কতিপয় টেক্সটাইল মিল মালিক মূলধনী সুবিধায় অটোমেটিক পাওয়ার লুম আমদানি করে জালিয়াতি করে তা খোলা বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে নরসিংদীর এমন ৩৬টি টেক্সটাইল মিল চিহ্নিত করা হয়েছে। গত ৫ বছরে ওসব মিল মালিক শিল্প স্থাপনের অঙ্গীকারনামা দিয়ে ৩০ হাজার ৩৫৩টি লুম আমদানি করলেও মাত্র ৫ হাজার মেশিন নিজেদের কারখানায় স্থাপন করেছে। বাকিগুলো অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। শুল্কমুক্ত সুবিধায় ওসব মেশিন আমদানি করেছিল। তাতে ৩৯ কোটি টাকা ভ্যাট থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। সম্প্রতি ঢাকা পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেট কারখানাগুলোয় আকস্মিক অভিযান চালালে অভিনব এ জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়। এমন পরিস্থিতিতে জালিয়াতিতে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর মেশিন ও শিল্পের কাঁচামাল খালাসে সতর্কতা অবলম্বন করতে চট্টগ্রাম কাস্টমকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেট। চিঠিতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয়েছে। ঢাকা পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেট সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেটের কর্মকর্তারা নরসিংদী বিভাগের ৩৬টি টেক্সটাইল মিলে আকস্মিক অভিযান চালায়। ওসব মিল গত ৫ অর্থবছরে মূলধনী যন্ত্রপাতির প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত ৩০ হাজার ৩৫৩টি অটোমেটিক পাওয়ার লুম মেশিন আমদানি করলেও অধিকাংশই কারখানায় স্থাপন না করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে ভ্যাট পরিশোধের বিধান থাকলেও তা করা হয়নি। প্রাথমিকভাবে ৩৯ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ওসব প্রতিষ্ঠান মেশিনারির আড়ালে অধিক শুল্কের অন্য পণ্যও আমদানি করেছে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতির আওতায় এনবিআর চেয়ারম্যানের নির্দেশনা মোতাবেক আকস্মিক অভিযান অব্যাহত রাখা হবে। অনিয়ম, দুর্নীতি বা ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি করদাতাদের অহেতুক হয়রানিও বরদাশত করা হবে না। শুল্কমুক্তভাবে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করে যেসব টেক্সটাইল মিল খোলাবাজারে বিক্রি করার অনিয়মে জড়িত টেক্সটাইল মিলগুলো হলো- আইদা টেক্সটাইল, খান টেক্সটাইল, আল আমিন টেক্সটাইল, জোহরা টেক্সটাইল, আমিন মীর টেক্সটাইল, আদর টেক্সটাইল, অভি টাই ডাই অ্যান্ড সুইং হাউস, করিম টেক্সটাইল, আর কে টেক্সটাইল, ফাহাদ টেক্সটাইল, আগমনী টেক্সটাইল, সুমন টেক্সটাইল, এসবি টেক্সটাইল, বুনন টেক্সটাইল, মনি টেক্সটাইল, নিঝুম টেক্সটাইল, উমাইজা টেক্সটাইল, মডার্ন টেক্সটাইল, শিল্পী টেক্সটাইল, সুলতানা টেক্সটাইল অ্যান্ড ট্রেডার্স, মুন টেক্স, এমআর টেক্সটাইল, এইচআর টেক্সটাইল, হারুন টেক্সটাইল, মাদার টেক্সটাইল, রংধনু টেক্সটাইল, মদিনা টেক্সটাইল, জারিফ টেক্সটাইল, বারজা টেক্সটাইল, হাজি সাইজিং মিল, হক টেক্সটাইল, মমিন টেক্সটাইল, ইয়ামিন স্পিনিং, ইয়ামিন সাইজিং, স্নেহা মনি টেক্সটাইল ও সরকার টেক্সটাইল।
এদিকে এমন জালিয়াতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন জানান, খোলাবাজারে যন্ত্র বিক্রি ক্ষেত্রে যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে সেগুলো বিটিএমএর সদস্য না। কোনো সদস্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্তসাপেক্ষে সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাস্টমস কর্মকর্তারা ছোট ছোট মিলে গিয়ে তাঁত মেশিন বসানো হয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো- মাধবদী, পাঁচদোনা, বান্টি বাজারে যে বন্ডের চোরাই সুতা বিক্রি হয় সেগুলো ধরা হচ্ছে না কেন? চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি ওসব বাজারে চোরাই সুতা প্রকাশ্যে বিক্রি হলেও কাস্টমস প্রশাসন নিশ্চুপ। এগুলো বন্ধ করতে পারলে দেশ আরো বেশি উপকৃত হবে। অভিযুক্ত টেক্সটাইল মিলগুলো হয়তো ক্ষুদ্র তাঁতিদের কাছে লুম বিক্রি করেছে। তা খুব বেশি দোষের কিছু নয়। কারণ মেশিনের ডিউটি তো ১ শতাংশই আর তা যেই আনুক না কেন। তাছাড়া তারা তো দেশ থেকে টাকা বা সম্পদ পাচার করেনি। সম্পদ তো দেশেই আছে এবং তা দিয়ে দেশের মঙ্গলের জন্যই পণ্য উৎপাদন করছে। সব জায়গায় কাস্টমস-ভ্যাট কর্মকর্তারা দোষ না খুঁজে প্রকৃতভাবে যারা দেশের শত্রু, দেশের শিল্প ধ্বংসের চক্রান্ত করছে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হোক।
অন্যদিকে এ বিষয়ে ঢাকা পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার তাসমিনা হোসেন জানান, করোনা মহামারির মধ্যে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে নতুন নতুন খাতের দিকে নজর দেয়া হচ্ছে। আগে থেকেই যেসব প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের আওতায় আছে সেগুলোর দিকে মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি যেসব টওাতষ্ঠান নানা কায়দায় ভ্যাট দিতো না, তাদেরও ভ্যাটের আওতায় আনা হচ্ছে।