কয়েক দফা ভাঙ্গন ও বন্যার ধকল সামলাতে না সামলাতেই কুড়িগ্রামের রাজারহাটে তিস্তা নদীতে আবারো ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। কয়েকদিনের তীব্র ভাঙ্গনে উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অর্ধশতাধিক বাস্তুভিটাসহ শতশত একর ফসলি জমি। এ ছাড়া হুমকিতে রয়েছে বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। নদীর তীরবর্তী মানুষজন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। ভূক্তভোগীরা ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
২৭অক্টোবর মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রামহরি, পাড়ামৌলা, কালির মেলা, চতুরা, গাবুর হেলান, রতি, তৈয়বখাঁ, বিদানন্দসহ ৮টি গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক শতাধিক পরিবারের বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
এছাড়া প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি, গাছপালা ও ফসলি জমি। অব্যাহত ভাঙনে হুমকির সম্মুখিন রয়েছে রামহরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তৈয়বখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামে মসজিদ, মন্দির, কালির মেলা থেকে বিজলি বাজার পাকা রাস্তাসহ বসতবাড়ি।
ভাঙন তীব্র আকার ধারন করায় আতঙ্কে অনেক মানুষ চৌদ্দ পুরুষের বাস্তুভিটা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্যত্র। শুধু রামহরি গ্রামেই নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছে ২০টি পরিবার। ওই গ্রামের ওহাব আলীর বাড়ি ঘরসহ তাদের আধাপাকা বাড়িটি নদী গর্ভে চলে যাওয়ার পর সর্বশান্ত হয়ে তারা স্বপরিবারে কাজের সন্ধানে পাড়ি জমিয়েছেন ঢাকা শহরে। প্রতি বছর বন্যার পানি কমতে শুরু করলেই প্রকট আকার ধারন করে তিস্তা। শুরু করে ভাঙন। রামহরি গ্রামের আবদুল কাদের (৬৫) কথা হলে বলেন, আমার বয়সে তের বার নদী ভাঙছে, এখন বাড়ি করার মতন জায়গা নাই। অন্যের জায়গায় একনা ঠাঁই নিয়া আছি। একই গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন বলেন, চ্যাংরা বয়স থাকি নদী ভাঙন দেখি আসছি, ভাঙতে ভাঙতে মোর সব শ্যাষ হয়া গ্যালো। এল্যা টাকাও নাই, বাড়ি করার জায়গাও নাই। তৈয়বখাঁ গ্রামের বিমল চন্দ্র বলেন, নদীর ওপরা ৩ টা ঘর নিয়া আছনো, তাও নদীত গ্যাইছে। বেটা-বেটি বিয়ার লাইক হইছে, বাড়িঘর নাই বিয়া দিবার পাং না।
ওই গ্রামের আবদুল গণি (৬২), হক্কানি (৫৫), আবদুল ওয়াহাব সহ স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আমরা কোন ত্রাণ চাই না বাহে, সরকার যেন নদী ভাঙন রক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা করেন।
উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম জানান, এক যুগে নদী ভাঙনে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের মানচিত্র বদলে গেছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে একসময় বিদ্যানন্দ ইউনিয়নকে হয়তো খুঁজে পাওয় যাবে না।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান বলেন, বর্তমান সরকার তিস্তা নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহন করছে। বাজেট পাস হলেই কার্যক্রম শুরু হবে।