রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা ও আশপাশ এলাকায় মওসুমের শেষে গো খাদ্যের চরম সংকট মোকাবেলায় কলাগাছ আর কচুরিপানার চাহিদা বেড়েছে। অনেকের পক্ষে তাও যোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। গোটা দেশেই গবাদী পশুর প্রধান খাদ্য খড়। যা আসে কৃষকের উৎপাদিত ফসল ধান থেকে। খাদ্য সংকট মোকাবেলায় প্রতি বছর দেশের মোট আবাদি জমির প্রায় ৭৬ ভাগ জমিতেই ধান চাষ হয়ে থাকে। চাষকৃত ধান কাটা-মাড়াই এরপর ধান গাছগুলো শুকিয়ে স্তুপ করে খড় হিসেবে গবাদী পশুর খাদ্য মজুদ করে রাখেন কৃষকরা। যাতে গবাদী পশুর খাবারে কোন ঘাটতি না হয়। প্রতিবছরই ভাদ্র থেকে আশ্বিন- কর্তিক মাসে গবাদী পশুর এই প্রধান খাদ্য খড়ের তীব্র সংকট দেখা দেয়। এবারে ঘন বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে অকাল বন্যার কারণে খড়ের সংকট তীব্র হওয়ায় তা মোকাবেলায় কৃষকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। কৃষকরা অনেকেই খড় না পেয়ে খালবিল নদীনালা থেকে কচুরিপানা এবং বাড়ির আশপাশে থেকে কলার গাছ সংগ্রহ করে গবাদিপশুর খাদ্যের চাহিদা পুরনের চেষ্টা করছে। উপজেলায় আগাম হাইব্রিড ধান বাজারে আসলেও প্রতিটি ধানের আটি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৮ টাকা দরে। যা অনেকের পক্ষে ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতি বছরে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর থেকে রিক্সাভ্যানে বোঝাই করা খড় নিয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা সদরের প্রধান সড়ক হয়ে বিভিন্ন হাট বাজারগুলোতে চড়া দামে সরবরাহ করতো কতিপয় ব্যবসায়ী। এসব ব্যবসায়ী জানায়, যে এলাকা থেকে খড় নিয়ে আসা হতো ওই এ বছর এলাকা গুলোতেই চাহিদা পুরন হচ্ছে না। এজন্য কোথাও খড় না পাওয়ায় তারা ব্যাবসা বন্ধ করে দিয়েছে। পীরগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ তাজুল ইসলাম জানান, উপজেলায় শংকর জাতের গাভীর খামারী রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩’ শ জন। এসব খামারে ২ থেকে ২০ টি পর্যন্ত শংকর জাতের গাভী আছে। খামারীদের ১৩ হাজার ৪’শ ৩৪ টি গাভীসহ উপজেলায় মোট গরুর সংখ্যা প্রায় সোয়া ৩ লাখ। কাশিমপুর গ্রামের খামারী নুরুল ইসলাম, আবদুর হান্নান,সোবহান,এনামুলসহ অনেকের সাথে কথা হলে তারা জানান,এমনিতেই এবারে করোনার ভয়ে গো-খাদ্যের জন্য বোরো ধানের খড় যথা সময়ে মজুদ করা যায়নি। উপরন্ত ঘন-ঘন বর্ষা আর উজানের পানিতে অনেক খড়ের স্তুপ পচে গেছ্।ে এজন্য মুলত খড়ের সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার গুলোতে গুড়া-ভুষির দাম আরও চড়া। এ অবস্থা চলদে থাকলে অনেকের পক্ষেই গরু পালন অসম্ভব হয়ে উঠবে। উল্লেখ্য যে,পীরগঞ্জের খামারীসহ সাধারণ কৃষকরা গরু লালন-পালন করে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন। যে কারণে এখানে খামারীর সংখ্যা পুর্বের তুলানায় বেড়েছে। বর্তমানে খামারীর সংখ্যা ১ হাজার ৩’শ। গরুর সংখ্যাও প্রায় সোয়া ৩ লাখ। খামারীরা নিজেদের গরজেই এবং বানিজ্যিক ভিত্তিতে অনেক জমিতে উন্নত জাতের ঘাষ চাষ হয় প্রতি বছর। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু এ বছর ঘাষের দাম অন্রান্য বছরের তুলানায় প্রায় দিগুন। যা সাধারন কুষকের পক্ষে ক্রয় সম্ভব হচ্ছে না। তাই বিকল্প হিসেবে তারা কলাগাছ ও কচুরিপানার দিকে ঝুঁকেছে।