মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন সহজ হওয়ায় দিন দিন গ্রাহক সংখ্যা বাড়লেও নিবন্ধিত অধিকাংশ হিসাবই নিষ্ক্রিয় রয়েছে। ওসব গ্রাহকরা কোনো ধরনের লেনদেন করছে না। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৪৭ লাখ ৮৭ হাজার। তার মধ্যে সক্রিয় গ্রাহকসংখ্যা মাত্র ৪ কোটি ১০ লাখ ৩৫ হাজার। আর নিষ্ক্রিয় হিসাবের সংখ্যা ৫ কোটি ৩৭ লাখ ৫২ হাজার। বর্তমানে মোট ১৫টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৪৭ লাখ ৮৭ হাজার। যা তার আগের মাস সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ কোটি ২৯ লাখ ৩৭ হাজার। অর্থাৎ এক মাসে গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে ১৮ লাখ ৫০ হাজার। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক সংখ্যা ধারাবাহিক বাড়লেও উল্টো কমেছে সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা। মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো টানা তিন মাস একবারও লেনদেন করেনি এমন হিসাবকে নিষ্ক্রিয় হিসাব বলে গণ্য করে। ওই হিসাবে সেপ্টেম্বর শেষে সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ১০ লাখ ৩৫ হাজার, যা মোট গ্রাহকের ৪৯ শতাংশ। আগস্ট মাসে সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৫ লাখ ৭৩ হাজার।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক বিগত ২০১০ সালে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। আর ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু হয়। তার পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক করোনাভাইরাসের এ দুর্যোগকালীন সময়ে গ্রাহকের কাছে মোবাইলের লেনদেন আরো জনপ্রিয় করতে বিশেষ ছাড় দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমএফএস লেনদেনের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও ওষুধ ক্রয়ের কোন ধরনের চার্জ না কাটার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি (পি-টু-পি) লেনদেনে (যে কোন চ্যানেলে) এ নির্দেশনা মানতে হবে। একইসঙ্গে লেনদেন সীমা ৭৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে। তাছাড়া দৈনিক এক হাজার টাকা ক্যাশ আউট সম্পূর্ণ চার্জবিহীন রাখতে বলা হয়েছে। আগে যেখানে দিনে ২ বারে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা ক্যাশইন করা যেত, এখন তা বাড়িয়ে দিনে ৫ বার সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা ক্যাশইন করা যাবে এবং মাসে ২৫ বারে করতে পারবে ২ লাখ টাকা। আর দিনে ৫ বার সর্বোচ্চ ক্যাশআউট করা যাবে ২৫ হাজার টাকা এবং মাসে ২০ বার দেড় লাখ টাকা ক্যাশআউট করা যাবে। পাশাপাশি একজন গ্রাহক তার ব্যক্তি মোবাইল হিসেবে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা স্থিতি রাখতে পারবেন।
সূত্র আরো জানায়, তাৎক্ষণিকভাবে দ্রুত শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে অর্থ লেনদেনে মোবাইল ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৩৩৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। যা আগের মাস আগস্টের চেয়ে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। একক মাস হিসেবে সেপ্টেম্বরে লেনদেন হয়েছে ৪৯ হাজার ১২১ কোটি টাকা। তার আগে জুলাই মাসে ডিজিটাল এ মাধ্যমে রেকর্ড ৬৩ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিটেন্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেয়া হচ্ছে। সেপ্টেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে টাকা জমা পড়েছে ১৪ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা। আর ওই সময়ে উত্তোলন করেছে ১৩ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। যা আগের মাস আগস্টের চেয়ে টাকা জমা পরিমাণ বেড়েছে ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং উত্তোলন বেড়েছে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। আগস্ট মাসে এমএফএসে রেমিটেন্স সংগ্রহ করেছে ১১০ কোটি ১০ লাখ টাকা। যা আগের মাসের চেয়ে ৫.১ শতাংশ বেশি। আগস্ট মাসে রেমিটেন্স এসেছিল ১০৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ১৪ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ ৮৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে এক হাজার ৯৫৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৯৩৭ কোটি টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা হয়েছে এক হাজার ২৯২ কোটি টাকা। সরকারি পরিশোধ মাসের ব্যবধানে ৭ শতাংশ কমে ১৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য হিসাবে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা।