রাজধানী ঢাকায় দিন দিন ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে অনেকেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গত অক্টোবর মাসে ১৩৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। মূলত সেপ্টেম্বরেই ডেঙ্গুর মূল মৌসুম শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এবার মৌসুম শেষ হওয়ার পরই বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু রোগী। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ৬ শতাধিক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে সম্প্রতি ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ২৯ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চলতি বছর ডেঙ্গু সন্দেহে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওসব মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনার জন্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। তবে আইইডিসিআর এখন পর্যন্ত দুটি মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনা করে একজনের ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৯৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়, ফেব্রুয়ারিতে ৪৫ জন, মার্চে ২৭ জন, এপ্রিলে ২৫ জন, মে মাসে ১০ জন, জুনে ২০ জন, জুলাইতে ২৩ জন, আগস্টে ৬৮ জন এবং সেপ্টেম্বরে ৪৭ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। গত বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা এর আগের সব বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১৯ সালে সারা দেশে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। তখন সরকারি হিসাবে ১৭৯ জন ডেঙ্গু জ্বরে মারা গিয়েছিল। এ বছর ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব যাচাইয়ে জরিপ পরিচালতি হয়েছে। জরিপে দেখা যায় রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ২৫টি ওয়ার্ড ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে। ‘ডিসেমিনেশন অন মুনসুন এডিস সার্ভে-২০২০’ নামের জরিপের ফলাফলে এ তথ্য উঠে আসে।
সূত্র আরো জানায়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মোট ১০০টি এলাকায় (ডিএনসিসি ৪১টি এবং ডিএসসিসি ৫৯টি) দুই হাজার ৯৯৯টি বাড়িতে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসের ভেক্টরের ওপর জরিপ পরিচালিত হয়। জরিপে দেখা যায়, উত্তর সিটি করপোরেশনের ৯টি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৬টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। ওসব ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার সূচক ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। তবে উত্তরে ১৭ নম্বর এবং দক্ষিণে ৫১ নম্বর ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি হলে তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়।
এদিকে এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম জানান, কয়েক দিনের থেমে থেমে বৃষ্টিতে এডিস মশার লার্ভা বংশবিস্তার ও বৃদ্ধির সুযোগ পেয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার হওয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। এখন দ্রুত মশার বংশবিস্তারের উৎস নির্মূল করলে এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।