এফ.এন.এস সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর প্রায় দেড় বছর আগে নিখোঁজ হওয়া বৃদ্ধা নূরীকে খুঁজে পেলো স্বজনরা। রোববার রাতে তিনি জামাই ও নাতীর সাথে তাঁর ছোট মেয়ের বাড়ী পৌছেন।
লালপুর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেডে গত ১৮ দিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন অজ্ঞাত পরিচয়ের ৬০ উর্দ্ধ এক বৃদ্ধা। ওঁর নাম নূরজাহান ওরফে নূরী। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ঘটনাটি প্রকাশ হয়। প্রকাশিত এই সংবাদ তার স্বজনদের নজরে আসলে তারা লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উন্মুল বানীন দ্যুতি, লালপুর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ মো সেলিম রেজা ও লালপুর থানা কেন্দ্রীয় প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক এ,কে আজাদ সেন্টু,র সাথে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত হন। এ সময় স¦জনদের মাধ্যমে জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে বৃদ্ধা নূরজাহান ওরফে নূরী নিখোঁজ হন।
রোববার ৮ অক্টোবর বৃদ্ধার ছোট জামাই সিরাজুল ইসলাম বাট্টু ও নাতী রবিউল ইসলাম রবি নাটোরের লালপুর হাসপাতালে পৌছে নুরজাহান ওরফে নূরীর সাথে সাক্ষাত করেন। এ সময় হাসপাতালে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এসময় স্বজনরা জানান, বৃদ্ধার নাম নূরজাহান ওরফে নূরী। স্বামীর নাম আয়েন উদ্দিন ও বাবার নাম আজের উদ্দিন। তার বাবার বাড়ী ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলায় এবং স্বামীর বাড়ী মাগুড়া জেলার মোহাম্মদপুরের ইসলামপুর গ্রামে।
বৃদ্ধার নাতি রবিউল ইসলাম রবি জানান, তার দাদী প্রায় দেড় বছর আগে বাড়ী থেকে বের হয়। তখন তিনি সুস্থ ছিলেন। আমরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পায়নি। মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে আমার দাদী নাটোরের লালপুর হাসপাতালে ভর্তি আছে। এরপর আমরা দাদীকে নিতে আসি।
গত ২১ অক্টোবর লালপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে ছিলেন এই বৃদ্ধা। খবর পেয়ে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উন্মুল বানীন দ্যুতি'র মানবতায় ও নির্দেশনায় তাঁকে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর গত ১৮ দিন ধরে ডাক্তার ও নার্সরা তাঁকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে অনেক টায় সুস্থ করে তোলেন। গোসল সহ তার চাহিদা মতো তাকে দুধ, ফলমূল,মিষ্টি খাওয়ানা করানো হয়। শুধু তাই নয় তার ইচ্ছায় তাকে পায়েস রান্না করে খাওয়ানো হয়। জরাজীর্ণ পোশাক বদলিয়ে নতুন পোশাকও তৈরী করে দেন তারা।
নার্সদের পাশাপাশি বিশেষ করে হাসপাতালের বাবুর্চী আনজেরা খাতুন, আয়া রেখা খাতুন ও পরিচ্ছন্ন কর্মী ফরিদা খাতুন বৃদ্ধা কে খাওয়া দাওয়া করানো, পরিস্কার পরিচ্ছন্নসহ বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
৮ নভেম্বর রোববার বিকেলে বৃদ্ধা নূরজাহান ওরফে নূরীকে তার স্বজনদের কাছে তুলে দেয়া হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উন্মুল বানীন দ্যুতি, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আমিনুল ইসলাম, আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডাঃ আবদুর রাজ্জাক,ডা: মাহমুদুর রহমান সাগর ও হাসপাতালের নার্স বৃন্দ।
এব্যাপারে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, ভর্তির পর থেকে আমরা ওঁর চিকিৎসা সেবা দিয়ে অনেকটাই সুস্থ করে তুলেছি। মিডিয়া কর্মীদের সহযোগিতায় তার স্বজনদের হাত তুলে দিতে পারায় অনেক ভালো লাগছে। তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উন্মুল বানীন দ্যুতি জানান, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে পারি যে উপজেলা পরিষদে এক অসুস্থ রোগী পড়ে আছে। আমরা ওঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। তিনি আরো বলেন, প্রায় দেড় বছর পর স্বজনদের কাছে যেতে পারছে জন্য অনেক ভালো লাগছে। হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স সহ মিডিয়া কর্মীদের আন্তরিক ভূমিকায় তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উন্মুল বানীন দ্যুতি'র সার্বিক সহযোগিতায় বিকেলে বৃদ্ধা নূরী কে এ্যাম্বুলেন্সে করে স্বজনদের কাছে পৌঁছে দিতে ব্যবস্থা করা হয়। বৃদ্ধা নূরজাহান ওরফে নূরী রোববার ৮ নভেম্বর রাত সোয়া ৯টার দিকে মাগুড়া জেলার মোহাম্মদপুর ইসলামপুর তার ছোট মেয়ের নিকট ভাল ভাবে পৌছেছেন। প্রায় দেড় বছর পর মাকে পেয়ে মেয়েসহ স্বজনরা অনেক খুশি হয়েছেন।
দাদীকে পেয়ে বৃদ্ধার নাতী রবিউল ইসলাম রবি- উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ওসি, সাংবাদিকসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ধন্যবাদ জনান।