পিরোজপুরের কচা নদীর তীরে পাড়েরহাট মৎস্য বন্দর সংলগ্ন নৈশ্বর্গীক শোভামন্ডিত শুঁটকি পল্লী শীত মৌসুমের সময় সাজসাজ রব পড়লেও মৌসুমের শেষভাগে এসে মহামারি নভেল করোনারভাইরাসের থাবায় ব্যাবসার সঙ্গে জড়িত কয়েকশ’ মালিক ও কর্মচারির জীবনযাত্রার পাশাপাশি থমকে গেছে তাদের অর্থনৈতিক চাকা।
বন্দরের স্থানীয় জেলেরা শীত মওসুমে বঙ্গোপসাগর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ আহরণ করে অত্র বন্দরে এনে সম্পূর্ন কীটনাশকমুক্ত প্রক্রিয়াজাত করনের মাধ্যমে শুঁটকি তৈরী করেন পরে ঢাকা, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রেরনের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানী করায় এখানের শূঁটকী অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
কিন্তু দেশজুড়ে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে প্রশাসনের এক এক করে প্রতিটি জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন বলবৎ ঘোষনা থাকায় সময় মত শুঁটকি স্থানীয় বাজারগুলোতে রপ্তানি করতে না পারায় অধিকাংশ শুঁটকিতে পঁচনের পাশাপাশি ব্যাবসায়ীরা পরেছেন চরম লোকশানের মুখে।
পিরোজপুর সদর উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরন কেন্দ্র সংলগ্ন বাদূরা ও চিথলীয়া গ্রামের অন্তত পাঁচটি স্থানে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে স্থানীয় জেলে ব্যবসায়ীরা সাগরের আহৃত সাদা মাছকে কেন্দ্র করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় শুঁটকি করে আসছেন। কচা নদীর উত্তর প্রান্তে উমেদপুরের খাল সংলগ্ন পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে জেগে ওঠা চরেই এই শুঁটকি পল্লী গড়ে উঠেছে। কিন্তু প্রকৃত জেলেরা সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত না পাওয়ায় অন্যের কাছ থেকে চড়া মূল্যে লীজ নিয়ে শুঁটকি ব্যাবসা পরিচালনা করতে নানাভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছেন। এখানের উৎপাদিত শুঁটকি সাধারনত রাসায়নিক ও বিশ মুক্ত হওয়ায় দেশ-বিদেশে এর চাহিদা ও জনপ্রিয়তা প্রতি বছর বেড়ে চলেছে।
কিন্তু বর্তমানে শুঁটকির মৌসুম না হলেও গত বছরের প্রক্রিয়াজাতকৃত কয়েক মন শুঁটকি শেষ মুহূর্তে মহামারি করোনা ও লকডাউনের প্রভাবে পরিবহন বন্ধ থাকায় ঢাকা, চিটাগং ও কক্সবাজারে সেগুলো পাঠাতে না পারায় অধিকাংশ শুঁটকী পল্লীতেই রয়ে যায়। ফলে বেশ কিছু পরিমানের শুঁটকিতে ইতোমধ্যে পচন ধরেছে, আবার কিছু শুঁটকি ভাল থাকায় সেগুলো এখন রপ্তানী করার চিন্তা-ভাবনা করছেন ব্যাবসায়ীরা। এসব শুঁটকির মধ্যে রয়েছে লইটকা, ছুরি, সাগর চিতল, মধু ফাইস্যা, তেলি ফাইস্যা, কাবিলা ও রুপচিতা।
পাড়েরহাটের শুঁটকি ব্যাবসায়ীরা বিটিভিকে জানালেন, করোনার মন্দাভাবের কারণে এবং কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় এখন তারা কর্মচারিদের বেতন এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিসহ অবস্থার কালাতিপাত করছেন।
শুঁটকি ব্যবসায়ীদের মতে, সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগীতা পেলে একদিকে যেমন করোনাকালীন সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে, তেমনি আগামী শীত মৌসুমে নতুন করে এ ব্যাবসা আরও সম্প্রসারিত করে লোকশান কাটিয়ে ওঠার চিন্তা-ভাবনা করা যেতে পারত।
পড়েরহাট মৎস্য বন্দর দক্ষিনাঞ্চলের অন্যতম দ্বিতীয় মৎস্য বন্দর হিসেবে পরিচিত। কচা নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এখানে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ও উন্নতমানের শুঁটকী পল্লী গড়ে উঠলে তবে, বন্দরটিতে একদিকে যেমন সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে, তেমনি মৎস্য অবতরন কেন্দ্রটি আরও সমৃদ্ধ এবং অত্র এলাকার বেকার জনসাধারনের জন্য আয়ের একটি প্রধান ক্ষেত্র হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে বলে মনে করছেন এলাকাবাসি।