সমীক্ষা ও করোনা মহামারীতে রাজধানীর আউটার ও ইনার রিং রোড নির্মাণ প্রকল্পের কাজে স্থবিরতা বিরাজ করছে। মূলত রাজধানীর যানজট কমাতে এড়াতেই এ প্রকল্প নেয়া হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ওসব সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনাও (ডিপিপি) তৈরি করতে পারেনি। মেলেনি ওসব প্রকল্পে বিদেশি অর্থায়নের আশ্বাসও। এমনকি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো সড়ক নির্মাণ কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে তাও সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না। বরং সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা- পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকার উপর দিয়ে যাতায়াতকারী গাড়ির সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে এবং রাজধানীতে আরো ভয়াবহ যানজট তৈরি হবে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি) আউটার ও ইনার রিং রোড নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছিল। বিগত ২০০৫ সালে এসটিপি এবং ২০১৫ সালে সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুমোদন পায়। কিন্তু এতো বছরেও কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ), সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে এমন পরিস্থিতিতে সওজ নিজস্ব অর্থায়নে কিছু অংশে বিক্ষিপ্তভাবে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও আউটার ও ইনার রিং রোড নির্মাণে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছে সওজ। কিন্তু করোনা সংক্রমণ শুরুর পর দুটি রিং রোডের কার্যক্রমে সংস্থাটির এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দেয়। পাশাপাশি বিদেশি অর্থায়নেও বিলম্ব হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নিজস্ব অর্থায়নে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, আরএসটিপি অনুযায়ী ঢাকার ইনার রিং রোড রাজধানীর আবদুল্লাহপুর থেকে শুরু হবে। সেটি ধউর, বিরুলিয়া, গাবতলী, বাবুবাজার, কদমতলী, পোস্তগোলা, চাষাঢ়া, হাজীগঞ্জ, ডেমরা ঘুরে তেরোমুখ হয়ে আবার আবদুল্লাহপুরে যুক্ত হবে। ৮৮ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ইস্টার্ন বাইপাস (পূর্বাংশ) ও ওয়েস্টার্ন এরিয়া (পশ্চিমাংশ)- এ দুই ভাগে বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। পূর্বাংশে ডেমরা থেকে পূর্বাচল সড়ক ও তেরোমুখ হয়ে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণে পাউবোকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাঁধটির উপর সড়ক নির্মাণ করবে সওজ। তবে এখনো পাউবো তাদের অংশের কাজ শুরুই করেনি। অপরদিকে ইনার রিং রোডের পশ্চিমাংশে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ১২ হাজার কোটি টাকার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়। রুটটি হলো আবদুল্লাহপুর, ধউর, বিরুলিয়া, গাবতলী, বাবুবাজার, কদমতলী, তেঘরিয়া, ফতুল্লা, চাষাঢ়া, হাজীগঞ্জ, শিমরাইল হয়ে ডেমরা পর্যন্ত। সড়কটি নির্মাণে সওজ প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনা (পিডিপিপি) জমা দিয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে প্রকল্পে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) অর্থায়ন ঝুলে রয়েছে। তবে এ অবস্থায়ও ইনার রিং রোডের কয়েকটি অংশে অগ্রাধিকারভিত্তিতে বিক্ষিপ্তভাবে সড়ক নির্মাণ করছে সওজ। তাছাড়া আবদুল্লাহপুর থেকে ধউর পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আওতায় নির্মাণ করা হবে। কিন্তু অর্থায়ন না হওয়ায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হয়নি। ফলে ৪ কিলোমিটার অংশ ঝুলে রয়েছে। আর ধউর থেকে গাবতলী পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার চার লেনের সড়ক নির্মাণে ডিপিপি তৈরি করছে সওজ। তাতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হচ্ছে। অপরদিকে পোস্তগোলা থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে আরেকটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। চাষাঢ়া থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত আট কিলোমিটার চার লেন সড়ক রয়েছে। সেটিকে ছয় লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, আউটার রিং রোড নির্মাণেও অগ্রগতি নেই। রুটটি হলো হেমায়েতপুর-কালাকান্দি-তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু-মদনপুর-ভুলতা (ঢাকা বাইপাস হয়ে)-কড্ডা (গাজীপুর)-বাইপাইল (ঢাকা ইপিজেড)-হেমায়েতপুর। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। তার মধ্যে প্রায় ৪৬ কিলোমিটার সড়ক নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। অবশিষ্ট ৮৪ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন করতে হবে। আউটার রিং রোডটিও দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। উত্তরাংশ সমীক্ষা করছে ডিটিসিএ। সম্প্রতি ১৬ কোটি ৩ লাখ টাকার একটি সমীক্ষা প্রকল্প পাস হয়েছে কিন্তু এখনো কাজ শুরু হয়নি। আর দক্ষিণাংশ বাস্তবায়ন করছে সওজ। এ অংশের আওতায় ঢাকা-আরিচা সড়কের সঙ্গে ঢাকা-মাওয়া সড়কের সংযোগ ঘটাতে ১৮ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ করতে হবে। অপরদিকে আবদুল্লাহপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত কোনো রাস্তা নেই। জাপানের অর্থায়নে সড়ক দুটি নির্মাণের কথা থাকলেও বাস্তব কোনো অগ্রগতি নেই। এখন অর্থায়ন নিশ্চিত করার পরই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করা হবে। তবে আউটার রিং রোডের আওতায় তৃতীয় শীতলক্ষ্যা থেকে মদনপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সরু রাস্তা আট লেনে রূপান্তর করতে একটি প্রকল্প তৈরি করছে সওজ। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, প্রকল্পটিতে ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে।
এদিকে আউটার ও ইনার রিং রোড নির্মাণ কাজে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান জানান, ওসব সড়ক নির্মাণের কাজ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। ডিটিসিএ ওসব কাজের সমন্বয় করছে। তবে একেবারে কোনো কাজ হয়নি তা বলা যাবে না। কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। বৈশ্বিক ও বাস্তবিক অবস্থা বিবেচনা রেখেই সবকিছু এগোচ্ছে।