হিন্দু ধর্মাবল্বীদের প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজার সূচনা হয় রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর নামক স্থানে বলে এলাকাবাসীদের দারি। এই শারদীয় দুর্গাপুজাকে কেন্দ্র করে কোটি কোটি হিন্দু ধর্মাবল্বী লোকজনরা প্রতি বর্ষর এই শারদীয় দুর্গোৎসব ধুমধামের সঙ্গে সুপ্রাচীন কাল থেকে পালন করে আসছে। গৌড় রাজ্যের শাসক হুসেন শাহের শাসনকালে নবদ্বীপে ভগবান চৈতন্যে আবির্ভাব (১৪৮৫-১৫৩৩) ঘটে তার কিছু পরে পঞ্চাদশ (১৪৮০) শতকে উত্তরবঙ্গের বর্তমান রাজশাহী জেলার তাহেরপুর নামক ছোট একটি রাজ্যের রাজা ছিলেন রাজা কংশনারায়ন রায়। কংশনারায়ন ছিলেন জমিদার কামদেব ভট্রের উত্তর শুরি জমিদার হরি নারায়ন ওরফে কুল্বব ভট্রর পুত্র। রাজ কংশনারায়নের উচ্চাশা ছিল তার মহিমাকে সর্বজন সম্মুখে প্রকাশ করা। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন ছিল রাজসূয়’’যজ্ঞ’’অথরা’’অশ্বমেধ যজ্ঞের’’। কিন্তু ক্ষুদ্র রাজ্যের অধিপতি এবং গৌরের অধিন রাজা কংশনারায়নের শ্রেষ্ঠ রাজা হবার বিত্ত-বৈভব ছিল না। অপর দিকে অশ্বেমেধ যজ্ঞের ঘোড়াটিকে অন্য সকল রাজ্যের ওপর দিয়ে ছুটিয়ে দিয়ে ঘোড়াটিকে কোনো রাজা যদি আটক করে তবে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ঘোড়াটিকে মুক্ত করে শ্রেষ্ঠ রাজা বা প্রভাবশালী রাজা হবার মত যথেষ্ট সামরিক শক্তিও তার তখন ছিল না। কিন্তু রাজা কংশনারায়ন তার পরেও তার উচ্চাশা থেকে সরে যাননি। রাজার সভাসদরা রাজাকে রাজসূয় যজ্ঞ বা অশ্বমেধ যজ্ঞের তুলনায় শক্তি রুপা দুর্গতি নাশীনি দেবী দুর্গাপুজা করার বিকল্প প্রস্তাব দেন। উল্লেখ্য যে স্বয়ং শ্রী রামকৃষ্ণ অশুররুপি রাবনকে বধ করার জন্য অকালে শরৎকালে দেবি দুর্গার পুজা করেন। রাজা কংশনারায়ন দুর্গাপুজা করতে সম্মত হন এবং সেই সময় প্রায় ৯ লাখ টাকা ব্যয় করেন। এই বঙ্গে এক নতুন কীর্তি স্থাপনের মধ্যে দিয়ে তৎকালীন রাজা জমিদারদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠতম স্থান দখল করেন। সেই থেকে প্রচলন হয় সার্বজনিন শারদীয় দুর্গোৎসবের, যা আজ হিন্দুদের শ্রেষ্ঠ জীবনোৎসব পরিণত হয়েছে।
কেন দুর্গাপুজা করা হয়ঃ দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করে দেবতা ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপন করেন এবং শরনাগত ভক্তকে সিদ্ধি, বল, বিদ্যা ও সমৃদ্ধি দান করেন। সেই কারণে দেবীর সঙ্গে সিদ্ধি, বর বিদ্যা ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসাবে, কার্ত্তিক, সরস্বতী, ও লক্ষীকে দেখতে পাওয়া যায়। আবার বলা হয়, প্রতিনিয়ত মানুষ নিজের অন্তরেই অশুভ শক্তি, তথা অসুরের সঙ্গে লড়াই করে চলেছে। মা দুর্গা হচ্ছেন শুভ শক্তির প্রতীক। তাই মা দুর্গার হাতে অসুর বিনাশের অর্থ মানুষের অন্তর থেকে লোভ, কাম, হিংসা ইত্যাদি অশুভ শক্তির বিনাশ। তারই পরিণামে মানুষ শুভ শক্তির প্রতীক হিসাবে সিদ্ধি, বল বিদ্যা ও সমৃদ্ধির আরাধনা করেন। তাহেরপুরের দুর্গাপুজার ইতিহাস রচিতা অধ্যাপক সত্যজিৎ রায় তোতা বলেন, পাঠান শাসকদের জাগিরদার ছিলেন তাহেরখাঁ। তাকে পরাজিত করে রাজা কংশনারায়ন তাঁর রাজ্যে ভোগ দখল শুরু করেন। পরবর্তী সময় তার মসনত রক্ষার্থে পুরোহিত রমেশ শাস্ত্রির বুদ্ধিমতে রাজা কংশনারায়ন আধিপত্য বিস্তারের জন্য বিকল্প চিন্তা ভাবনা মাথায় নিয়ে দুর্গাপুজা শুরু করেন। পাঠান জাগীরদার তাহের খাঁন নাম অনুসারে তাহেরপুর নাম করণ করা হয়। তাহেরপুরের পূর্বে নাম ছিল সাপরুল। তাহের খাঁন এলাকায় প্রকাশ্যে প্রজাদের অত্যাচার করতেন। রাজা কংশনারায়ন রায় তাহের খাঁনকে পরাজিত করেন। নিজের শক্তিও মহিমাকে সর্বজনের নিকট প্রকাশ করার জন্য অশ্বমেঘ যজ্ঞ করার মনস্থ করেন। কিন্তু পুরোহিত রমেশ শাস্ত্রি কলিকালে অশ্বমেঘ যজ্ঞ করা নিষিদ্ধ আছে। তাঁর পরামর্শে রামচন্দ্রকে অশুভকরণ করে সমগ্র ভারত বর্ষে ১৪৮০ খ্রীষ্ঠব্দে আশ্বিন মাসে জাঁকজমক ভাবে দুর্গাপুজার সর্ব প্রথম প্রচলন করেণ রাজা কংশনারায়ন রায়। তাই তাহেরপুরকে দুর্গাপুজার আবিভাবের স্থল বলা হয়ে থাকে বলে ভারতের বিভিন্ন টিভি চ্যাঞ্ছেলগুলো প্রচার করতে দেখা গেছে।