রাজশাহী পুঠিয়ায় বানেশ্বর হাটে গত শুত্রুবার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দীর্ঘদিনের ঢলন প্রথা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু হাটে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে আসা কেতাবিকেতারা ঢলন প্রথা ছাড়া কৃষিপণ্য কেনাবেচা করতে পারচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহী জেলার বৃহত্তম হাট বানেশ্বর। সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার দুই দিন হাটবার হয়ে থাকেন। এই হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে আম, আলু, পেঁয়াজ, ভুট্টা, ডালসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য আড়ৎতে পাইকাররা কিনতে আসেন। দীর্ঘদিন ধরে এসব আড়তে চাষিরা তাদের আম বিক্রি করতে গেলে এক মণ আমের ওজন ধরা হতো ৪৬ কেজি করে। আর অন্যান্য কৃষিপণ্যের মণ হতো ৪২ কেজি করে। ৪০ কেজির বেশি পণ্যকে ধরা হতো ‘ঢলন’ হিসেবে। আড়ৎদারেরা চাষিদের বুঝিয়ে বলতেন, কৃষিপণ্য ওজন আস্তে আস্তে পরে কমে যায়। সে কারণে ঢলন দিতে হবে। এভাবে বানেশ্বর হাটসহ উপজেলার হাটগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে এই ঢলন প্রথা হয়ে আসছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন এলাকার কৃষিপণ্য উৎপাদনকারিরা। সেই ঢলন প্রথা বাতিল করার জন্য গত শুক্রবার বানেশ্বর বাজার বণিক সমিতির কার্যালয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী, চাষি, জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এক মতবিনিময় সভায় সিদ্ধান্ত হয়। এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম হিরা বাচ্চু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুমানা আফরোজ ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সামশুন নাহার ভুঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। এরপর গত শনিবার হাটের দিন প্রশাসনের তৎপরতায় ৪০ কেজিতে সব কৃষিপণ্য কেনাবেচা হয়ে ছিল। মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ভালুকগাছি ইউনিয়নের এক গ্রাম হতে আসা কছিমুদ্দিন নামের পেঁয়াজ বিকেতা বলেন, সূর্য উঠার আগ হতে পেঁয়াজ বিক্রি করার জন্য হাটে এসে বসে আছি। আড়ৎদারা পেঁয়াজ কিনছে না। কারণ তাদের ঢলন দেয়া হচ্ছে না বলে পেঁয়াজ কেনা বন্ধ করে রেখেছেন। আমি শুনেছি সরকারিভাবে ঢলন দেয়া বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু বিক্রি করতে এসে দেখছি। ঢলন ছাড়া আড়ৎদারা পেঁয়াজ কিনতে চাচ্ছে না। সকাল ৯টা পর্যন্ত বানেশ্বর হাটে পেঁয়াজ কেনাবেচা বন্ধ ছিল। পরে সকাল ৮টার দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ এসে বানেশ্বর হাটের পেঁয়াজ আড়ৎদারদে সঙ্গে এক বৈঠকে বসেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ৪০ কেজি করে আড়ৎদারা পেঁয়াজ কিনবে। তবে কষকদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার করে ৪১ কেজির দাম দিতে পারবেন। নাম প্রকাশে অচ্ছিুক একাধিক আড়ৎদারা বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাঁচা মাল পরিবহনের মাধ্যমে পাঠাতে হয়। মাল উঠানামা এবং খুচরা বিক্রি করতে গেলে কাঁচামাল অনেক সময় কমে যায়। ঢলন প্রথা সারা দেশের হাটেগুলোতে প্রচলন হয়ে আসছে। শুধু ঢলন না দেয়ার কথা শুনে। ঢাকার অনেক ব্যবসায়ীরা আজ আমাদের হাটে পেঁয়াজ কিনতে আসেননি। ঢলন প্রথা বাতিল হলে, কোনো পাইকাররা এই হাটে পন্য কিনতে আসবে না। মাঝখান হতে এলাকার পন্য উৎপাদনকারি কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হবে। হুট করে উপজেলা প্রশাসন ঢলন প্রথা বাতিল করে কেতাবিকেতাদের ভেতর ঝামেলার সৃষ্টি করে দিয়েছেন। ঢলন প্রথা আস্তে আস্তে মানুষের ভেতর সচেতনা গড়ে তুলার পর বাতিল করা উচিত ছিল।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ এফএনএসকে বলেন, বানেশ্বর বাজারে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের অনুরোধে আজ তাৎক্ষনিক আলোচনায় বসে ছিলাম। আলোচলানা কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয় পক্ষ ছিল। এখানে সিদ্ধান্ত হয়, কোনো ঢলন প্রথা থাকবে না। পন্যদ্রব্য ডিজিটাল স্কেলে পরিমাপ করতে হবে। ৪২ কেজিতে মণ নয়। পণ্যে দাম কেতাবিকেতা দর কষাকষির মাধ্যমে ঠিক করতে হবে।