ডা জমি বেইচ্চা আলু চাষ করছি। আমরা এবার আলু দাম বৃদ্ধি হওয়ায় পিছনের ক্ষতি পোশাইতাম। সরকার রেট দিলো এই কাচামালে তো রেট চলে না। ভারতে কাচা মালের রেট দিছিলো আইন সুদ্ধা উঠায় ফালাইছে। ভারতে ৭০ টাকা কেজি আলু নেপালে ১০০ টাকা কেজি আলু।
ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আলুচাষী ভবন দাস জানান, আমরা নিঃস্ব হয়েছি পর পর কয়েক বছর্ েতারপরও এই পেশা ছাড়ি নাই, ভিটা মাটি বেইচ্চা, ঋণ কইরা প্রতি বছর আলু চাষ করছি। এবার দুইটা পয়সার মুখ দেখতাম সেইখানেও বাধা। ব্যাংকের ঋণতো আমাদের মওকুফ হয না। ঋণের মামলা যাদের মাধায় তারা তারা আরো প্রায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা বেশি গুনতে হয।
তালতলা বাজারে আড়ৎদার কৃষক ইয়ার আলী ইমতিয়াজ জানান, সব্জী স্কংট এক শ টাকার মধ্যে বেশির ভাগ সব্জী। ৭০ টাকার নিচে কোন সব্জী কেনা যায় না। তাই আলুর দাম কিছুটা বেড়েছে। আমরা শেষ সময়ে কিছুটা লাভের মুখ দেখছিলাম কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের কারণে আমরা কৃষকরা হতাশ।