রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের হাড়িপাড়া বিলে মাছ শিকারে জেলেদের বাধা প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিলটি দখল করার জন্য জেলেদের বাধা দিচ্ছে বলে বলে জানা গেছে। জেলেদের মাছ ধরতে বাধা দেওয়া ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের হুমকী প্রদানের কারণে নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছেন জেলেরা। তাঁরা প্রতিকার ও বিলটি উম্মুক্ত করার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক, মৎস্য কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। স্থানীয় প্রেসক্লাবে এসেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
জেলেদের লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আউচপাড়া ইউনিয়নের কম্পোনদী সংলগ্ন হাড়িপাড়া বিলে দীর্ঘদিন ধরে অভ্যাগতপাড়া, শিহালী, আউচপাড়া, কানাইশহর, হাটগাঙ্গোপাড়া, মজোপাড়া ও হাটখুজিপুর গ্রামের তিনশতাধিক জেলেরা বর্ষাকালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বিলে থাকা বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক মাছ ধরে তা বাজারে বিক্রি করে থাকেন জেলেরা।
তবে চলতি বছর স্থানীয় কানাইশহর গ্রামের প্রভাবশালী আবদুস সাত্তার, বাবু, শাফাউর রহমান, শফি, মাসুদ হোসেন, স্বপনসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি বিলের মাঝখানে বাঁশের চাটাই ও বানা দিয়ে বিলটি নিয়ন্ত্রণে নেন। দখলকারীরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হিসাবে পরিচিত। বিলটি দখলে নেওয়ার পর থেকে তারা বিলে মাছ ধরতে জেলেদের বাধা প্রদানসহ তাঁদের মাছ ধরার উপকরণ কেড়ে নিয়ে যান বিলের দখলদারেরা।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর সশস্ত্র অবস্থায় দখলদারেরা বিল থেকে জেলেদের মারপিট করে বিল থেকে জাল, দড়িসহ মাছ ধরার সব ধরণের উপকরণ কেড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে জেলেরা সেখানে মছ ধরতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন।
গতকাল রোববার সকালে ২০-৩০জন জেলে স্থানীয় প্রেসক্লাবে এসে অভিযোগ করে বলেন, বিলে মাছ ধরতে না পেরে তাঁরা কষ্টে আছেন। প্রতি বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরলেও এবার পারছেন না। বিল দখলকারীরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তাঁরা প্রতিবাদও করতে পারছেন না। নিরুপায়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া ছাড়াও সাংবাদিকদের কাছে এসেছেন বলে জানিয়েছেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে বিলের কিছু অংশে বাঁশের চাটাই দিয়ে দখল করে নেওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। দখল করা অংশে মাছচাষ করছেন ওইসব দখলদারেরা।
মৎস্যজীবী আবু বাক্কার বেলাল হোসেন, বেলাল হোসেন, গোলাম মোস্তফা, আবদুল গাফ্ফার ক্ষোভে প্রকাশ করে বলেন, তাঁরা কার্ডধারী মৎস্যজীবী। বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরে কিছু টাকা জমিয়ে রাখেন এবং ঋণ শোধ করেন, তবে এবার পারছেন না প্রভাবশালীদের কারণে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মুনসুর রহমান বলেন, বিলটির কিছু অংশ প্রভাবশালীরা দখল করে মাছ চাষ করার জন্য সাধারণ জেলেরা মাছ ধরতে পারছেন না। এবার জেলেদের পেটে লাথি মারা হয়েছে। তিনিও বিলটি দখলমুক্ত করে তা উম্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।
এই বিষয়ে অভিযুক্তদের পক্ষে বাবু হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মৎস্যজীবীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি এর সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন। তবে অভিযুক্ত অন্যান্যের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, মৎস্যজীবীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রভাবশালীদের বিল দখল করার সত্যতা পাওয়া গেছে। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে তাঁদের (দখলদারদের) উচ্ছেদ করা হবে।