সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে মাদকবিরোধী অভিযান চালানো সত্ত্বেও প্রতিবেশী দেশ থেকে মরণনেশা ইয়াবার চালান আসা বন্ধ করা যাচ্ছে না। চোরাইপথে দেশে আসা মাদকের মাত্র ১০ শতাংশ উদ্ধার বা আটক হয়। বাকি ৯০ শতাংশই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়া মাদক বা ইয়াবা নানা হাত বদল হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। আর দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক ছড়িয়ে পড়ায় তা বিপুলসংখ্যক মানুষকে আসক্ত করে তুলছে। দেশের ইয়াবার বড় কারবারিরা ইয়াবার মূল্য পরিশোধের স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে দুবাই ও মালয়েশিয়া। সেখানে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করে বড় ডিলাররা ইয়াবার মূল্য শোধ করে। তাছাড়া ওষুধ, স্বর্ণালঙ্কার, বিভিন্ন পণ্যের বিনিময়েও নিয়ে আসা হচ্ছে ওই মাদক। এভাবে দেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকা মিয়ানমারে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খরা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকা মিয়ানমারে পাচার হয়ে যাচ্ছে। মাদককারবারিরা দুবাই ও মালয়েশিয়ায় গিয়ে ইয়াবা কেনার ওই টাকা পাচার করছে। দুবাই ও মালয়েশিয়ায় গিয়ে এবং হুন্ডির মাধ্যমে দু’ভাবেই পাচার করা হচ্ছে টাকা। তাছাড়া ওষুধ, স্বর্ণালঙ্কার, বিভিন্ন পণ্যের বিনিময়েও নিয়ে আসা হচ্ছে ইয়াবা নামের ওই মাদক। আর মিয়ানমারে পাচার করা টাকায় আসা ইয়াবায় সয়লাব হচ্ছে গোটা দেশ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তকারীদের দাবি, দেশে ইয়াবার ব্যাপক চাহিদার কারণেই টাকা পাচার করার মাধ্যমে চালান আনার কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চলতি বছরের গত প্রায় ১০ মাসে ৫০ লাখের বেশি ইয়াবার চালান উদ্ধার করেছে। মিয়ানমার থেকে আসা আটককৃত ওসব ইয়াবার চালানের বাজার মূল্য ২ শতাধিক কোটি টাকা। রোহিঙ্গা গডফাদাররা মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান এনেছে। ইয়াবার চালানের সঙ্গে শতাধিক ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে রোহিঙ্গার সংখ্যাই সর্বাধিক। জিজ্ঞাসাবাদে আটক রোহিঙ্গারা জানায়, আলোচ্য সময়ে প্রায় দশ গুণ ইয়াবা পাচার হয়ে এসেছে। যার বাজার মূল্য ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। সম্প্রতি কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মাঝিরঘাটে ট্রলারে তল্লাশি চালিয়ে ১৩ লাখ পিস ইয়াবাসহ দুজনকে গ্রেফতার করেন র্যাব-১৫ সদস্যরা। দেশজুড়ে ইয়াবা চালান ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছে র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ইউনিট।
সূত্র আরো জানায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সারাদেশে গত এক বছরের ৩ কোটি ৫৩ লাখ ২৫ হাজার ৬১০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এই পরিমাণ মাদক ইয়াবা আটক করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও কোস্টগার্ড। মিয়ানমারে প্রতি পিস ইয়াবার দাম পড়ে গড়ে ৩০ টাকা। ওই হিসাব অনুযায়ী উদ্ধার হওয়া ও উদ্ধারের বাইরে থাকা সব মিলিয়ে ৩০ কোটি ইয়াবার মূল্য বাবদ ৯০০ কোটি টাকার বেশি পাচার হয়েছে। মিয়ানমারে যে ইয়াবার মূল্য ৩০ টাকা, তা-ই এদেশে আসার পর কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে যেই পরিমাণ ইয়াবা দেশে আসছে, তার মূল্য দাঁড়ায় কয়েক হাজার টাকা। ওই পরিমাণ টাকাই দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারে।